ঝিনাইদহে পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত, অস্বস্তি বাড়ছে চাষিদের

দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
১১ এপ্রিল, ২০২২, 6:04 AM

ঝিনাইদহে পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত, অস্বস্তি বাড়ছে চাষিদের
উন্নতমানের পানচাষ এবং বিদেশে পান রপ্তাণির জন্য খ্যাত ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পানচাষিরা ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়েছেন। সার ও অন্যান্য উপাদান নির্দেশমত প্রয়োগ করেও আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় তাদের পুরনো পানবরজের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিধায় পানচাষও ক্রমশ কমছে এ জেলায়। আর উৎপদনও কমছে সংগত কারণেই। যুগের পর যুগ একই জমিতে পানচাষ, পরিমাপ বা মাত্রার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, সর্বোপরি অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাকে দায়ি করছে কৃষি বিভাগ।
হরিণাকুন্ডুর ভবানিপুর, জোড়াদহ, রামনগর ও কামারখালি গ্রামের কয়েকজন পানচাষির সাথে কথা বলে জারনা যায়, তারা ৪০-৫০ বছর বা তার ও বেশি সময় ধরে একই বরজে পনচাষ করছেন। তাদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শেখা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথায় তারা জানতে পেরেছেন নতুন মাটিতে পানচাষ সুবিধাজনক হয় না । তাই পুরনো বরজেই তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কিন্তু গত কয়েকবছর তারা কাঙ্খিত উৎপাদন পাচ্ছেন না বরজ থেকে। পানির বাড়ন্ত হবার বিষয়টি তারা লক্ষ্য করে দেখেছেন পানগাছে “ফাপপচা” বা কান্ডপচা রোগ লেগে গাছ মরে যাচ্ছে। ওইসব পানচাষির মতে
কামরখালি গ্রামের পানচাষি নয়ন আহমেদ ও বাবুল হোসেন জানালেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায় ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শমত তারা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না। ফলে বরজের পান দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। অন্য ফসলের ত’লনায় প ানচাষ যথেষ্ট লাভজনক হলেও উদ্ভুত বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাপ বা দাদার আমলের ঐতিহ্যবাহি পানবরজ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
খামারবাড়ি ঝিনাইদহের উপপিরচালকের অফিসসূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলায় ২,৩৭০ হেক্টরে পানচাষ করে চাষিরা ৩০,৫০২ টন পান উৎপাদন করলেও আবার তা ১৩৬ হেক্টর কমে ২,২৩৪ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২.৮৭ টন হিসাবে এবার জেলায় ২৮,৭৫২টন পান উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২০৪ হেক্টরে, কালিগঞ্জে ৩০০ হেক্টরে, কোটচাঁদপুরে ৮৫হেক্টরে, মহেশপুরে ২৫ হেক্টরে, শৈলকুপায় ৩২০ হেক্টরে, এবং হারিকুন্ডুতে সর্বাধিক ১,৩০৪ হেক্টরে পনচাষ হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের উপসহকারি কৃষি অফিসার শফিকুর রহমান জানালেন, নির্দেশনা অনুযায়ি ক্ষতিগ্রস্ত বরজে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পুরনো বরজের কারনেই নয়- অনেকসময় ব্যবহৃত খৈল, পানি বা শ্রমিকের শরির থেকেও রোগজীবানু ছড়াতে পারে। অধিকাংশ পানচাষি কর্ষণতল বা ক্সেতের চাষির গভীরতার বিষয়টি বিবেচলা করেন না। ওইসব বরজের অধিকাংশই ৫০-৬০ বা তার বেশি বয়সের যা রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভ’মিকা রাখতে পারছে না।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার হাফিজ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নতুন মাটিতে পানচাষ সুবিধাজনক না হলেও পুরনো বরজের পরিচর্যা কার্যক্রম যথাযথ হচ্ছে না। বারবার পরামর্শ দেয়া সত্বেও পানচাষিরা তাদের বরজের যত্ন নিতে চান না। বেশি ফলন বা ভালোমানের পানের আশায় তারা তাদের ইচ্ছেমত রাসায়নিক সার বা অন্যান্য উপাদান প্রয়োগ করন। নিয়মিত আগাছা দমন, শীত-গরমের বরজ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়েও তারা ততটা সচেতন নয় বিধায় পুরনো বরজগুলো এখন আর আগের মত ফলন দিতে পারছে না। ফলে অর্থকরি পান আবাদ করেও লাভের বদলে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
প্রখ/ সাদ্দাম
দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
১১ এপ্রিল, ২০২২, 6:04 AM

