শিরোনামঃ
জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল নিটোরে অর্থ বছরে সাড়ে ৩কোটি টাকার অষুধ ক্রয় করে যা বিগত ৩০ বছরেও হয়নি ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান

লাল ফিতায় বন্দি মুন্সীগঞ্জ প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প

#
news image

পুরান ঢাকার ঝুঁঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তর প্রকল্প দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্দি হয়ে আছে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায়। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমিতে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি গড়ে তোলার কথা থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে রয়েছে নানা কারণে। 
প্লাস্টিক শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেন ব্যবসায়ীসহ পুরান ঢাকার বাসন্দিারা ঝুঁঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে স্থানান্তর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন বহুদনি ধরেই। 
জানা গেছে, দেশে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু সেই পঞ্চাশ দশকের শুরুতে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঘিঞ্জি এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য ২০১৫ সালের জাতীয় অর্থনৈতি পরষিদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড়বর্ত্তা মৌজায় ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে ৫০ একর জমিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্লাস্টিক কারখানার আলাদা জোন হওয়ার কথা। তবে অনুমোদনের সাত বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণই হয়নি এবং আজও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও কিছু জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। জমি বুঝে পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। 
প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 
তাদের মতে, এ প্রকল্পরে আওতায় ৩৬০টি প্লটে ২৫০টি এসএমই শিল্প ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। তবে উদ্যোক্তরা বলেছেন, এখানে ৩৪৮টি কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এতে প্রায় ১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও দু’দফায় বেড়ে ৪২৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আগে শুধু ঘররে টুকিটাকি কাজে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হলেও এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে নিত্যপণ্যের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।  পোশাক খাতের সরঞ্জাম, খেলনাসামগ্রী, ঘরে ব্যবহারের বিভিন্ন তৈজসপত্র, অফিসে ব্যবহারের জিনিসপত্র, গৃহনির্মাণসামগ্রী, জানালা ও দরজা, চিকিৎসার উপকরণ, কৃষি খাতরে জন্য পাইপ ও বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, পোলট্রি ও মৎস্য খাতের বিভিন্ন পণ্য, কম্পিউটারের উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি হচ্ছে। ফলে আমদাননির্ভির শল্পিটি এখন রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিণত হয়েছে।
তারা বলেন, পোশাকশিল্পের মতো আনুকূল্য পেলে প্লাস্টিক পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত হবে। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে প্লাস্টিকশিল্প। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এ দেশে নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্যই উৎপাদিত হতো। বিদেশি প্লাস্টিক পণ্যের জন্য দেশীয় বাজার ছিল অবারিত। এখন মানে ও বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের প্লাস্টিকশিল্প এতটাই এগিয়েছে যেÑ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে  এ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চীন, ভারতেও তা সমাদৃত হচ্ছে। 
বাংলাদশে ইনভস্টেমন্টে ডেভেলপমন্টে অথরটিরি (বিআইডিএ) সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক কারখানা আছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মালিকানায়। 
খাত সংশ্লষ্টিরা জানিয়েছেন, এই খাতে মোট বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। 
বিডার তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে প্লাস্টকি পণ্যের বার্ষিক বিক্রি প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পিভিসি পাইপের বিক্রি ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ও গৃহস্থালিসামগ্রীর বিক্রি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে এ খাতটি জিডিপিতে প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে এবং এ খাত থেকে বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার।
বিকাশমান এ শিল্পটি বিশাল বড় কর্মসংস্থানের বাজারও তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এই খাতে কাজ করছে।
এ শিল্পের উদ্যোক্তারা আশা করছেন চলতি বছর নাগাদ এই খাত থেকে  বার্ষিক রপ্তানি আয় ১৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। গত বছর এই খাত থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। 
উদ্যোক্তারা বলছেন, এই অপার সম্ভাবনাময় খাতের পরিপূর্ণ বিকাশ তখনই হবেÑ যখন এটি একটি পরিকল্পিত শিল্পনগরীর আওতায় আনা সম্ভব হবে। তাই সিরাজদীখান প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি দ্রুততম বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও জানান তারা। 
এ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় যেসব প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে, তা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে পুরান ঢাকার লাখো মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিপিজিএমইএ সভাপতি শামীম আহমেদ প্রভাতী খবরকে বলেন, প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়েছি। আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প। ফলে পুরান ঢাকা থেকে দীর্ঘদিনেও সরানো যায়নি ঝুঁঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক শিল্প-কারখানাগুলো। আমাদের দাবি দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক। যত দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী হবে, ততই কমবে অগ্নিকাণ্ড জনিত দুর্ঘটনা।  
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় বিগত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারায়। ওই ঘটনার পর সরকার দ্রুত পুরান ঢাকা থেকে প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে গত বছরের জুনে ২১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। প্রকল্পের ৫০ একর জমির মধ্যে ৩৩ একর সরকারি খাসজমি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাকি ১৭ একর। ফলে কয়েকবার জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জমি অধিগ্রহণে বাধা দেয়। 
সূত্র জানায়, প্লাস্টিক শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা আলাদা একটি শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য ২০০৬ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরীর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সেখানে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সাবেক ও বর্তমান কিছু সরকারি কর্মকর্তার কৌশলের কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হচ্ছে না। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিকের সঙ্গে বারবার সভা করলেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে এখনো পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও ইসলামবাগ এলাকায় প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেখানে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকল্পটি বাদ হলে কিংবা নতুন করে স্থান নির্বাচন করতে গেলে তা বাস্তবায়নে আরও পিছিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নিজাম উদ্দিন জানান, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তবু স্থানীয় কিছু লোক জোর করে জায়গা দখল করে আছে। তবে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

