শিরোনামঃ
সহকর্মীর শ্লীলতাহানীর পরও বহাল তবিয়তে এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ বিটিএ’র পক্ষ থেকে নব নিযুক্ত পরিচালককে অভিনন্দন বিকাশ দেওয়ান ছিলেন একজন সফল এমডি জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু বীচ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বীচ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা সুচনাকে মেয়র হিসেবে গ্রহন করলেন ঢাকাস্থ কুমিল্লা মহানগর নাগরিক ফোরাম কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচের নতুন নাম ‘বঙ্গবন্ধু বিচ’ করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন গ্রীস ফেরত অসুস্থ বেলায়েত হোসেনের পাশে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও ব্র্যাক

নারী ফুটবলের 'লা মেসিয়া' কলসিন্দুর স্কুল

#
news image

কলসিন্দুর থেকে কাঠমান্ডু দশরথ স্টেডিয়ামে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বিজয় কেতন উড়ায় বাংলার অদম্য মেয়েরা। এই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম ও কলসিন্দুর স্কুল। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা নারী ফুটবলাররা তাদের আট সদস্যের বাড়িই ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামে। এই এক স্কুল থেকেই প্রায় ১২-১৩ জন খেলোয়াড় খেলছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে।

সানজিদা-মারিয়া মান্ডাদের হাত ধরেই ২০১১ সালে নতুন এক গল্পের শুরু। এরপর একের পর লেখা হতে থাকে সফলতার গল্প। নারী ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার কারণে কলসিন্দুর গ্রামের নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী অবহেলিত এই গ্রামে বিদ্যুৎ আসে ফুটবল কন্যাদের খ্যাতির কারণে। পাকা হয় রাস্তাঘাট। ফুটবল কন্যাদের বদৌলতে সরকারিকরণ হয়েছে কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেয়েদের সংবর্ধনাসহ আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন।

নেপালের বিপক্ষে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সাফের ফাইনালে মাঠে নামার আগে মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তার ফেসবুক পোস্টে নিজেই জানিয়েছিলেন তাদের সংগ্রামের কথা। তিনি লেখেন, ‘পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।’

এই কিশোরীদের গল্প উচ্চ মাধ্যমিক শাখার একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। 'দ্য আনবিটেন গার্লস' (অপরাজিত মেয়েরা) শিরোনামে পাঠ্যবইয়ে একটি বিশেষ পাঠ রাখা হয়েছে। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোরীদের সফলতার গল্প লেখা হয়েছে এই পাঠে। সানজিদা, মারিয়া, তহুরা, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নাজমা আক্তার, মারজিয়া আক্তারদের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করা সাবিনা খাতুনকে নিয়ে লেখা হয়েছে। এদের মাঝে সানজিদা আক্তার পুরো এশিয়ায় সপ্তম স্থান অধিকার করা, মারিয়া মান্দা অনুর্ধ্ব-১৫ অধিনায়ক এবং তহুরা খাতুন আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় তাদের নিয়ে সচিত্র পাঠ রয়েছে।

২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ঘোষণা হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। খবরটি কানে আসে ময়মনসিংহ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিনের। নিজের স্কুলের জন্য টিম তৈরিতে লেগে পড়েন তিনি। তখন সানজিদা চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী। যোগ দেয় স্কুলের টিমে। এরপর একে একে টিমে নাম লেখায় মারিয়া মান্দা, শিওলি আজিম। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে যোগ দেয় মারজিয়া আক্তার, শামছুননাহার, তহুরা, সাজেদা, শামছুননাহার জুনিয়র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে যাত্রা শুরু করা এই আট খেলোয়ার এখন জাতীয় দলে। 

স্কুলে টিম গঠন হওয়ার পর কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিন নিজেই শুরু করেন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনতী রানী শীল নেন দেখভালের দায়িত্ব। ২০১২ সালে জেলায় শুরু হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। প্রথমবারের মতো অংশ নেয় কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় পর্যায়ে রানাসআপ হয় সানজিদা, মারিয়া, তহুরারা। 

কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিন জানান, শুরুটা ছিলো চ্যালেঞ্জ। গ্রামের অভিভাবকরা রক্ষণশীল। মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেয়ার কথা শুনতেই পারতেন না। অভিভাবকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করার ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর মেয়েদের নিয়ে যখন মাঠে নামেন তখন অনেকেই ঠাট্টা মসকরা করেছে। অনুশীলনের সময় মাঠের আশপাশে থাকতো উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকেই আমাকে বিদ্রুপ করতো। তবে সাহায্য করতেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে। লোকের তীর্যক মন্তব্যের জবাব মাঠে দিতে চেয়েছিলাম তিনি। মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুল ছুটি পর ও বন্ধের দিনে মাঠে অনুশীলন করতে থাকে। একপর্যায়ে আসে সফলতা।

শিক্ষক মফিজউদ্দিনের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ২০১৩ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয় কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন ও ক্রীড়ামোদি ব্যক্তিদের নজরে আস সানজিদা, মারিয়ারা। অল্প করে হলেও মিলতে থাকে সুযোগ-সুবিধা। 

২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার। এমন সফলতা দেখে এগিয়ে আসে অন্য নারী শিক্ষার্থীরা। দিন দিন বাড়তে থাকে কলসিন্দুরের স্কুল টিমের সদস্য সংখ্যা।

কলসিন্দুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনতী রাণী শীল জানান, শুরুতে প্রধান সমস্যা ছিলো 'লজ্জা' এই সমস্যার সমাধানে সময় লেগেছে। কিন্তু আমার পেরেছি লোকলজ্জার ভয় দূর করে খেলার পোশাকে মাঠে মেয়েদের নামাতে। এখন আমাদের গর্ব হয়। আমি একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরেছি। 

কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের কোচ জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা আজ আনন্দে আত্মহারা। এ বড় একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এটা একটা গর্বের বিষয়। আর এই দলের আট সদস্যই আমাদের এই কলসিন্দুরের। আমাদের গড়ে তুলা খেলোয়াড়টা আজ এমন সফলতা অর্জন করছে, এতে এত পরিমাণ আনন্দিত হয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। একদিন মেয়েরা বিশ্বকাপ জয় করবে।

জীবন যুদ্ধের সে সব সংগ্রাম পেছনে ফেলে আজ ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের মেয়েরা। যাদের উঠে আসার পেছনে নেপথ্য কারিগর ময়মনসিংহের কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের মফিজ স্যার, মিনতী রাণী শীল ও জুয়েল মিয়া ।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ অক্টোবর, ২০২২,  12:16 AM

news image

কলসিন্দুর থেকে কাঠমান্ডু দশরথ স্টেডিয়ামে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বিজয় কেতন উড়ায় বাংলার অদম্য মেয়েরা। এই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম ও কলসিন্দুর স্কুল। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা নারী ফুটবলাররা তাদের আট সদস্যের বাড়িই ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামে। এই এক স্কুল থেকেই প্রায় ১২-১৩ জন খেলোয়াড় খেলছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে।

সানজিদা-মারিয়া মান্ডাদের হাত ধরেই ২০১১ সালে নতুন এক গল্পের শুরু। এরপর একের পর লেখা হতে থাকে সফলতার গল্প। নারী ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার কারণে কলসিন্দুর গ্রামের নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী অবহেলিত এই গ্রামে বিদ্যুৎ আসে ফুটবল কন্যাদের খ্যাতির কারণে। পাকা হয় রাস্তাঘাট। ফুটবল কন্যাদের বদৌলতে সরকারিকরণ হয়েছে কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেয়েদের সংবর্ধনাসহ আর্থিক অনুদানও দিয়েছেন।

নেপালের বিপক্ষে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সাফের ফাইনালে মাঠে নামার আগে মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তার ফেসবুক পোস্টে নিজেই জানিয়েছিলেন তাদের সংগ্রামের কথা। তিনি লেখেন, ‘পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।’