উন্নতমানের পানচাষ এবং বিদেশে পান রপ্তাণির জন্য খ্যাত ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার পানচাষিরা ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়েছেন। সার ও অন্যান্য উপাদান নির্দেশমত প্রয়োগ করেও আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় তাদের পুরনো পানবরজের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিধায় পানচাষও ক্রমশ কমছে এ জেলায়। আর উৎপদনও কমছে সংগত কারণেই। যুগের পর যুগ একই জমিতে পানচাষ, পরিমাপ বা মাত্রার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, সর্বোপরি অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাকে দায়ি করছে কৃষি বিভাগ।
হরিণাকুন্ডুর ভবানিপুর, জোড়াদহ, রামনগর ও কামারখালি গ্রামের কয়েকজন পানচাষির সাথে কথা বলে জারনা যায়, তারা ৪০-৫০ বছর বা তার ও বেশি সময় ধরে একই বরজে পনচাষ করছেন। তাদের পূর্বপুরুষের কাছ থেকে শেখা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথায় তারা জানতে পেরেছেন নতুন মাটিতে পানচাষ সুবিধাজনক হয় না । তাই পুরনো বরজেই তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কিন্তু গত কয়েকবছর তারা কাঙ্খিত উৎপাদন পাচ্ছেন না বরজ থেকে। পানির বাড়ন্ত হবার বিষয়টি তারা লক্ষ্য করে দেখেছেন পানগাছে “ফাপপচা” বা কান্ডপচা রোগ লেগে গাছ মরে যাচ্ছে। ওইসব পানচাষির মতে
কামরখালি গ্রামের পানচাষি নয়ন আহমেদ ও বাবুল হোসেন জানালেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায় ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শমত তারা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন না। ফলে বরজের পান দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। অন্য ফসলের ত’লনায় প ানচাষ যথেষ্ট লাভজনক হলেও উদ্ভুত বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাপ বা দাদার আমলের ঐতিহ্যবাহি পানবরজ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
খামারবাড়ি ঝিনাইদহের উপপিরচালকের অফিসসূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলায় ২,৩৭০ হেক্টরে পানচাষ করে চাষিরা ৩০,৫০২ টন পান উৎপাদন করলেও আবার তা ১৩৬ হেক্টর কমে ২,২৩৪ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১২.৮৭ টন হিসাবে এবার জেলায় ২৮,৭৫২টন পান উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ২০৪ হেক্টরে, কালিগঞ্জে ৩০০ হেক্টরে, কোটচাঁদপুরে ৮৫হেক্টরে, মহেশপুরে ২৫ হেক্টরে, শৈলকুপায় ৩২০ হেক্টরে, এবং হারিকুন্ডুতে সর্বাধিক ১,৩০৪ হেক্টরে পনচাষ হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের উপসহকারি কৃষি অফিসার শফিকুর রহমান জানালেন, নির্দেশনা অনুযায়ি ক্ষতিগ্রস্ত বরজে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু পুরনো বরজের কারনেই নয়- অনেকসময় ব্যবহৃত খৈল, পানি বা শ্রমিকের শরির থেকেও রোগজীবানু ছড়াতে পারে। অধিকাংশ পানচাষি কর্ষণতল বা ক্সেতের চাষির গভীরতার বিষয়টি বিবেচলা করেন না। ওইসব বরজের অধিকাংশই ৫০-৬০ বা তার বেশি বয়সের যা রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভ’মিকা রাখতে পারছে না।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার হাফিজ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নতুন মাটিতে পানচাষ সুবিধাজনক না হলেও পুরনো বরজের পরিচর্যা কার্যক্রম যথাযথ হচ্ছে না। বারবার পরামর্শ দেয়া সত্বেও পানচাষিরা তাদের বরজের যত্ন নিতে চান না। বেশি ফলন বা ভালোমানের পানের আশায় তারা তাদের ইচ্ছেমত রাসায়নিক সার বা অন্যান্য উপাদান প্রয়োগ করন। নিয়মিত আগাছা দমন, শীত-গরমের বরজ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়েও তারা ততটা সচেতন নয় বিধায় পুরনো বরজগুলো এখন আর আগের মত ফলন দিতে পারছে না। ফলে অর্থকরি পান আবাদ করেও লাভের বদলে চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।
প্রখ/ সাদ্দাম