এসএম শামসুজ্জোহা

১৯ অক্টোবর, ২০২২,  11:59 PM

news image

পুরান ঢাকার ঝুঁঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তর প্রকল্প দীর্ঘ সাত বছর ধরে বন্দি হয়ে আছে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায়। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমিতে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি গড়ে তোলার কথা থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলে রয়েছে নানা কারণে। 
প্লাস্টিক শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র এসব তথ্য জানিয়ে বলেন ব্যবসায়ীসহ পুরান ঢাকার বাসন্দিারা ঝুঁঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোকে পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে স্থানান্তর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন বহুদনি ধরেই। 
জানা গেছে, দেশে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু সেই পঞ্চাশ দশকের শুরুতে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ শিল্প এতটাই এগিয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১২তম প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিকারক দেশ। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ঘিঞ্জি এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়ার জন্য ২০১৫ সালের জাতীয় অর্থনৈতি পরষিদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের। মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড়বর্ত্তা মৌজায় ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে ৫০ একর জমিতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্লাস্টিক কারখানার আলাদা জোন হওয়ার কথা। তবে অনুমোদনের সাত বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণই হয়নি এবং আজও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও কিছু জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। জমি বুঝে পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। 
প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 
তাদের মতে, এ প্রকল্পরে আওতায় ৩৬০টি প্লটে ২৫০টি এসএমই শিল্প ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। তবে উদ্যোক্তরা বলেছেন, এখানে ৩৪৮টি কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এতে প্রায় ১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও দু’দফায় বেড়ে ৪২৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আগে শুধু ঘররে টুকিটাকি কাজে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হলেও এখন প্রযুক্তির উন্নয়নে নিত্যপণ্যের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।  পোশাক খাতের সরঞ্জাম, খেলনাসামগ্রী, ঘরে ব্যবহারের বিভিন্ন তৈজসপত্র, অফিসে ব্যবহারের জিনিসপত্র, গৃহনির্মাণসামগ্রী, জানালা ও দরজা, চিকিৎসার উপকরণ, কৃষি খাতরে জন্য পাইপ ও বড় চৌবাচ্চা, গাড়ি ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, পোলট্রি ও মৎস্য খাতের বিভিন্ন পণ্য, কম্পিউটারের উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরি হচ্ছে। ফলে আমদাননির্ভির শল্পিটি এখন রপ্তানিমুখী শিল্পে পরিণত হয়েছে।
তারা বলেন, পোশাকশিল্পের মতো আনুকূল্য পেলে প্লাস্টিক পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতে পরিণত হবে। পঞ্চাশ দশকের শুরুতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে প্লাস্টিকশিল্প। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এ দেশে নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্যই উৎপাদিত হতো। বিদেশি প্লাস্টিক পণ্যের জন্য দেশীয় বাজার ছিল অবারিত। এখন মানে ও বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের প্লাস্টিকশিল্প এতটাই এগিয়েছে যেÑ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে  এ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। চীন, ভারতেও তা সমাদৃত হচ্ছে। 
