পাবিপ্রবির আবু রায়হান এখন আমাজনে

অনলাইন ডেস্ক
২৭ অক্টোবর, ২০২২, 1:56 AM

পাবিপ্রবির আবু রায়হান এখন আমাজনে
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের আবু রায়হান বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আমাজনে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন।
তিনি পাবিপ্রবির সিএসই ৫ম ব্যাচে পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে স্যামসাংয়ে চাকরি নেন। কিন্তু মনে অদম্য ইচ্ছা ছিল আমাজনে কাজ করার। আমাজনে কাজ করা তো আর কারো ইচ্ছাস্বাধীনতায় নির্ভর করে না। আমাজনের জব সাইটে বারবার লেগে ছিলেন রায়হান। একসময় পান সাফল্য।
আবু রায়হানের জন্মস্থান নওগাঁ কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে সিরাজগঞ্জে থাকতেন। স্কুল পুরোটাই এস বি রেলওয়ে কলোনি প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে। সফলতার নেপথ্যের গল্প জানতে চাইলে বলেন, ছাত্রজীবনে বরাবরই ছাত্র ভালো ছিলাম। তবে কলেজজীবনে বগুড়ায় একা থাকতাম, পড়াশুনা করতাম বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে। সেই প্রথম একা বাড়ির বাইরে থাকার কারণে হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।
ফলাফল এইচএসসিতে রসায়নে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসা। এতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হারাই। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আমার পরিবারের চাওয়া ছিল আমি যেন তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হই। কিন্তু আমি আমার পছন্দ কম্পিউটার প্রকৌশল। তাই শেষপর্যন্ত ওখানেই ভর্তি হই। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ারা প্রথম দিক থেকেই প্রোগ্রামিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বলতো। বড় ভাইয়াদের সহায়তায় প্রোগ্রামিং শুরু করি। তারপর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ভালো লাগতে শুরু করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং কনটেস্টে যাওয়ার সুযোগ হয়। কখনোই খুব বেশি ভালো করতে পারিনি কিন্তু লেগে থাকতাম ভালো কিছু করার চেষ্টায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ২ সেমিস্টারের ফলাফল অনেক খারাপ করি। তৃতীয় সেমিস্টারে এসে বুঝতে পারি রেজাল্টের গুরুত্বও আছে। তাই তখন থেকে একাডেমিকের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া শুরু করি। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্যামসাংয়ে পরীক্ষা দেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই এই কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেই। ২০২১ এর মাঝের দিক থেকে বিদেশের বড় বড় টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। আমাজন, গুগল, ফেসবুক এমন বড় কোনো কোম্পানিতে পরিচিত কেউ না থাকায় সবসময় সরাসরি তাদের জব সাইট থেকে ও লিঙ্কডইন থেকে এপ্লাই করতাম। তারপরে তো আমাজনে পরীক্ষা দিলাম এবং শেষ পর্যন্ত সফল হলাম। কাজের সুযোগ পেলাম স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে।
কোন প্রক্রিয়ায় আপনি আমাজনে কাজের সুযোগ করে নিলেন, এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে রায়হান বলেন, আমাজন অথবা এমন টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে সবার রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম। তাদের একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড আছে। তাদের সব রিক্রুটকে নির্দিষ্ট কিছু ধাপে যাচাই করা হয় যে, সে তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা। পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া গ্লোবালি দেখা হয়। আমাকেও সেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্ক্রিনিং রাউন্ড, কোডিং টেস্ট, সিস্টেম ডিজাইন টেস্ট, বিহ্যাবরিয়াল টেস্টসহ আরও কিছু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। সব পরীক্ষা শেষে যখন হায়ারিং কমিটি তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী আমাকে ঠিক মনে করেছে, তখন আমাজন আমাকে ফাইনাল অফার দিয়েছে।
নতুনদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিটা মানুষের সামনে অসংখ্য বিকল্প পথ আসবে তার জীবন চলার পথে। এর মধ্যে নিজের পছন্দ এবং স্বপ্ন অনুযায়ী একটা পথ ঠিক করে সেই পথে এগুতে হবে। তবে সবসময় সামনে কিছু বিকল্প পথ রাখা উচিৎ। প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন আছে। সফলতা হলো সেই স্বপ্নে পৌঁছাতে পারা, যেটা আমরা মনের মধ্যে লালন পালন করি। একেকজনের সফলতার মানদণ্ড স্বতন্ত্র। তাই সবার সফলতাকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়।
অনলাইন ডেস্ক
২৭ অক্টোবর, ২০২২, 1:56 AM