এই কিশোরীদের গল্প উচ্চ মাধ্যমিক শাখার একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। 'দ্য আনবিটেন গার্লস' (অপরাজিত মেয়েরা) শিরোনামে পাঠ্যবইয়ে একটি বিশেষ পাঠ রাখা হয়েছে। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোরীদের সফলতার গল্প লেখা হয়েছে এই পাঠে। সানজিদা, মারিয়া, তহুরা, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নাজমা আক্তার, মারজিয়া আক্তারদের জীবনী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করা সাবিনা খাতুনকে নিয়ে লেখা হয়েছে। এদের মাঝে সানজিদা আক্তার পুরো এশিয়ায় সপ্তম স্থান অধিকার করা, মারিয়া মান্দা অনুর্ধ্ব-১৫ অধিনায়ক এবং তহুরা খাতুন আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় তাদের নিয়ে সচিত্র পাঠ রয়েছে।

২০১১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ঘোষণা হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। খবরটি কানে আসে ময়মনসিংহ জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়া কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিনের। নিজের স্কুলের জন্য টিম তৈরিতে লেগে পড়েন তিনি। তখন সানজিদা চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী। যোগ দেয় স্কুলের টিমে। এরপর একে একে টিমে নাম লেখায় মারিয়া মান্দা, শিওলি আজিম। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে যোগ দেয় মারজিয়া আক্তার, শামছুননাহার, তহুরা, সাজেদা, শামছুননাহার জুনিয়র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে যাত্রা শুরু করা এই আট খেলোয়ার এখন জাতীয় দলে। 

স্কুলে টিম গঠন হওয়ার পর কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিন নিজেই শুরু করেন প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনতী রানী শীল নেন দেখভালের দায়িত্ব। ২০১২ সালে জেলায় শুরু হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট। প্রথমবারের মতো অংশ নেয় কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। জাতীয় পর্যায়ে রানাসআপ হয় সানজিদা, মারিয়া, তহুরারা। 

কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজউদ্দিন জানান, শুরুটা ছিলো চ্যালেঞ্জ। গ্রামের অভিভাবকরা রক্ষণশীল। মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেয়ার কথা শুনতেই পারতেন না। অভিভাবকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করার ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। এরপর মেয়েদের নিয়ে যখন মাঠে নামেন তখন অনেকেই ঠাট্টা মসকরা করেছে। অনুশীলনের সময় মাঠের আশপাশে থাকতো উৎসুক মানুষের ভিড়। অনেকেই আমাকে বিদ্রুপ করতো। তবে সাহায্য করতেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে। লোকের তীর্যক মন্তব্যের জবাব মাঠে দিতে চেয়েছিলাম তিনি। মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুল ছুটি পর ও বন্ধের দিনে মাঠে অনুশীলন করতে থাকে। একপর্যায়ে আসে সফলতা।

শিক্ষক মফিজউদ্দিনের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ২০১৩ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয় কলসিন্দুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন ও ক্রীড়ামোদি ব্যক্তিদের নজরে আস সানজিদা, মারিয়ারা। অল্প করে হলেও মিলতে থাকে সুযোগ-সুবিধা। 

২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার। এমন সফলতা দেখে এগিয়ে আসে অন্য নারী শিক্ষার্থীরা। দিন দিন বাড়তে থাকে কলসিন্দুরের স্কুল টিমের সদস্য সংখ্যা।

কলসিন্দুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিনতী রাণী শীল জানান, শুরুতে প্রধান সমস্যা ছিলো 'লজ্জা' এই সমস্যার সমাধানে সময় লেগেছে। কিন্তু আমার পেরেছি লোকলজ্জার ভয় দূর করে খেলার পোশাকে মাঠে মেয়েদের নামাতে। এখন আমাদের গর্ব হয়। আমি একটি ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরেছি। 

কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের কোচ জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা আজ আনন্দে আত্মহারা। এ বড় একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া এটা একটা গর্বের বিষয়। আর এই দলের আট সদস্যই আমাদের এই কলসিন্দুরের। আমাদের গড়ে তুলা খেলোয়াড়টা আজ এমন সফলতা অর্জন করছে, এতে এত পরিমাণ আনন্দিত হয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। একদিন মেয়েরা বিশ্বকাপ জয় করবে।

জীবন যুদ্ধের সে সব সংগ্রাম পেছনে ফেলে আজ ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশের মেয়েরা। যাদের উঠে আসার পেছনে নেপথ্য কারিগর ময়মনসিংহের কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের মফিজ স্যার, মিনতী রাণী শীল ও জুয়েল মিয়া ।