বাংলাদশে ইনভস্টেমন্টে ডেভেলপমন্টে অথরটিরি (বিআইডিএ) সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক কারখানা আছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মালিকানায়। 
খাত সংশ্লষ্টিরা জানিয়েছেন, এই খাতে মোট বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। 
বিডার তথ্য অনুযায়ী স্থানীয় বাজারে প্লাস্টকি পণ্যের বার্ষিক বিক্রি প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পিভিসি পাইপের বিক্রি ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ও গৃহস্থালিসামগ্রীর বিক্রি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে এ খাতটি জিডিপিতে প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে এবং এ খাত থেকে বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার।
বিকাশমান এ শিল্পটি বিশাল বড় কর্মসংস্থানের বাজারও তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ এই খাতে কাজ করছে।
এ শিল্পের উদ্যোক্তারা আশা করছেন চলতি বছর নাগাদ এই খাত থেকে  বার্ষিক রপ্তানি আয় ১৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। গত বছর এই খাত থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। 
উদ্যোক্তারা বলছেন, এই অপার সম্ভাবনাময় খাতের পরিপূর্ণ বিকাশ তখনই হবেÑ যখন এটি একটি পরিকল্পিত শিল্পনগরীর আওতায় আনা সম্ভব হবে। তাই সিরাজদীখান প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি দ্রুততম বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও জানান তারা। 
এ শিল্পনগরীর কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় যেসব প্লাস্টিক কারখানা রয়েছে, তা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। দুর্ঘটনার আতঙ্ক থেকে রক্ষা পাবে পুরান ঢাকার লাখো মানুষ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিপিজিএমইএ সভাপতি শামীম আহমেদ প্রভাতী খবরকে বলেন, প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়েছি। আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প। ফলে পুরান ঢাকা থেকে দীর্ঘদিনেও সরানো যায়নি ঝুঁঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক শিল্প-কারখানাগুলো। আমাদের দাবি দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক। যত দ্রুত প্লাস্টিক শিল্পনগরী হবে, ততই কমবে অগ্নিকাণ্ড জনিত দুর্ঘটনা।  
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় বিগত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারায়। ওই ঘটনার পর সরকার দ্রুত পুরান ঢাকা থেকে প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসককে গত বছরের জুনে ২১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। প্রকল্পের ৫০ একর জমির মধ্যে ৩৩ একর সরকারি খাসজমি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাকি ১৭ একর। ফলে কয়েকবার জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জমি অধিগ্রহণে বাধা দেয়। 
সূত্র জানায়, প্লাস্টিক শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা আলাদা একটি শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য ২০০৬ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরীর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সেখানে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সাবেক ও বর্তমান কিছু সরকারি কর্মকর্তার কৌশলের কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হচ্ছে না। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিকের সঙ্গে বারবার সভা করলেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে এখনো পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও ইসলামবাগ এলাকায় প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেখানে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকল্পটি বাদ হলে কিংবা নতুন করে স্থান নির্বাচন করতে গেলে তা বাস্তবায়নে আরও পিছিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নিজাম উদ্দিন জানান, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তবু স্থানীয় কিছু লোক জোর করে জায়গা দখল করে আছে। তবে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।