অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ

জাফর আলম, কক্সবাজার
০৭ এপ্রিল, ২০২২, 6:04 AM

অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নতুন স্বপ্নদুয়ার খুলে যাচ্ছে কক্সবাজারে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি ট্রেন যাবে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এর জন্য অপেক্ষা আর মাত্র ১৪ মাস।
আগামী বছরের জুন মাসেই চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন ও স্টেশন নির্মাণসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মান সম্পন্ন হবে। এরপরই ঢাকা-কক্সবাজার পথে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ২০১০ সালে সরকার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে । সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। নানা জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সেই রেললাইন এখন কল্পনাকে ছাড়িয়ে বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
প্রথমে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনযোগ শুরুর আশা করা হলেও এই সময়কাল আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন মাসে নির্ধারন করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখী পথে চট্টগ্রামের দোহাজারী উপজেলা পর্যন্ত রেললাইন নেটওয়ার্ক স্বাধীনতার আগে থেকেই বিদ্যমান ছিলো। এই পথে এখনো ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। এখন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে রামু'র ঘুমধুম পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। চীনের দুটি এবং বাংলাদেশের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই রেললাইন নির্মানের কাজ করছে।
দোহাজারী- কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ দুইভাগে ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত একটি অংশ এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ ভাগ করে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে চকরিয়া অংশের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এই অংশের ২০টি সেতু কালভার্টের মধ্যে ১৭টি ইতিমধ্যে নির্মিত হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, রেললাইন স্থাপনের কাজও সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে। তবে দোহাজারী- চকরিয়া অংশের কাজ এই ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এই অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে ৩টি সমাপ্ত হলেও বাকি ১৭টির কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, জমি অধিগ্রহনসহ নানা জটিলতায় কিছু কিছু এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্বিত হয়।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতি এবং বর্ষার কারনেও কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিলো। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা-থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেনে যাতায়ত করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।
বর্তমানে এই প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৭টি স্টেশন এখন নির্মান শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজারের নির্মাণাধীন আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মানের কাজও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করতে বিভিন্ন শ্রেণীর ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে। এই রেললাইন এখন আর কল্পনা নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলওয়ের চুক্তি হয়। এর মধ্যে দুটি লটে দুটি চায়না ও দুটি দেশীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়।
এর মধ্যে একটি লটে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপর লটে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে।
প্রখ/ সাদ্দাম
জাফর আলম, কক্সবাজার
০৭ এপ্রিল, ২০২২, 6:04 AM

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নতুন স্বপ্নদুয়ার খুলে যাচ্ছে কক্সবাজারে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি ট্রেন যাবে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এর জন্য অপেক্ষা আর মাত্র ১৪ মাস।
আগামী বছরের জুন মাসেই চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন ও স্টেশন নির্মাণসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মান সম্পন্ন হবে। এরপরই ঢাকা-কক্সবাজার পথে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ২০১০ সালে সরকার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলযোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে । সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। নানা জটিলতা, প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সেই রেললাইন এখন কল্পনাকে ছাড়িয়ে বাস্তবতায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
প্রথমে আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনযোগ শুরুর আশা করা হলেও এই সময়কাল আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন মাসে নির্ধারন করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখী পথে চট্টগ্রামের দোহাজারী উপজেলা পর্যন্ত রেললাইন নেটওয়ার্ক স্বাধীনতার আগে থেকেই বিদ্যমান ছিলো। এই পথে এখনো ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। এখন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে রামু'র ঘুমধুম পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। চীনের দুটি এবং বাংলাদেশের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই রেললাইন নির্মানের কাজ করছে।
দোহাজারী- কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ দুইভাগে ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত একটি অংশ এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ ভাগ করে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে চকরিয়া অংশের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এই অংশের ২০টি সেতু কালভার্টের মধ্যে ১৭টি ইতিমধ্যে নির্মিত হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, রেললাইন স্থাপনের কাজও সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে। তবে দোহাজারী- চকরিয়া অংশের কাজ এই ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এই অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে ৩টি সমাপ্ত হলেও বাকি ১৭টির কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, জমি অধিগ্রহনসহ নানা জটিলতায় কিছু কিছু এলাকায় রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্বিত হয়।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতি এবং বর্ষার কারনেও কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিলো। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা-থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেনে যাতায়ত করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।
বর্তমানে এই প্রকল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৭টি স্টেশন এখন নির্মান শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া কক্সবাজারের নির্মাণাধীন আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মানের কাজও অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করতে বিভিন্ন শ্রেণীর ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে। এই রেললাইন এখন আর কল্পনা নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলওয়ের চুক্তি হয়। এর মধ্যে দুটি লটে দুটি চায়না ও দুটি দেশীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়।
এর মধ্যে একটি লটে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিআরইসি) এবং বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। অপর লটে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে।
প্রখ/ সাদ্দাম