শিরোনামঃ
ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

১৫ আগস্ট: বঙ্গবন্ধু ও সম্ভাবনাময়ী বাঙালির স্বপ্নের অকাল মৃত্যু

#
news image

বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের সমস্ত জলরাশি দিয়ে কালো আগস্টের লাল রক্ত ধুয়ে মুছে সাফ করা যাবে না, বরং বঙ্গবন্ধুর রক্ত লেগে রাঙ্গা হবে বঙ্গোপসাগরের নীল জল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে দিকে দিকে যখন আযানের পবিত্র ধ্বনি ভেসে উঠে - ঠিক তখনই একাত্তরের পরাজিত শক্তি, কতিপয় দেশদ্রোহী সেনা ও বেঈমান রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাঙালির উপনিবেশ মুক্তির রূপকার এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে (বিদেশে অবস্থানরত দুই কন্যা ব্যতীত) নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যাকান্ড এবং তাঁর উপর অর্পিত অমানবিক জেল-জুলুম-নির্যাতন ষড়যন্ত্রের এক ও অভিন্ন পরিক্রমা। এটা প্রমানিত হয় যখন দেখি যে, পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের মধ্যে ১২ বছরের বেশি সময় বঙ্গবন্ধুকে কারা প্রাচীরের অন্তরালে আটকে রাখা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারহীনতার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ওহফবসহরঃু ঙৎফরহধহপব জারি করে বিচার প্রক্রিয়া স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল .
মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে ভার স্বাকৃতির দাবি, ১৯৫৪ সালের পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা- পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার দাবি, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন মিলে ১৯৬০-এর দশকের পূর্ব বাংলা হয়ে উঠেছিল একক নেতার নেতৃত্ব আর জনতার আশ্চর্য যোগে উত্তাল আন্দোলনের পর আন্দোলন পেরিয়ে এ ভূখন্ডের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপাত্ত আহ্বানে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘটে বাংলাদেশের অসুদয়।১৯৪৮ সাল থেকেই জাতীয়তাবাদী সব আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জড়িত ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে তিনি জনগণের সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংহত করেন এবং বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজন অনমনীয় নেতা হিসেবে জনমনে স্থান করে নেন। ১৯৬০-এর দশকে যখন তিনি ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, তখন থেকেই বাঙালি জাঁতি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এ সময়ে তিনি বুঝতে পারলেন মুসলিম লীগের এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত বিরোধী দল গড়ে তুলতে হবে সেই বোধ থেকেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু প্রথমে দলের যুগ্ম সম্পাদক, পরে ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সভাপতি হন। ১৯৬৯-৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 
'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ' স্লোগানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে বাঙালির আলাদা রাষ্ট্র ও জাতিসত্ত্বা গঠনের প্রত্যয় গড়ে ওঠে। তাঁর নেতৃত্বে জনগণের আস্থা ছিল বলেই আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব ম্যান্ডেট পায়।১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব ও তার সহযোগীদের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল সমাবেশে ছাত্রজনতারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানায়। সেই সভায় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করার মাধ্যমে জাতির জনক এবং বঙ্গবন্ধু'র মতো দুর্দান্ত উপাধি যুক্ত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে। বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রতিটি ধাপে অনন্য অবদানের কারণে এসব উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন শেখ মুজিব।আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছি ১৯৭১ সালে। লাখ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল। কিন্তু সমগ্র জাঁতি স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছিল অবিচল। এই ঐক্য সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। 
বঙ্গবন্ধু ছিলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, যিনি তাঁর ৭ মার্চের কাব্যিক ও সম্মোহনী ভাষণের মাধ্যমে সারা বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কয়েক হাজার বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মূলত পূর্ববঙ্গের জনগণকে শোষণ করার জন্য এবং তাদের স্বাধীনতার অধিকারকে অস্বীকার করার কৌশল হিসাবে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে রেডিওতে লিখিত বার্তা প্রেরণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর অভূতপূর্ব জনসমর্থন ও তাঁর নেতৃত্ব আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে বৈধতা দিয়েছিল। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধও হয়েছিল তাঁর নামেই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাঁতি অর্জন করে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও তার নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করেছিল। দেশে-বিদেশে সবাই মাত্র একজন নেতাকেই চিনতেন-তিনি বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী পদক্ষেপে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে থাকে। দীর্ঘদিনের শোষিত-বঞ্চিত এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলার মানুষ। এই সময়ও তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হন। সব ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। জাতির সামনে আসে ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট (২৯ শ্রাবণ, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ) স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যদের ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। বিশ্ব ও মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তারা হত্যা করে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যিনি বঙ্গবন্ধুর কারাবাসকালে সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নীরবে কাজ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। 
