তেল-বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের মানুষকে চরম কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে

মোমিন মেহেদী
১০ আগস্ট, ২০২২, 11:07 PM

তেল-বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, দেশের মানুষকে চরম কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতিতেই বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নির্মম সিদ্ধান্ত এক এক করে চাপিয়ে দিতে উঠে পরে-আদা-জল খেয়ে নেমেছেন বলে মনে হচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছেন বিপিসির কর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ চেষ্টা। সেই হাত ধরে দেশের মানুষকে করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক চরম কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিতে কারা যেন শারীরিক-মানষিক শক্তিও প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। দেশে শক্তিশালী বর্ডার গার্ড থাকা স্বত্বেও পাচারের অযুহাত তুলে মন্ত্রী বলছেন, পাচার রোধ করার জন্য জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে তিনি বলছেন, ‘একদিনে ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি।’ সেই সাথে বলছেন- ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ হিসেবে মাসে লোকসানের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।’
আগস্ট মাসে এসে মনে পরছে গত ১৪ মার্চ-এর কথা। সেই দিন তিনি বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) ও নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ এ একটা আভাস দিয়েছিলেন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির। সেই দিন লোকসান রেখে ভর্তুকি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে আরও বাড়লে কী হবে তা এখন বলা মুশকিল।’
সেইদিন অবশ্য খুব ভাব নিয়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। আগামী ২১ মার্চ শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, এটাকে শতভাগই বলা যায়। সেই দিন তিনি আরো বলেছিলেন, ‘গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পার্বত্য এলাকায় গভীর কূপ খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেখান থেকে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে আমাদের চাহিদা বাড়ছে হাজার হাজার ঘনফুট।’
বাংলাদেশকে খাদের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে যেমন দুর্নীতিবাজেরা; তেমন তাদের পৃষ্টপোষক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে কষ্টের নদীতে ফেলে দিতে আজ থেকে ৬ মাস আগে বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তবে বর্তমান সংকট সাময়িক বলে মন্তব্য করে গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণের কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
আজ জাতির বড় বেশি প্রয়োজন ছিলো দ্রব্যমূল্য, জ¦ালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যু-পানিসহ সকল কিছুর দাম স্থিতিশীল রাখা। তা না করে বিভিন্ন অযুহাতে হাসতে হাসতে ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির কর্তা আর অন্যান্য আমলারা মিলেমিশে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রীসহ সবাই মিলে লোভাতুর হাত দিয়ে চেপে ধরেছে সাধারণ মানুষের টুটি। সেই সাথে বিভিন্ন ধরণে গল্প শোনাচ্ছেন নিজেদের মত করে। সেই গল্পের একটি অংশ তার কন্ঠ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে খুব শোনা যাচ্ছে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত। তিনি যে গল্পটা শুনিয়েছেন, তা হলো- ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রচন্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারের কিনতাম সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা বলে আসছি, প্রথম থেকেই যে আমরা তেলের দামে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। আমরা নিজেদের অর্থে দিয়ে যাচ্ছি ভর্তুকিটা। তারপরও আমার মনে হয় আমাদের একটা সময় অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে প্রাইসে।’
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব-আমলারা হয়তো ভুলে গেছে, দেশের মানুষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, বাঁচবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তারা হয়তো খেয়ালই করেনি, দেশের মানুষের একটি বড় অংশ চরম অর্থ সংকটে ভুগছে। সেই সাথে তারা হয়তো খেয়ালই করেনি যে, গণমাধ্যম বলছে- বিশ্বে অনাহারের ঝুঁকিতে ৩৪ কোটি মানুষ বিশ্বে অনাহারের ঝুঁকিতে ৩৪ কোটি মানুষ।
