শিরোনামঃ
নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ যশোর, বাগেরহাট ও নড়াইলের ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তিন নেতা ইডিসিএল গিলে খাচ্ছে জগলুল জুড়ীতে ভূয়া রশিদ দিয়ে কুরবানীর পশু বিক্রির অভিযোগ মোমিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ করায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের বিক্ষোভ মিছিল বর্হিবিশ্বে লন্ডনে স্হাপিত জাতির পিতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ সামন্তলাল সেন সহকর্মীর শ্লীলতাহানীর পরও বহাল তবিয়তে এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ বিটিএ’র পক্ষ থেকে নব নিযুক্ত পরিচালককে অভিনন্দন বিকাশ দেওয়ান ছিলেন একজন সফল এমডি জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ

ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রমাণ সত্ত্বেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা

#
news image

ক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মুক্ত করতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়েছেন হাসমত উল্যাহ। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অস্ত্র হাতে জীবন বাজি রেখে সম্মুখযুদ্ধে লড়েছেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। এ লড়াইয়ে হারিয়েছেন অনেক কিছু। ৯ মাসের সংগ্রাম শেষে দেশকে হানাদারমুক্ত করে নিজ জন্মভূমিতে ফেরেন বীর বেশে। তবে জীবদ্দশায় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। এখনও তার পবিবারের সদস্যরা সেই অপেক্ষায় আছেন।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হাসমত উল্যার পরিবারের কাছে আছে তার ওসমানী সনদ, অস্ত্র জমাদানের রসিদ, মুক্তিবার্তাসহ আরও প্রমাণপত্র। কিন্তু এসব থাকার পরও গেজেটে নেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্যার নাম। হাসমত উল্যার মতো এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরসূরিরা।

হাসমত উল্যার জন্ম ফরিদগঞ্জের নোয়াগাঁওয়ে ১৯৩৯ সালের ৩১ অক্টোবর। তার বাবা মৌলভী আব্দুল কাদের সাউদ। তবে তিনি চাকরি সূত্রে নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। পাকিস্তান আমলে চাকরি করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। যুদ্ধ শেষে পুনরায় একই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। হাসমত উল্যা এফএফ বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর থেকেই তিনি দেশের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শুরুতে তিনি ভারতের মেঘালয়ের এফএফ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। তার সহযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি এসএলআর, এমএমজি ও গ্রেনেডের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। ২ নম্বর সেক্টরে মেজর এটিএম হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন হাসমত উল্যা। তার রয়েছে যুদ্ধসংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ। রয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক তৎকালীন কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী এবং আঞ্চলিক অধিনায়ক (২ নম্বর সেক্টর) কর্নেল খালেদ মোশাররফের স্বাক্ষরযুক্ত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। আরও রয়েছে এফ জোন (নোয়াখালী) কমান্ডার সামছুল হকের প্রত্যয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডারের প্রত্যয়ন, ৮ আগস্ট ১৯৭৭ সালে ১ নম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের প্রত্যয়ন, ১৯৮১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ডের প্রত্যয়ন, ঢাকা সিটি কমান্ডারের গেরিলা বাহিনীর প্রত্যয়নপত্র।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জাতীয় মহাসম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসমত উল্যাকে। তিনি যে অস্ত্র জমা দিয়েছেন তার গ্রহণের রসিদও রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি একটি এসএলআর (বাট নং ১২৮৯) জমা দেন। তার অস্ত্র জমাদানের রসিদ নম্বর ১২৮৯।

হাসমত মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কার সঙ্গে এবং কার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন, কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেনÑ তা সরকারের সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডারের দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তায়ও তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার নম্বর ০২০৫০৫০৬১৮।

এত কিছু থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে হাসমত উল্যার নাম নেই। এ বিষয়ে তার বড় ছেলে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান সাউদ বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতির জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) যাচাই-বাছাইয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করে সই-স্বাক্ষর হয়ে গেজেটের জন্য পাঠানো হয়েছে; এটুকু জানতে পেরেছি। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিটুকু পেতে আর কত বছর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে!’

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মার্চ, ২০২৩,  4:06 PM

news image

ক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে মুক্ত করতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়েছেন হাসমত উল্যাহ। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। অস্ত্র হাতে জীবন বাজি রেখে সম্মুখযুদ্ধে লড়েছেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। এ লড়াইয়ে হারিয়েছেন অনেক কিছু। ৯ মাসের সংগ্রাম শেষে দেশকে হানাদারমুক্ত করে নিজ জন্মভূমিতে ফেরেন বীর বেশে। তবে জীবদ্দশায় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। এখনও তার পবিবারের সদস্যরা সেই অপেক্ষায় আছেন।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হাসমত উল্যার পরিবারের কাছে আছে তার ওসমানী সনদ, অস্ত্র জমাদানের রসিদ, মুক্তিবার্তাসহ আরও প্রমাণপত্র। কিন্তু এসব থাকার পরও গেজেটে নেই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্যার নাম। হাসমত উল্যার মতো এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতায়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরসূরিরা।

হাসমত উল্যার জন্ম ফরিদগঞ্জের নোয়াগাঁওয়ে ১৯৩৯ সালের ৩১ অক্টোবর। তার বাবা মৌলভী আব্দুল কাদের সাউদ। তবে তিনি চাকরি সূত্রে নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। পাকিস্তান আমলে চাকরি করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। যুদ্ধ শেষে পুনরায় একই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। হাসমত উল্যা এফএফ বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর থেকেই তিনি দেশের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

শুরুতে তিনি ভারতের মেঘালয়ের এফএফ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। তার সহযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি এসএলআর, এমএমজি ও গ্রেনেডের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। ২ নম্বর সেক্টরে মেজর এটিএম হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন হাসমত উল্যা। তার রয়েছে যুদ্ধসংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ। রয়েছে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক তৎকালীন কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী এবং আঞ্চলিক অধিনায়ক (২ নম্বর সেক্টর) কর্নেল খালেদ মোশাররফের স্বাক্ষরযুক্ত দেশরক্ষা বিভাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র। আরও রয়েছে এফ জোন (নোয়াখালী) কমান্ডার সামছুল হকের প্রত্যয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডারের প্রত্যয়ন, ৮ আগস্ট ১৯৭৭ সালে ১ নম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের প্রত্যয়ন, ১৯৮১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ডের প্রত্যয়ন, ঢাকা সিটি কমান্ডারের গেরিলা বাহিনীর প্রত্যয়নপত্র।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জাতীয় মহাসম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসমত উল্যাকে। তিনি যে অস্ত্র জমা দিয়েছেন তার গ্রহণের রসিদও রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি একটি এসএলআর (বাট নং ১২৮৯) জমা দেন। তার অস্ত্র জমাদানের রসিদ নম্বর ১২৮৯।

হাসমত মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কার সঙ্গে এবং কার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন, কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেনÑ তা সরকারের সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডারের দেওয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তায়ও তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যার নম্বর ০২০৫০৫০৬১৮।

এত কিছু থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে হাসমত উল্যার নাম নেই। এ বিষয়ে তার বড় ছেলে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান সাউদ বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বীকৃতির জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) যাচাই-বাছাইয়ে কাগজপত্র প্রস্তুত করে সই-স্বাক্ষর হয়ে গেজেটের জন্য পাঠানো হয়েছে; এটুকু জানতে পেরেছি। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিটুকু পেতে আর কত বছর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে!’