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবনেতা, ও সাংবাদিকও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
সেদিন শিশু রাসেলের আর্তচিৎকারে খোদার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি খুনী পাষাণদের মন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মত এই নিষ্পাপ শিশুকেও পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট ঠান্ডা মাথায়খুন করা হয়েছিল। পঁচাত্তরের আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অক্ষর প্লাবনে। একটি সদ্য স্বাধীন ও জাতির অগ্রযাত্রাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। ৭১ এ পাকিস্তানি হায়েনারা যা করতে সাহস পায়নি, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ট ঘাতকেরা। সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়দর ওই হত্যাকান্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার জারি করে কুখ্যাত "ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিলো চক্রান্তকারীদের সুপরিকল্পিত হত্যা চক্রান্ত। তাতে বিদেশি চক্রান্তকারীরাও যুক্ত ছিলো এবং এই চক্রান্ত্রের আসল লক্ষ্য ছিলো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার পরিবর্তন নয়, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল নায়কদের হত্যা এবং স্বাধীনতার মৌলিক চরিত্র এবং বাঙালির স্বপ্নকে এসে করে একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। 
১৯৬৯-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কৃতভাম্বরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাবো। তিনি কিন্তু একা রক্ত দেননি, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। 
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি- ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে পদদলিত করে উল্টো পথে সেই পাকিস্তানি ভাবধারার দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যায়। আবারও বাঙালির ঘাড়ে ছেঁকে বসে সামরিক স্বৈরশাসন। জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশে সামরিক অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান, হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। একের পর এক সামরিক স্বৈরশাসনের পালা বদল হতে থাকে। সেইসঙ্গে সামরিক স্বৈরশাসকদের ছত্রছায়ায় দেশে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত গোষ্ঠী, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীরা।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাঙালি জাতির জীবনে আসে সেই কাঙ্খিত শুভক্ষণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি দশম এবং সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় বারের মতো জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন জাতির পিতার জেষ্ঠ্য কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্নকে ধংস করা হয়েছিল সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবে রুপ নিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদুঢ়প্রসারি নেতৃত্বে আজ উন্নত বিশ্বের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব আজ করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও এই পরিস্থিতির শিকার। তবে দুর্যোগের মধ্যেও আমাদের ভরসার জায়গা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে আমরা করোনা মহামারী যথেষ্ঠ সক্ষমতার সাথে মোকাবেলা করছি দেশের অনৈতিক পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে চলেছে। 
আশা করি সরকারের জনবান্ধ পদক্ষেপের কারণে আমরা সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর সাধারণ মানুষের সেই ভরসা আছে। ১৯৭৪ সালের বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শেষ বিজয় দিবসের ভাষণে বলেছিলেন- "চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও আত্মপ্রবনতার উর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে"। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে, তাঁর স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্যেই বিধৃত হয়ে আছে। তাঁর স্বপ্নের কথা, প্রত্যাশার কথা কারো অজানা নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা সমুন্নত রাখতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রতিষ্ঠান, বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তিনি অমর, অবিনশ্বর ও মৃত্যুঞ্জয়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মাঝে চির জাগ্রত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। 
দুঃখের বিষয় হলো- এখনো বঙ্গবন্ধুর মতো ক্ষণজনা মহাপুরুষের অবস্থান বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক লীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে আমরা নিয়ে যেতে পারিনি। মহৎ মানুষের জীবনের উপর কালিমা লেপনে তাঁদের যত ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় দেশের জনগণ, ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা দেশের ভবিষ্যতের। বঙ্গবন্ধু ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সারাজীবন বঞ্চিত, নিপীড়িত, অধিকারহারা ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ থেকে আমাদের বিচ্যুতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কিংবা দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকাকে ক্ষুন্ন করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে আমাদের উচিত এই মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। বাঙালির আত্মশক্তির প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে ক্রমাগত কারাগারে নিক্ষেপকারীদের অস্তিম প্রয়াস ও ষড়যন্ত্র হলো ১৫ আগস্ট। মানব সভ্যতার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কাপুরোষোচিত ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডটি ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঐ দিন নিষ্পাপ শিশু রাসেলসহ মৃত্যুহীন বজ্রকণ্ঠ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো না যে, ইতিহাস নির্মাণের কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তার আদর্শ ও দেশপ্রেম প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ও নিঃশ্বাসে চির বহমান।
 
