বর্ষাকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য ১০টি আকর্ষণীয় জায়গা
প্রভাতী খবর ডেস্ক
২৮ জুলাই, ২০২২, 10:26 PM
বর্ষাকালে বাংলাদেশে ভ্রমণের জন্য ১০টি আকর্ষণীয় জায়গা
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে একটু মুক্ত বাতাসের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের প্রকৃতি বর্ষাকালে যেন মনোরম, মনোমুগ্ধকর এবং আবেদনময়ী হয়ে ওঠে।
বর্ষার বৃষ্টিস্নাত সজীব প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছে কার না থাকে! তাই জন্য ঢাকা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য বর্ষাকালে ভ্রমণ উপযোগী বাংলাদেশের ১০টি আকর্ষণীয় জায়গার কথা-
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেট
সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে রাতারগুলের এই ডুবে যাওয়া বনে রয়েছে প্রায় ৭০-এর বেশি প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী। বর্ষাকালে ভারত থেকে অত্যধিক পানি নদী দিয়ে প্রবেশ করলে বনের সঙ্গে যুক্ত গোয়াইন নদী প্লাবিত হয়। আর তখনি বনটি তার স্বর্গীয় সৌন্দর্যে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বনের পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং গাছের ছাউনি ছাতার মতো বনকে ঢেকে দেয়। এ সময় নৌকায় করে নদী পেরোনোর সময় পাখির কিচিরমিচির ও পাতায় বৃষ্টির পানি পড়ার মৃদু শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।
সিলেট শহরের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে অল্প সময়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ অথবা জাফলংগামী যেকোনো গাড়িতে করে সারিঘাট হয়ে গোয়াইনঘাট বাজার। রাতারগুলের জলাবন ঘোরার জন্য শ্রীঙ্গি ব্রিজ বা গোয়াইনঘাট বাজার থেকে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
বর্ষাকালে শুধু সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সেই আদিম প্রাকৃতিক দৃশ্যই না; উপহার হিসেবে ভ্রমণকারীদের একটি হাওরের আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। পূর্ণিমার রূপালী মোহাবিষ্ট নৌকার ছাদে কাটানো একটি রাতের কথা কল্পনাতেও ভালো লাগা ছড়িয়ে দেয়।
বৃষ্টির পর ত্বকে চাঁদের আলো মেখে আকাশের বিশালতার নীচে শুয়ে থাকার অনুভূতি অতুলনীয়। আর হাওরের গভীরে ঢুকতে শুরু করলে আপনার যান্ত্রিক জীবনের সমস্ত তাড়াহুড়ো জলের গুঞ্জনের মাঝে নিমেষেই হারিয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা নদীতে বড় ব্রিজটির কাছেই তাহিরপুরের গাড়ি পাওয়া যায়। আর তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়ানোর অনেক নৌকা অপেক্ষা করে।
বিছানাকান্দি, সিলেট
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের মতো সিলেটের বিছানাকান্দিতেও বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটে। মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার থেকে নেমে আসা স্রোত বিছানাকান্দিকে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর মিলনে পরিণত করে।
মনোরম খাসিয়া পর্বতগুলো হলো এ জায়গাটির বিশেষত্ব। পর্বতগুলো এতই উঁচু যে মাঝে মাঝে পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষায় পানির বিশাল স্রোত ঝর্ণা হয়ে পিয়াইন নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে হ্রদ তৈরি করে, যার দৃশ্য সত্যিকার অর্থেই নেশা ধরিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত।
বিছানাকান্দি ভ্রমণে প্রথমে সিলেটের আম্বরখানা থেকে হাদারপার যেতে হবে। এখানকার নৌকা ঘাটের নৌকাগুলোই বিছানাকান্দি নিয়ে যায়। তবে জায়গাটির সৌন্দর্যের ষোলো আনা উপভোগ করতে সবাই বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করে নেয়।
সুন্দরবন, খুলনা
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায় প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমী সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এই অপার প্রাচুর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান। সবুজের সতেজতায় ভিজিয়ে রাখা ছাড়াও সুন্দরবন ছোট ছোট দ্বীপে পরিপূর্ণ। সারা দিন বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়ে এসব দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সুন্দরবনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঘন বনের মধ্য দিয়ে হাঁটার ক্ষেত্রে হীরণ পয়েন্ট বা নীলকোমল সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান।