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের আবু রায়হান বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আমাজনে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন।
তিনি পাবিপ্রবির সিএসই ৫ম ব্যাচে পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে স্যামসাংয়ে চাকরি নেন। কিন্তু মনে অদম্য ইচ্ছা ছিল আমাজনে কাজ করার। আমাজনে কাজ করা তো আর কারো ইচ্ছাস্বাধীনতায় নির্ভর করে না। আমাজনের জব সাইটে বারবার লেগে ছিলেন রায়হান। একসময় পান সাফল্য।
আবু রায়হানের জন্মস্থান নওগাঁ কিন্তু বাবার চাকরির সুবাদে সিরাজগঞ্জে থাকতেন। স্কুল পুরোটাই এস বি রেলওয়ে কলোনি প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে। সফলতার নেপথ্যের গল্প জানতে চাইলে বলেন, ছাত্রজীবনে বরাবরই ছাত্র ভালো ছিলাম। তবে কলেজজীবনে বগুড়ায় একা থাকতাম, পড়াশুনা করতাম বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে। সেই প্রথম একা বাড়ির বাইরে থাকার কারণে হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি।
ফলাফল এইচএসসিতে রসায়নে কাঙ্ক্ষিত ফল না আসা। এতেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হারাই। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আমার পরিবারের চাওয়া ছিল আমি যেন তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হই। কিন্তু আমি আমার পছন্দ কম্পিউটার প্রকৌশল। তাই শেষপর্যন্ত ওখানেই ভর্তি হই। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ারা প্রথম দিক থেকেই প্রোগ্রামিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বলতো। বড় ভাইয়াদের সহায়তায় প্রোগ্রামিং শুরু করি। তারপর বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ভালো লাগতে শুরু করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং কনটেস্টে যাওয়ার সুযোগ হয়। কখনোই খুব বেশি ভালো করতে পারিনি কিন্তু লেগে থাকতাম ভালো কিছু করার চেষ্টায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ২ সেমিস্টারের ফলাফল অনেক খারাপ করি। তৃতীয় সেমিস্টারে এসে বুঝতে পারি রেজাল্টের গুরুত্বও আছে। তাই তখন থেকে একাডেমিকের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া শুরু করি। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্যামসাংয়ে পরীক্ষা দেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই এই কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেই। ২০২১ এর মাঝের দিক থেকে বিদেশের বড় বড় টেক জায়েন্ট কোম্পানিতে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। আমাজন, গুগল, ফেসবুক এমন বড় কোনো কোম্পানিতে পরিচিত কেউ না থাকায় সবসময় সরাসরি তাদের জব সাইট থেকে ও লিঙ্কডইন থেকে এপ্লাই করতাম। তারপরে তো আমাজনে পরীক্ষা দিলাম এবং শেষ পর্যন্ত সফল হলাম। কাজের সুযোগ পেলাম স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে।
কোন প্রক্রিয়ায় আপনি আমাজনে কাজের সুযোগ করে নিলেন, এই প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে রায়হান বলেন, আমাজন অথবা এমন টেক জায়ান্ট কোম্পানিতে সবার রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম। তাদের একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড আছে। তাদের সব রিক্রুটকে নির্দিষ্ট কিছু ধাপে যাচাই করা হয় যে, সে তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা। পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া গ্লোবালি দেখা হয়। আমাকেও সেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্ক্রিনিং রাউন্ড, কোডিং টেস্ট, সিস্টেম ডিজাইন টেস্ট, বিহ্যাবরিয়াল টেস্টসহ আরও কিছু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। সব পরীক্ষা শেষে যখন হায়ারিং কমিটি তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী আমাকে ঠিক মনে করেছে, তখন আমাজন আমাকে ফাইনাল অফার দিয়েছে।
নতুনদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিটা মানুষের সামনে অসংখ্য বিকল্প পথ আসবে তার জীবন চলার পথে। এর মধ্যে নিজের পছন্দ এবং স্বপ্ন অনুযায়ী একটা পথ ঠিক করে সেই পথে এগুতে হবে। তবে সবসময় সামনে কিছু বিকল্প পথ রাখা উচিৎ। প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন আছে। সফলতা হলো সেই স্বপ্নে পৌঁছাতে পারা, যেটা আমরা মনের মধ্যে লালন পালন করি। একেকজনের সফলতার মানদণ্ড স্বতন্ত্র। তাই সবার সফলতাকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়।