লেখক:- কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী ও বঙ্গবন্ধু গবেষক

আতিক আজিজ

১৫ আগস্ট, ২০২২,  12:24 AM

news image

বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের সমস্ত জলরাশি দিয়ে কালো আগস্টের লাল রক্ত ধুয়ে মুছে সাফ করা যাবে না, বরং বঙ্গবন্ধুর রক্ত লেগে রাঙ্গা হবে বঙ্গোপসাগরের নীল জল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে দিকে দিকে যখন আযানের পবিত্র ধ্বনি ভেসে উঠে - ঠিক তখনই একাত্তরের পরাজিত শক্তি, কতিপয় দেশদ্রোহী সেনা ও বেঈমান রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রের ফলে বাঙালির উপনিবেশ মুক্তির রূপকার এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে (বিদেশে অবস্থানরত দুই কন্যা ব্যতীত) নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যাকান্ড এবং তাঁর উপর অর্পিত অমানবিক জেল-জুলুম-নির্যাতন ষড়যন্ত্রের এক ও অভিন্ন পরিক্রমা। এটা প্রমানিত হয় যখন দেখি যে, পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের মধ্যে ১২ বছরের বেশি সময় বঙ্গবন্ধুকে কারা প্রাচীরের অন্তরালে আটকে রাখা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারহীনতার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ওহফবসহরঃু ঙৎফরহধহপব জারি করে বিচার প্রক্রিয়া স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল .
মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে ভার স্বাকৃতির দাবি, ১৯৫৪ সালের পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা- পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার দাবি, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন মিলে ১৯৬০-এর দশকের পূর্ব বাংলা হয়ে উঠেছিল একক নেতার নেতৃত্ব আর জনতার আশ্চর্য যোগে উত্তাল আন্দোলনের পর আন্দোলন পেরিয়ে এ ভূখন্ডের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপাত্ত আহ্বানে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘটে বাংলাদেশের অসুদয়।১৯৪৮ সাল থেকেই জাতীয়তাবাদী সব আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জড়িত ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে তিনি জনগণের সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংহত করেন এবং বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একজন অনমনীয় নেতা হিসেবে জনমনে স্থান করে নেন। ১৯৬০-এর দশকে যখন তিনি ছয় দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, তখন থেকেই বাঙালি জাঁতি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এ সময়ে তিনি বুঝতে পারলেন মুসলিম লীগের এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত বিরোধী দল গড়ে তুলতে হবে সেই বোধ থেকেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু প্রথমে দলের যুগ্ম সম্পাদক, পরে ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সভাপতি হন। ১৯৬৯-৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 
'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ' স্লোগানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে বাঙালির আলাদা রাষ্ট্র ও জাতিসত্ত্বা গঠনের প্রত্যয় গড়ে ওঠে। তাঁর নেতৃত্বে জনগণের আস্থা ছিল বলেই আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব ম্যান্ডেট পায়।১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব ও তার সহযোগীদের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল সমাবেশে ছাত্রজনতারা বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানায়। সেই সভায় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করার মাধ্যমে জাতির জনক এবং বঙ্গবন্ধু'র মতো দুর্দান্ত উপাধি যুক্ত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে। বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রতিটি ধাপে অনন্য অবদানের কারণে এসব উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন শেখ মুজিব।আমরা আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছি ১৯৭১ সালে। লাখ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিল। কিন্তু সমগ্র জাঁতি স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছিল অবিচল। এই ঐক্য সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। 
বঙ্গবন্ধু ছিলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, যিনি তাঁর ৭ মার্চের কাব্যিক ও সম্মোহনী ভাষণের মাধ্যমে সারা বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কয়েক হাজার বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মূলত পূর্ববঙ্গের জনগণকে শোষণ করার জন্য এবং তাদের স্বাধীনতার অধিকারকে অস্বীকার করার কৌশল হিসাবে এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে রেডিওতে লিখিত বার্তা প্রেরণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর অভূতপূর্ব জনসমর্থন ও তাঁর নেতৃত্ব আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে বৈধতা দিয়েছিল। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধও হয়েছিল তাঁর নামেই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। 
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাঁতি অর্জন করে কাঙ্খিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও তার নির্দেশনা মেনে বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ করেছিল। দেশে-বিদেশে সবাই মাত্র একজন নেতাকেই চিনতেন-তিনি বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী পদক্ষেপে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে থাকে। দীর্ঘদিনের শোষিত-বঞ্চিত এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলার মানুষ। এই সময়ও তিনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হন। সব ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। জাতির সামনে আসে ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট (২৯ শ্রাবণ, ১৩৮২ বঙ্গাব্দ) স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী সদস্যদের ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। বিশ্ব ও মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তারা হত্যা করে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান আবহমান বাংলা ও বাঙালির আরাধ্য পুরুষ স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পঁচাত্তরের কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যিনি বঙ্গবন্ধুর কারাবাসকালে সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নীরবে কাজ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। 
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবনেতা, ও সাংবাদিকও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
সেদিন শিশু রাসেলের আর্তচিৎকারে খোদার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি খুনী পাষাণদের মন। বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মত এই নিষ্পাপ শিশুকেও পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট ঠান্ডা মাথায়খুন করা হয়েছিল। পঁচাত্তরের আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অক্ষর প্লাবনে। একটি সদ্য স্বাধীন ও জাতির অগ্রযাত্রাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া। ৭১ এ পাকিস্তানি হায়েনারা যা করতে সাহস পায়নি, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ট ঘাতকেরা। সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়দর ওই হত্যাকান্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার জারি করে কুখ্যাত "ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিলো চক্রান্তকারীদের সুপরিকল্পিত হত্যা চক্রান্ত। তাতে বিদেশি চক্রান্তকারীরাও যুক্ত ছিলো এবং এই চক্রান্ত্রের আসল লক্ষ্য ছিলো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার পরিবর্তন নয়, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল নায়কদের হত্যা এবং স্বাধীনতার মৌলিক চরিত্র এবং বাঙালির স্বপ্নকে এসে করে একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। 
১৯৬৯-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর স্বভাবসুলভ কণ্ঠে কৃতভাম্বরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভাইয়েরা আমার, তোমরা যারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছো, যদি কোনদিন পারি নিজের রক্ত দিয়ে আমি সেই রক্তের ঋণ শোধ করে যাবো। তিনি কিন্তু একা রক্ত দেননি, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির রক্তের ঋণ তিনি শোধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। 
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি- ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে পদদলিত করে উল্টো পথে সেই পাকিস্তানি ভাবধারার দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে যায়। আবারও বাঙালির ঘাড়ে ছেঁকে বসে সামরিক স্বৈরশাসন। জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশে সামরিক অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান, হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। একের পর এক সামরিক স্বৈরশাসনের পালা বদল হতে থাকে। সেইসঙ্গে সামরিক স্বৈরশাসকদের ছত্রছায়ায় দেশে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত গোষ্ঠী, উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীরা।
অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বাঙালি জাতির জীবনে আসে সেই কাঙ্খিত শুভক্ষণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারি দশম এবং সবশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় বারের মতো জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন জাতির পিতার জেষ্ঠ্য কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্নকে ধংস করা হয়েছিল সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন আজ মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবে রুপ নিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদুঢ়প্রসারি নেতৃত্বে আজ উন্নত বিশ্বের সাথে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব আজ করোনা মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও এই পরিস্থিতির শিকার। তবে দুর্যোগের মধ্যেও আমাদের ভরসার জায়গা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে আমরা করোনা মহামারী যথেষ্ঠ সক্ষমতার সাথে মোকাবেলা করছি দেশের অনৈতিক পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে চলেছে। 
আশা করি সরকারের জনবান্ধ পদক্ষেপের কারণে আমরা সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর সাধারণ মানুষের সেই ভরসা আছে। ১৯৭৪ সালের বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শেষ বিজয় দিবসের ভাষণে বলেছিলেন- "চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এ অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কিনা সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও আত্মপ্রবনতার উর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম এবং আত্মশুদ্ধি করতে হবে"। আজ বঙ্গবন্ধু নেই। কিন্তু তার আদর্শ আছে, তাঁর স্বপ্ন-প্রত্যাশা আছে, আছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্যেই বিধৃত হয়ে আছে। তাঁর স্বপ্নের কথা, প্রত্যাশার কথা কারো অজানা নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা সমুন্নত রাখতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রতিষ্ঠান, বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। তিনি অমর, অবিনশ্বর ও মৃত্যুঞ্জয়ী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ভাষা, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মাঝে চির জাগ্রত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। 
দুঃখের বিষয় হলো- এখনো বঙ্গবন্ধুর মতো ক্ষণজনা মহাপুরুষের অবস্থান বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক লীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে আমরা নিয়ে যেতে পারিনি। মহৎ মানুষের জীবনের উপর কালিমা লেপনে তাঁদের যত ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় দেশের জনগণ, ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা দেশের ভবিষ্যতের। বঙ্গবন্ধু ত্যাগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সারাজীবন বঞ্চিত, নিপীড়িত, অধিকারহারা ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ থেকে আমাদের বিচ্যুতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কিংবা দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকাকে ক্ষুন্ন করে। রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে আমাদের উচিত এই মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। বাঙালির আত্মশক্তির প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে ক্রমাগত কারাগারে নিক্ষেপকারীদের অস্তিম প্রয়াস ও ষড়যন্ত্র হলো ১৫ আগস্ট। মানব সভ্যতার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কাপুরোষোচিত ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডটি ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ঐ দিন নিষ্পাপ শিশু রাসেলসহ মৃত্যুহীন বজ্রকণ্ঠ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা জানতো না যে, ইতিহাস নির্মাণের কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তার আদর্শ ও দেশপ্রেম প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ও নিঃশ্বাসে চির বহমান।
 
লেখক:- কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী ও বঙ্গবন্ধু গবেষক