একটু সময়সাপেক্ষ হলেও সুন্দরবন পৌছানোর জন্য স্টিমার হয়ে প্রথমে খুলনা যাত্রাটি গ্রামবাংলার মনোরম প্যানোরামার অনুভূতি দিবে। খুলনা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌ পরিবহন। এক্ষেত্রে বন পরিদর্শন করার জন্য একটি ব্যক্তিগত মোটর লঞ্চ বা স্পিডবোট ভাড়া করা যেতে পারে।
জাফলং, সিলেট
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের ওপারে আছে ভারতের ডাওকি। ডাওকি নদী পাহাড় থেকে জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাফলংয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভারতের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত এক মনোরম দৃশ্য সৃষ্টি করে।
এছাড়া, ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। বর্ষার সময় ভারতীয় সীমান্তে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সর্পিলাকার ডাওকি নদী যেন তার প্রাণশক্তি ফিরে পায়। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ।
ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছার পর শহর থেকে বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় দুই ঘন্টার মধ্যেই জাফলং যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্র কন্যা নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়।
পর্যটকদের কাছে এ জায়গার প্রধান আকর্ষণগুলো হচ্ছে ৩৬-ফুট লম্বা সোনার বৌদ্ধ মূর্তি, শুটকি পল্লী, ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ এবং মনোমুগ্ধকর মায়ামী গঙ্গামতির চর। এছাড়া, যে কুয়ার নামে এই শহরের নামকরণ সেই ঐতিহাসিক কুয়া দেখতেও ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমান।
আগে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা লাগলেও পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর এই সময়টা কমে প্রায় ৫ ঘন্টায় নেমে এসেছে। তাই পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এখন কুয়াকাটাকে আরও অভিজাত করে সাজানো হচ্ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার
১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার মূলত শীতকালে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে। তবে যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বর্ষাকালীন রূপ দেখেননি, তারা জীবনে দারুণ কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সামনে অবিরাম নীল জলরাশির সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মিথস্ক্রিয়ার কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা চলে না। আর অবিরাম বর্ষণ ভেজা হাওয়ার পূর্ণতা দিয়ে এক অদ্ভূত মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। স্নান, সূর্যস্নান, সাঁতার কাটা এবং সার্ফিংয়ের জন্য সমুদ্র সৈকতের নিজস্ব জনপ্রিয়তা রয়েছে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। অন্যদিকে, আকাশপথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা।
শ্রীমঙ্গল চা-বাগান, মৌলভীবাজার
বিপুল সংখ্যক চা বাগান এবং সাত রঙা চায়ের উৎপত্তির কারণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাটিকে বলা হয় বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী। শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথেই সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তৈরি চা-কন্যা ভাস্কর্য স্বাগত জানাবে।
চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতরে দক্ষিণ দিকে পড়বে ফিনলের চা-বাগান। ভানুগাছের পথ ধরে সামনে এগোলেই দেখা যাবে জেরিন টি-এস্টেট। তারপর লাউয়াছড়ার কিছু আগেই জঙ্গলঘেরা পথে হাঁটলে নূরজাহান টি-এস্টেটের দেখা পাওয়া যাবে।
শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ যাওয়ার পথে পড়বে লাউয়াছড়ার মনোরম উদ্যান। কমলগঞ্জ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ঘেরা চা-বাগানের মধ্যে চোখে পড়বে সুবিশাল মাধবপুর লেক। মাধবপুর লেক থেকে ধলাই সীমান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া পথের দুপাশে শুধুই চা-বাগান।
সিলেটের বিমান বন্দর, রেলওয়ে বা বাস স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে অনায়াসেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যাবে। গাড়ি রিজার্ভ করে চা-বাগানগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, সিলেট
সিলেটের উত্তর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি সিলেটের বৃহত্তম পাথর উত্তোলন স্থান। এই দর্শনীয় স্থানটির প্রধান আকর্ষণ হলো- মেঘালয়ের মেঘ, পাহাড়ী ঝরনা, এবং ধোলাইয়ের বালুকাময় উপকূল।
বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা সাদা পাথরগুলো ধলাই নদের বুকে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সড়কের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সিলেট সদরের যেকোনো জায়গা থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভোলাগঞ্জে যাওয়া যায়।
নীলাচল, বান্দরবান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুদূর সমুদ্রের স্পর্শ থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচিরে পরিপূর্ণ এই জায়গাটি ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এই পর্যটন কেন্দ্রটি এত উচ্চতায় অবস্থিত যে, এর সৌন্দর্য আকাশের বিশালতাকেও হার মানায়।
নীলাচলে পর্যটকদের সুবিধার্থে ছোট-বড় অনেক রেস্ট হাউস রয়েছে। আর শিশুদের খেলার জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যবস্থা। নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি বিশ্রামাগারের রংও করা হয়েছে নীল। বৃষ্টিভেজা সকালে বর্ষাস্নাত প্রকৃতির মায়া পর্যটকদের বিমোহিত করবে। দূরের তাজা বন, আকাশে কালো মেঘ এবং দূর সৈকতের গর্জন সবকিছু মিলে প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
ঢাকা থেকে বাসে করে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায়। এরপর বান্দরবান থেকে নীলাচল যেতে সিএনজি ভাড়া নিতে হয় অথবা চান্দের গাড়ি বা জিপে কোনো গ্রুপের সঙ্গে উঠে পড়তে হয়।
প্রভাতী খবর ডেস্ক
২৮ জুলাই, ২০২২, 10:26 PM
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে একটু মুক্ত বাতাসের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের প্রকৃতি বর্ষাকালে যেন মনোরম, মনোমুগ্ধকর এবং আবেদনময়ী হয়ে ওঠে।
বর্ষার বৃষ্টিস্নাত সজীব প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছে কার না থাকে! তাই জন্য ঢাকা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য বর্ষাকালে ভ্রমণ উপযোগী বাংলাদেশের ১০টি আকর্ষণীয় জায়গার কথা-
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, সিলেট
সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে রাতারগুলের এই ডুবে যাওয়া বনে রয়েছে প্রায় ৭০-এর বেশি প্রজাতির গাছপালা এবং প্রাণী। বর্ষাকালে ভারত থেকে অত্যধিক পানি নদী দিয়ে প্রবেশ করলে বনের সঙ্গে যুক্ত গোয়াইন নদী প্লাবিত হয়। আর তখনি বনটি তার স্বর্গীয় সৌন্দর্যে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বনের পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং গাছের ছাউনি ছাতার মতো বনকে ঢেকে দেয়। এ সময় নৌকায় করে নদী পেরোনোর সময় পাখির কিচিরমিচির ও পাতায় বৃষ্টির পানি পড়ার মৃদু শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।
সিলেট শহরের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে অল্প সময়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ অথবা জাফলংগামী যেকোনো গাড়িতে করে সারিঘাট হয়ে গোয়াইনঘাট বাজার। রাতারগুলের জলাবন ঘোরার জন্য শ্রীঙ্গি ব্রিজ বা গোয়াইনঘাট বাজার থেকে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ
বর্ষাকালে শুধু সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সেই আদিম প্রাকৃতিক দৃশ্যই না; উপহার হিসেবে ভ্রমণকারীদের একটি হাওরের আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। পূর্ণিমার রূপালী মোহাবিষ্ট নৌকার ছাদে কাটানো একটি রাতের কথা কল্পনাতেও ভালো লাগা ছড়িয়ে দেয়।