৬ মাস আগে শত ভাগ বিদ্যুতের গালগল্প বললেও এখন জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী খুব ভাবসাব নিয়ে বলছেন- ‘গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। আমাদের যে নিজস্ব গ্যাস আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। দুটো দিকই আছে। আমরা বাড়াচ্ছি খনিগুলো থেকে আমরা পাচ্ছি সেটা স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। আর যেটা কমছে সেটা কমছে দ্রুত গতিতে। সেটাও আমরা প্রায় ১০ বছর থেকে বলে আসছি, আস্তে আস্তে গ্যাস কিন্তু ডিকলাইনের দিকে যাবে। সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো আমরা যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতাম, যে ঘাটতিটা ছিল গ্যাসে সেটা আমরা ইমপোর্ট গ্যাস দিয়ে পূরণ করতাম। এর মধ্যে আমার দুটি ধারা, একটি হলো লংটার্ম কনট্যাক্ট, সেই প্রাইসটা ফিক্স করা। তুলনামূলক এই দামটা তেলের সঙ্গে ওঠানামা করে। আরেকটা হলো স্পট মার্কেট। এই মার্কেটের ডিমান্ড বেড়ে গেছে প্রচন্ডভাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দাম প্রচন্ডভাবে ইফেক্ট করেছে।’
এক এক সময় এক এক ধরণে গালগল্পের আসর বসায় বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপি-সচিবেরা। হয়তো সে কারণেই বাতাসে নতুন গল্প ভাসছে। শোনা যাচ্ছে- ‘ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্যাস নেয় রাশিয়া থেকে। সেটা তারা এখন বন্ধ করে দিচ্ছে বলেই সব দেশ এই গ্যাসের ওপর (স্পট মার্কেট) প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এ কারণে যেটা চার ডলারের গ্যাস সেটা ৩০ ডলার হয়ে গেছে স্পট মার্কেটে। সেটা কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি দিয়েও এটা সম্ভব হবে না, এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া।’
কিছুদিন আগেও যারা উন্নয়নের রোল মডেলের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে আর বলে বলে কান পচিয়ে ফেলতো, তারা এখন ভেজা বেড়ালের মত মিউ মিউ করছে। কারণ, তাদের কোন ধারণা যেমন নেই, নেই পরিকল্পনাও দেশকে কিভাবে সুন্দর-পরিপাটি করে চালাতে হয়। ক্ষমতা তারা রাজনীতির নামে চিনেছে ঠিকই, কিন্তু কিভাবে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার কল্যাণ করতে হয়, তা তারা জানে না। আর জানে না বলেই ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে বলে মুখে ফেনা তোলা ব্যক্তিরাও এখন নিচু মাথা করে বলতে বাধ্য হচ্ছে- ‘বর্তমান নাজুক জ্বালানি পরিস্থিতি সাময়িক। আমরা যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচন্ডভাবে চাপ তৈরি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। এর কারণে আমরা গ্যাসে সামান্য পরিমাণ মূল্য সংযোজন করেছি। এখনও আমরা তেলে করিনি। আমি আশা করব সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন আর ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক। আমাদের প্রচুর পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোতে আমরা পাওয়ার জেনারেশন কমিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রায়োরিটি দিয়েছি গ্যাসটাকে যে সার উৎপাদনে বেশি খেয়াল রাখব আর ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসটা বেশি দেব।’
একথা এখন স্পষ্ট যে, দেশে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিং আগামী অক্টোবরের আগে কমছে না। সেপ্টেম্বরের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত এবং উৎপাদন কমিয়ে আর্থিক খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার; কিন্তু তাদের সেই পদক্ষেপ কি কেবল জনগনের জন্যই! যদি তাই না হবে রাতের বেলা কেন পুলিশ হাসপাতাল, নগর ভবনসহ ৯৫ ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনর্বোডে অহেতুক লাইট জ¦ালিয়ে রাখা হয়; কেন নিজেদের বাস ভবনগুলোর চারপাশে বিদ্যুৎ অপচয় করে বিভিন্ন ধরণে সৌন্দর্যবর্ধনকারী লাইট জ¦ালিয়ে রাখা হয়? সেই সাথে যত উদ্ভট সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার। যেমন- এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোড রেশনিং, অফিস সময় কমানো, হোম অফিস, নির্ধারিত সময়ে বাজার ও বিপণিবিতান বন্ধের সিদ্ধান্ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ তিনদিন ইত্যাদি।
একজন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বলবো- বেতন কমানো প্রয়োজন সকল মন্ত্রী-এমপি-সচিব-সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। এদের মধ্যে যাদের নিজস্ব বাড়ি আছে, তাদের উপর ভ্যাট দুই গুণ বাড়িয়ে দিয়ে সেই অর্থ দেশের সংকট উত্তরণে ব্যবহারের পাশাপাশি যারা ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক তাদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ‘এক কোটি টাকা করে রাষ্ট্রিয় অনুদান আদায় কর্মসূচি’ হাতে নিতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রিয় সকল সমস্যা সমাধান হয়েও অনেক অর্থ উদ্বৃত্ত থাকবে। এমন নিবেদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে লোভি-লম্পটরা যেভাবে বাংলাদেশের বারোটা বাজাচ্ছে মন্ত্রী-এমপি-সচিব-আমলাদের চেয়ারে বসে! বেশি দিন বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ! বাঁচতে পারবো না আমরাও। কিন্তু তারা? যারা ১৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে ১৮ বছরে, তারা পারি জমাবে বাংলাদেশ ছেড়ে বিশে^র ১১ টি দেশে; সেই সকল দেশে তারা যে গড়েছে বেগম পাড়া...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি
মোমিন মেহেদী
১০ আগস্ট, ২০২২, 11:07 PM

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতিতেই বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নির্মম সিদ্ধান্ত এক এক করে চাপিয়ে দিতে উঠে পরে-আদা-জল খেয়ে নেমেছেন বলে মনে হচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছেন বিপিসির কর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ চেষ্টা। সেই হাত ধরে দেশের মানুষকে করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক চরম কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিতে কারা যেন শারীরিক-মানষিক শক্তিও প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। দেশে শক্তিশালী বর্ডার গার্ড থাকা স্বত্বেও পাচারের অযুহাত তুলে মন্ত্রী বলছেন, পাচার রোধ করার জন্য জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে তিনি বলছেন, ‘একদিনে ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি।’ সেই সাথে বলছেন- ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ হিসেবে মাসে লোকসানের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।’
আগস্ট মাসে এসে মনে পরছে গত ১৪ মার্চ-এর কথা। সেই দিন তিনি বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) ও নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘মিট দ্যা প্রেস’ এ একটা আভাস দিয়েছিলেন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির। সেই দিন লোকসান রেখে ভর্তুকি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। যদিও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে আরও বাড়লে কী হবে তা এখন বলা মুশকিল।’
সেইদিন অবশ্য খুব ভাব নিয়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। আগামী ২১ মার্চ শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, এটাকে শতভাগই বলা যায়। সেই দিন তিনি আরো বলেছিলেন, ‘গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পার্বত্য এলাকায় গভীর কূপ খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেখান থেকে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে আমাদের চাহিদা বাড়ছে হাজার হাজার ঘনফুট।’
বাংলাদেশকে খাদের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে যেমন দুর্নীতিবাজেরা; তেমন তাদের পৃষ্টপোষক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে কষ্টের নদীতে ফেলে দিতে আজ থেকে ৬ মাস আগে বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তবে বর্তমান সংকট সাময়িক বলে মন্তব্য করে গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণের কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
আজ জাতির বড় বেশি প্রয়োজন ছিলো দ্রব্যমূল্য, জ¦ালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যু-পানিসহ সকল কিছুর দাম স্থিতিশীল রাখা। তা না করে বিভিন্ন অযুহাতে হাসতে হাসতে ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফাকারী প্রতিষ্ঠান বিপিসির কর্তা আর অন্যান্য আমলারা মিলেমিশে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রীসহ সবাই মিলে লোভাতুর হাত দিয়ে চেপে ধরেছে সাধারণ মানুষের টুটি। সেই সাথে বিভিন্ন ধরণে গল্প শোনাচ্ছেন নিজেদের মত করে। সেই গল্পের একটি অংশ তার কন্ঠ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে খুব শোনা যাচ্ছে ভাঙ্গা রেকর্ডের মত। তিনি যে গল্পটা শুনিয়েছেন, তা হলো- ‘আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রচন্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারের কিনতাম সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। সেটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা বলে আসছি, প্রথম থেকেই যে আমরা তেলের দামে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। আমরা নিজেদের অর্থে দিয়ে যাচ্ছি ভর্তুকিটা। তারপরও আমার মনে হয় আমাদের একটা সময় অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে প্রাইসে।’
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব-আমলারা হয়তো ভুলে গেছে, দেশের মানুষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে, বাঁচবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তারা হয়তো খেয়ালই করেনি, দেশের মানুষের একটি বড় অংশ চরম অর্থ সংকটে ভুগছে। সেই সাথে তারা হয়তো খেয়ালই করেনি যে, গণমাধ্যম বলছে- বিশ্বে অনাহারের ঝুঁকিতে ৩৪ কোটি মানুষ বিশ্বে অনাহারের ঝুঁকিতে ৩৪ কোটি মানুষ।
