শিরোনামঃ
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ যশোর, বাগেরহাট ও নড়াইলের ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তিন নেতা ইডিসিএল গিলে খাচ্ছে জগলুল জুড়ীতে ভূয়া রশিদ দিয়ে কুরবানীর পশু বিক্রির অভিযোগ মোমিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ করায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের বিক্ষোভ মিছিল বর্হিবিশ্বে লন্ডনে স্হাপিত জাতির পিতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ সামন্তলাল সেন সহকর্মীর শ্লীলতাহানীর পরও বহাল তবিয়তে এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী আশরাফ বিটিএ’র পক্ষ থেকে নব নিযুক্ত পরিচালককে অভিনন্দন বিকাশ দেওয়ান ছিলেন একজন সফল এমডি

১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলার বিচারে আইনি কোনো বাধা নেই

#
news image

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে হাইকোর্ট বিভাগ।
ফলে ৪৭ বছর আগে সংগঠিত হত্যার ঘটনায় আনা মামলার বিচার কার্যে এখন আর কোনো আইনগত বাধা রইল না।
বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান আদালতের আদেশের বিষয়টি বাসসকে জানান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতু), সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান ও কাজী সামসুন নাহার।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চারজন কর্মকর্তা যখন অফিসে গেলেন তখন সেখানে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা ছিলেন এবং বিটিভির কিছু কর্মকর্তা এই চারজনকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে। এভাবে যখন তাদেরকে আটকে রাখে তখন তাদের পরিবারের লোকেরা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তারা জানায়। কিন্তু তারা তাদেরকে ছাড়েনি। পরে ওই দিনই তাদেরকে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়।  এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেলিভিশনের পাশের খালে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরে তাদের পরনের কাপড় চোপড় দেখে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করে। এরপর মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়।  এরপর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তখন নিখোঁজের একজনের পরিবারের সদস্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবার সিআইডির কাছে পাঠায়। সিআইডি তখন পুন:তদন্তের জন্য আবেদন জানায়। তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে পুন:তদন্ত করে চার্জশীট দেয়। চার্জশীটে চারজনকে আসামি করা হয়। সেই সময়ে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়।
কিন্তু এরমধ্যে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। সেই থেকে মামলাটি স্থগিত ছিল। আজকে সেই স্থগিতাদেশসহ জারি করা রুল খারিজ (ডিসচার্জ) করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে এখন মামলাটি চলবে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রেডিও ও টিভি স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আন্দোলন চলছিল। রামপুরা টিভি ভবনে নিয়োজিত অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের সমঝোতা হয়। ৬ নভেম্বর রাতে আলতাফসহ আসামিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আটক করে দাবি আদায় করা হবে। পরদিন সকালে মনিরুল, আকমল ও সিদ্দিক ফটকে এলে তাদের বিটিভির ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে ক্যামেরাম্যান ফিরোজকেও আটক করে তারা। পরদিন রাতে তিনজনকে রামপুরা টিভি ভবনের পেছনে নিয়ে হত্যা করে হাতিরঝিলে লাশ ফেলে দেয়া হয়। চার কর্মকর্তার খোঁজ না পেয়ে ১৯ নভেম্বর তাদের স্ত্রীরা গুলশান থানায় চারটি অপহরণ মামলা করেন।
হাতিরঝিলের পানি শুকিয়ে গেলে ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনটি কংকাল পাওয়া যায়। ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো কাইয়ুম, সিদ্দিক ও আকমলের বলে চিহ্নিত হয়। কিন্তু মনিরুলের খোঁজ মেলেনি। ১৯৭৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আটকে যায় হত্যাকান্ডের বিচার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আকমলের স্ত্রী মনোয়ারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন।
১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালে অভিযোগপত্র দেন। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত হন।
২০০২ সালে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। পরের বছর ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিরা হলেন- একেএম জাকারিয়া হায়দার, আবুল কাশেম, সৈয়দ আইনুল কবীর, আয়নুজ্জামান এবং সাহজাহান মিয়াজী, আবুল কাশেম বাগোজা, লুৎফর রহমান তালুকদার, আলতাফ হোসেন ও আবদুল আউয়াল সরকার। আসামি আলতাফ ২০০৪ সালে হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে আটকে আছে বিচার।
আসামিদের মধ্যে আয়নুজ্জামান ২০০৪ সালে মারা যান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও ৩ জন মারা যান। দুই আসামি পলাতক রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ আগস্ট, ২০২২,  9:31 PM

news image

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চার কর্মকর্তাকে হত্যা মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে হাইকোর্ট বিভাগ।
ফলে ৪৭ বছর আগে সংগঠিত হত্যার ঘটনায় আনা মামলার বিচার কার্যে এখন আর কোনো আইনগত বাধা রইল না।
বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান আদালতের আদেশের বিষয়টি বাসসকে জানান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতু), সহকারি এটর্নি জেনারেল শামীম খান ও কাজী সামসুন নাহার।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিটিভির চারজন কর্মকর্তা যখন অফিসে গেলেন তখন সেখানে সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা ছিলেন এবং বিটিভির কিছু কর্মকর্তা এই চারজনকে একটা রুমে নিয়ে আটকে রাখে। এভাবে যখন তাদেরকে আটকে রাখে তখন তাদের পরিবারের লোকেরা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে বলে তারা জানায়। কিন্তু তারা তাদেরকে ছাড়েনি। পরে ওই দিনই তাদেরকে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যায়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়।  এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে টেলিভিশনের পাশের খালে তাদের লাশ ভেসে উঠে। পরে তাদের পরনের কাপড় চোপড় দেখে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই রিপোর্ট আদালত গ্রহণ করে। এরপর মামলাটি বন্ধ হয়ে যায়।  এরপর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে তখন নিখোঁজের একজনের পরিবারের সদস্য ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবার সিআইডির কাছে পাঠায়। সিআইডি তখন পুন:তদন্তের জন্য আবেদন জানায়। তখন আদালতের অনুমতি নিয়ে পুন:তদন্ত করে চার্জশীট দেয়। চার্জশীটে চারজনকে আসামি করা হয়। সেই সময়ে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নেয়া হয়।
কিন্তু এরমধ্যে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। সেই থেকে মামলাটি স্থগিত ছিল। আজকে সেই স্থগিতাদেশসহ জারি করা রুল খারিজ (ডিসচার্জ) করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে এখন মামলাটি চলবে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রেডিও ও টিভি স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভির তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আন্দোলন চলছিল। রামপুরা টিভি ভবনে নিয়োজিত অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের সমঝোতা হয়। ৬ নভেম্বর রাতে আলতাফসহ আসামিদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আটক করে দাবি আদায় করা হবে। পরদিন সকালে মনিরুল, আকমল ও সিদ্দিক ফটকে এলে তাদের বিটিভির ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে ক্যামেরাম্যান ফিরোজকেও আটক করে তারা। পরদিন রাতে তিনজনকে রামপুরা টিভি ভবনের পেছনে নিয়ে হত্যা করে হাতিরঝিলে লাশ ফেলে দেয়া হয়। চার কর্মকর্তার খোঁজ না পেয়ে ১৯ নভেম্বর তাদের স্ত্রীরা গুলশান থানায় চারটি অপহরণ মামলা করেন।
হাতিরঝিলের পানি শুকিয়ে গেলে ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনটি কংকাল পাওয়া যায়। ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো কাইয়ুম, সিদ্দিক ও আকমলের বলে চিহ্নিত হয়। কিন্তু মনিরুলের খোঁজ মেলেনি। ১৯৭৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে আটকে যায় হত্যাকান্ডের বিচার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আকমলের স্ত্রী মনোয়ারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন।
১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল করিম খান ১৯৯৯ সালে অভিযোগপত্র দেন। অভিযুক্তরা গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত হন।
২০০২ সালে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। পরের বছর ৯ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামিরা হলেন- একেএম জাকারিয়া হায়দার, আবুল কাশেম, সৈয়দ আইনুল কবীর, আয়নুজ্জামান এবং সাহজাহান মিয়াজী, আবুল কাশেম বাগোজা, লুৎফর রহমান তালুকদার, আলতাফ হোসেন ও আবদুল আউয়াল সরকার। আসামি আলতাফ ২০০৪ সালে হাইকোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এরপর থেকে আটকে আছে বিচার।
আসামিদের মধ্যে আয়নুজ্জামান ২০০৪ সালে মারা যান। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরও ৩ জন মারা যান। দুই আসামি পলাতক রয়েছে।