বৃষ্টির পর ত্বকে চাঁদের আলো মেখে আকাশের বিশালতার নীচে শুয়ে থাকার অনুভূতি অতুলনীয়। আর হাওরের গভীরে ঢুকতে শুরু করলে আপনার যান্ত্রিক জীবনের সমস্ত তাড়াহুড়ো জলের গুঞ্জনের মাঝে নিমেষেই হারিয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা নদীতে বড় ব্রিজটির কাছেই তাহিরপুরের গাড়ি পাওয়া যায়। আর তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়ানোর অনেক নৌকা অপেক্ষা করে।
বিছানাকান্দি, সিলেট
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের মতো সিলেটের বিছানাকান্দিতেও বর্ষা মৌসুমে ফুল ফোটে। মেঘালয়ের সেভেন সিস্টার থেকে নেমে আসা স্রোত বিছানাকান্দিকে পাহাড়, জলপ্রপাত এবং নদীর মিলনে পরিণত করে।
মনোরম খাসিয়া পর্বতগুলো হলো এ জায়গাটির বিশেষত্ব। পর্বতগুলো এতই উঁচু যে মাঝে মাঝে পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষায় পানির বিশাল স্রোত ঝর্ণা হয়ে পিয়াইন নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে হ্রদ তৈরি করে, যার দৃশ্য সত্যিকার অর্থেই নেশা ধরিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত।
বিছানাকান্দি ভ্রমণে প্রথমে সিলেটের আম্বরখানা থেকে হাদারপার যেতে হবে। এখানকার নৌকা ঘাটের নৌকাগুলোই বিছানাকান্দি নিয়ে যায়। তবে জায়গাটির সৌন্দর্যের ষোলো আনা উপভোগ করতে সবাই বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের জন্য একত্রে নৌকা ভাড়া করে নেয়।
সুন্দরবন, খুলনা
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হওয়ায় প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমী সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এই অপার প্রাচুর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান। সবুজের সতেজতায় ভিজিয়ে রাখা ছাড়াও সুন্দরবন ছোট ছোট দ্বীপে পরিপূর্ণ। সারা দিন বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়ে এসব দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সুন্দরবনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঘন বনের মধ্য দিয়ে হাঁটার ক্ষেত্রে হীরণ পয়েন্ট বা নীলকোমল সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান।
একটু সময়সাপেক্ষ হলেও সুন্দরবন পৌছানোর জন্য স্টিমার হয়ে প্রথমে খুলনা যাত্রাটি গ্রামবাংলার মনোরম প্যানোরামার অনুভূতি দিবে। খুলনা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌ পরিবহন। এক্ষেত্রে বন পরিদর্শন করার জন্য একটি ব্যক্তিগত মোটর লঞ্চ বা স্পিডবোট ভাড়া করা যেতে পারে।
জাফলং, সিলেট
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের ওপারে আছে ভারতের ডাওকি। ডাওকি নদী পাহাড় থেকে জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জাফলংয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভারতের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাত এক মনোরম দৃশ্য সৃষ্টি করে।
এছাড়া, ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। বর্ষার সময় ভারতীয় সীমান্তে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সর্পিলাকার ডাওকি নদী যেন তার প্রাণশক্তি ফিরে পায়। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ।
ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছার পর শহর থেকে বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় দুই ঘন্টার মধ্যেই জাফলং যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতটি পর্যটকদের কাছে সমুদ্র কন্যা নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়।
পর্যটকদের কাছে এ জায়গার প্রধান আকর্ষণগুলো হচ্ছে ৩৬-ফুট লম্বা সোনার বৌদ্ধ মূর্তি, শুটকি পল্লী, ফাতরার চর, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ এবং মনোমুগ্ধকর মায়ামী গঙ্গামতির চর। এছাড়া, যে কুয়ার নামে এই শহরের নামকরণ সেই ঐতিহাসিক কুয়া দেখতেও ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমান।
আগে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা লাগলেও পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর এই সময়টা কমে প্রায় ৫ ঘন্টায় নেমে এসেছে। তাই পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এখন কুয়াকাটাকে আরও অভিজাত করে সাজানো হচ্ছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার
১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার মূলত শীতকালে দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে। তবে যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বর্ষাকালীন রূপ দেখেননি, তারা জীবনে দারুণ কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সামনে অবিরাম নীল জলরাশির সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মিথস্ক্রিয়ার কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা চলে না। আর অবিরাম বর্ষণ ভেজা হাওয়ার পূর্ণতা দিয়ে এক অদ্ভূত মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। স্নান, সূর্যস্নান, সাঁতার কাটা এবং সার্ফিংয়ের জন্য সমুদ্র সৈকতের নিজস্ব জনপ্রিয়তা রয়েছে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। অন্যদিকে, আকাশপথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘণ্টা।
শ্রীমঙ্গল চা-বাগান, মৌলভীবাজার
বিপুল সংখ্যক চা বাগান এবং সাত রঙা চায়ের উৎপত্তির কারণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাটিকে বলা হয় বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী। শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথেই সাতগাঁও চা-বাগানের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের তৈরি চা-কন্যা ভাস্কর্য স্বাগত জানাবে।
চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতরে দক্ষিণ দিকে পড়বে ফিনলের চা-বাগান। ভানুগাছের পথ ধরে সামনে এগোলেই দেখা যাবে জেরিন টি-এস্টেট। তারপর লাউয়াছড়ার কিছু আগেই জঙ্গলঘেরা পথে হাঁটলে নূরজাহান টি-এস্টেটের দেখা পাওয়া যাবে।
শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কমলগঞ্জ যাওয়ার পথে পড়বে লাউয়াছড়ার মনোরম উদ্যান। কমলগঞ্জ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ঘেরা চা-বাগানের মধ্যে চোখে পড়বে সুবিশাল মাধবপুর লেক। মাধবপুর লেক থেকে ধলাই সীমান্ত পর্যন্ত চলে যাওয়া পথের দুপাশে শুধুই চা-বাগান।
সিলেটের বিমান বন্দর, রেলওয়ে বা বাস স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে অনায়াসেই শ্রীমঙ্গল যাওয়া যাবে। গাড়ি রিজার্ভ করে চা-বাগানগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, সিলেট
সিলেটের উত্তর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি সিলেটের বৃহত্তম পাথর উত্তোলন স্থান। এই দর্শনীয় স্থানটির প্রধান আকর্ষণ হলো- মেঘালয়ের মেঘ, পাহাড়ী ঝরনা, এবং ধোলাইয়ের বালুকাময় উপকূল।
বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে নেমে আসা সাদা পাথরগুলো ধলাই নদের বুকে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ভোলাগঞ্জ যাওয়ার সড়কের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সিলেট সদরের যেকোনো জায়গা থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা প্রাইভেট কারে করে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বের ভোলাগঞ্জে যাওয়া যায়।
নীলাচল, বান্দরবান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুদূর সমুদ্রের স্পর্শ থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখির কিচিরমিচিরে পরিপূর্ণ এই জায়গাটি ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এই পর্যটন কেন্দ্রটি এত উচ্চতায় অবস্থিত যে, এর সৌন্দর্য আকাশের বিশালতাকেও হার মানায়।
নীলাচলে পর্যটকদের সুবিধার্থে ছোট-বড় অনেক রেস্ট হাউস রয়েছে। আর শিশুদের খেলার জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় ব্যবস্থা। নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি বিশ্রামাগারের রংও করা হয়েছে নীল। বৃষ্টিভেজা সকালে বর্ষাস্নাত প্রকৃতির মায়া পর্যটকদের বিমোহিত করবে। দূরের তাজা বন, আকাশে কালো মেঘ এবং দূর সৈকতের গর্জন সবকিছু মিলে প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
ঢাকা থেকে বাসে করে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায়। এরপর বান্দরবান থেকে নীলাচল যেতে সিএনজি ভাড়া নিতে হয় অথবা চান্দের গাড়ি বা জিপে কোনো গ্রুপের সঙ্গে উঠে পড়তে হয়।