৬ মাস আগে শত ভাগ বিদ্যুতের গালগল্প বললেও এখন জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী খুব ভাবসাব নিয়ে বলছেন- ‘গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। আমাদের যে নিজস্ব গ্যাস আমরা দিন দিন বাড়াচ্ছি, আবার দিন দিন কমছেও। দুটো দিকই আছে। আমরা বাড়াচ্ছি খনিগুলো থেকে আমরা পাচ্ছি সেটা স্বল্প পরিমাণে পাচ্ছি। আর যেটা কমছে সেটা কমছে দ্রুত গতিতে। সেটাও আমরা প্রায় ১০ বছর থেকে বলে আসছি, আস্তে আস্তে গ্যাস কিন্তু ডিকলাইনের দিকে যাবে। সেটা বড় কথা না, বড় কথা হলো আমরা যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতাম, যে ঘাটতিটা ছিল গ্যাসে সেটা আমরা ইমপোর্ট গ্যাস দিয়ে পূরণ করতাম। এর মধ্যে আমার দুটি ধারা, একটি হলো লংটার্ম কনট্যাক্ট, সেই প্রাইসটা ফিক্স করা। তুলনামূলক এই দামটা তেলের সঙ্গে ওঠানামা করে। আরেকটা হলো স্পট মার্কেট। এই মার্কেটের ডিমান্ড বেড়ে গেছে প্রচন্ডভাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দাম প্রচন্ডভাবে ইফেক্ট করেছে।’
এক এক সময় এক এক ধরণে গালগল্পের আসর বসায় বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপি-সচিবেরা। হয়তো সে কারণেই বাতাসে নতুন গল্প ভাসছে। শোনা যাচ্ছে- ‘ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্যাস নেয় রাশিয়া থেকে। সেটা তারা এখন বন্ধ করে দিচ্ছে বলেই সব দেশ এই গ্যাসের ওপর (স্পট মার্কেট) প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এ কারণে যেটা চার ডলারের গ্যাস সেটা ৩০ ডলার হয়ে গেছে স্পট মার্কেটে। সেটা কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারি ভর্তুকি দিয়েও এটা সম্ভব হবে না, এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া।’
কিছুদিন আগেও যারা উন্নয়নের রোল মডেলের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে আর বলে বলে কান পচিয়ে ফেলতো, তারা এখন ভেজা বেড়ালের মত মিউ মিউ করছে। কারণ, তাদের কোন ধারণা যেমন নেই, নেই পরিকল্পনাও দেশকে কিভাবে সুন্দর-পরিপাটি করে চালাতে হয়। ক্ষমতা তারা রাজনীতির নামে চিনেছে ঠিকই, কিন্তু কিভাবে ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার কল্যাণ করতে হয়, তা তারা জানে না। আর জানে না বলেই ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে বলে মুখে ফেনা তোলা ব্যক্তিরাও এখন নিচু মাথা করে বলতে বাধ্য হচ্ছে- ‘বর্তমান নাজুক জ্বালানি পরিস্থিতি সাময়িক। আমরা যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচন্ডভাবে চাপ তৈরি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। এর কারণে আমরা গ্যাসে সামান্য পরিমাণ মূল্য সংযোজন করেছি। এখনও আমরা তেলে করিনি। আমি আশা করব সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন আর ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক। আমাদের প্রচুর পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোতে আমরা পাওয়ার জেনারেশন কমিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রায়োরিটি দিয়েছি গ্যাসটাকে যে সার উৎপাদনে বেশি খেয়াল রাখব আর ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসটা বেশি দেব।’
একথা এখন স্পষ্ট যে, দেশে চলমান বিদ্যুতের লোডশেডিং আগামী অক্টোবরের আগে কমছে না। সেপ্টেম্বরের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত এবং উৎপাদন কমিয়ে আর্থিক খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার; কিন্তু তাদের সেই পদক্ষেপ কি কেবল জনগনের জন্যই! যদি তাই না হবে রাতের বেলা কেন পুলিশ হাসপাতাল, নগর ভবনসহ ৯৫ ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনর্বোডে অহেতুক লাইট জ¦ালিয়ে রাখা হয়; কেন নিজেদের বাস ভবনগুলোর চারপাশে বিদ্যুৎ অপচয় করে বিভিন্ন ধরণে সৌন্দর্যবর্ধনকারী লাইট জ¦ালিয়ে রাখা হয়? সেই সাথে যত উদ্ভট সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার। যেমন- এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোড রেশনিং, অফিস সময় কমানো, হোম অফিস, নির্ধারিত সময়ে বাজার ও বিপণিবিতান বন্ধের সিদ্ধান্ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে ৩ তিনদিন ইত্যাদি।
একজন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বলবো- বেতন কমানো প্রয়োজন সকল মন্ত্রী-এমপি-সচিব-সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। এদের মধ্যে যাদের নিজস্ব বাড়ি আছে, তাদের উপর ভ্যাট দুই গুণ বাড়িয়ে দিয়ে সেই অর্থ দেশের সংকট উত্তরণে ব্যবহারের পাশাপাশি যারা ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক তাদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ‘এক কোটি টাকা করে রাষ্ট্রিয় অনুদান আদায় কর্মসূচি’ হাতে নিতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রিয় সকল সমস্যা সমাধান হয়েও অনেক অর্থ উদ্বৃত্ত থাকবে। এমন নিবেদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে লোভি-লম্পটরা যেভাবে বাংলাদেশের বারোটা বাজাচ্ছে মন্ত্রী-এমপি-সচিব-আমলাদের চেয়ারে বসে! বেশি দিন বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ! বাঁচতে পারবো না আমরাও। কিন্তু তারা? যারা ১৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে ১৮ বছরে, তারা পারি জমাবে বাংলাদেশ ছেড়ে বিশে^র ১১ টি দেশে; সেই সকল দেশে তারা যে গড়েছে বেগম পাড়া...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি