এমানুয়েল ম্যাক্রো দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত

প্রভাতী খবর ডেস্ক:
২৫ এপ্রিল, ২০২২, 8:24 PM

এমানুয়েল ম্যাক্রো দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ম্যাক্রো। প্রথামিকভাবে যে সরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে এমানুয়েল ম্যাক্রো পেয়েছেন ৫৮.৫% ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মারিন ল্য পেন পেয়েছেন ৪১.৫% ভোট। পেনকে বিপুল ব্যবধানে হারাবার পর আইফেল টাওয়ারের সামনে তার দলের সমর্থকদের কাছে ম্যাক্রো বলেছেন, তিনি সকলের প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন।
সেই ২০০২-এর পর থেকে ফ্রান্সে কেউ পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারেননি। ২০১৭ সালেও তিনি পেনকে হারিয়েছিলেন এবং সেবার ম্যাক্রো ৬৬% ভোট পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় এবার কিছুটা কম ভোট পেয়েছেন ম্যাক্রো।
প্রথম দফার নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিলেন বামপন্থি প্রার্থী জ লুক মেলাস। ফলে মেলাসর ভোট কোন দিকে যাবে তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে যে, ম্যাক্রো আগেরবারের তুলনায় কম ভোট পেলেও তাকে পেন ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলতে পারেননি।
এদফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ম্যাক্রো বেশ কিছু কৌশল গ্রহন করেন। ভোটের প্রচারণার সময় ম্যাক্রো নিজেকে ইউরোপের সংহতির জন্য বড় শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোভিড ১৯ ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রসঙ্গ ও দুই ক্ষেত্রে তার ভূমিকার কথা বলেছেন।
ভোটের আগে ফ্রান্সের পেনশন ব্যবস্থাকে লঘু করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন ম্যাক্রো। কারণ, তিনি বামপন্থিদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ম্যাক্রোর প্রথম পাঁচ বছরের শাসনে প্রচুর উত্থান-পতন হয়েছে। ইয়েলো-ভেস্ট মুভমেন্ট হয়েছে। তার ব্যবসায়ী-পন্থি নীতি ও বড়লোকদের কর কম করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।
তবে প্রথম পর্বের ভোটে পেনের তুলনায় পাঁচ পার্সেন্টেজ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ম্যাক্রো। এরপর ম্যাক্রো বেশ কয়েকটি প্রধান সংবাদপত্রের সমর্থন পান। বেশ কিছু রিপোর্টে লেখা হয়, পেন ক্ষমতায় এলে তা জাতীয় সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে এবং তখন ফ্রান্সের উপর থেকে বিদেশের ভরসা কমে যাবে।
জয়ের পর ম্যাক্রো বলেছেন, পেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই ছিল খুবই তিক্ত। এখন সেই তিক্ততা কাটিয়ে ওঠার কথা বলেছেন তিনি। তিনি তার সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ সমাজের জন্য তিনি কাজ করবেন।
ল্য পেন ব্যর্থ হলেন কেন ?
ল্য পেন জিতলে ইউরোপর রাজনীতিতে এক বিশাল বদল ঘটতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ল্য পেনের দলের বিরুদ্ধে বারবার বর্ণবাদীতার অভিযোগ উঠেছিল। তবে গত কয়েক মাস প্রচারের সময় তিনি তার দলের কয়েকটি মতামত থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন। বিশেষ করে অভিবাসন নিয়ে সুর কিছুটা হলেও নরম করেছিলেন।
ল্য পেন চিরাচরিত ফরাসি আইডেন্টিটি বজায় রাখার কথা বলেছেন এবং জীবনধারণের খরচ কম করার কথা বলেছেন। তিনি ইইউ নিয়ে তার সুর নরম করেছিলেন এবং ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা বলেননি। কিন্তু রশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা করে, তখন তিনি ন্যাটোর সমালোচনা করেছিলেন। এর ফলে তিনি কিছু ভোট হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছি। তবে এই অভিযোগ ল্য পেন অস্বীকার করেছেন।
ফলাফল প্রকাশের পর প্যারিসে ল্য পেন তার সমর্থকদের বলেছেন, তিনি ফ্রান্সের জন্য, ফরাসি নাগরিকদের জন্য কাজ করে যাবেন।
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি বারবারা ওয়েসেল প্যারিসে ল্য পেনের নির্বাচনী সদর দপ্তর থেকে জানান, পেনের কোনো স্বাভাবিক উত্তরসূরি নেই। পুরো প্রচারটাই ছিল পেনকে ঘিরে। ফলে ল্য পেনের পর কে দলের হাল ধরবেন, তা ঠিক করতে দলের কিছুটা সময় লাগবে।
ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসসহ ইউরোপের বেশ কিছু নেতা ভোটের ফল প্রকাশের পরই ম্যাক্রোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শলৎস তার বার্তায় বলেছেন, “ম্যাক্রোর সমর্থকরা শক্তিশালী ইউরোপের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন। ম্যাক্রো আমাদের সহযোগিতা পাবেন।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ফরাসিতে টুইট করে বলেছেন, “একসঙ্গে আমরা ফ্রান্স ও ইউরোপকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ম্যাক্রোকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “ফ্রান্স হলো ব্রিটেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। দুই দেশ ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একযোগে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।”
প্র.খ/বিপ্লব
প্রভাতী খবর ডেস্ক:
২৫ এপ্রিল, ২০২২, 8:24 PM

দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ম্যাক্রো। প্রথামিকভাবে যে সরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে এমানুয়েল ম্যাক্রো পেয়েছেন ৫৮.৫% ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মারিন ল্য পেন পেয়েছেন ৪১.৫% ভোট। পেনকে বিপুল ব্যবধানে হারাবার পর আইফেল টাওয়ারের সামনে তার দলের সমর্থকদের কাছে ম্যাক্রো বলেছেন, তিনি সকলের প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন।
সেই ২০০২-এর পর থেকে ফ্রান্সে কেউ পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারেননি। ২০১৭ সালেও তিনি পেনকে হারিয়েছিলেন এবং সেবার ম্যাক্রো ৬৬% ভোট পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় এবার কিছুটা কম ভোট পেয়েছেন ম্যাক্রো।
প্রথম দফার নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিলেন বামপন্থি প্রার্থী জ লুক মেলাস। ফলে মেলাসর ভোট কোন দিকে যাবে তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে যে, ম্যাক্রো আগেরবারের তুলনায় কম ভোট পেলেও তাকে পেন ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলতে পারেননি।
এদফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ম্যাক্রো বেশ কিছু কৌশল গ্রহন করেন। ভোটের প্রচারণার সময় ম্যাক্রো নিজেকে ইউরোপের সংহতির জন্য বড় শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোভিড ১৯ ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রসঙ্গ ও দুই ক্ষেত্রে তার ভূমিকার কথা বলেছেন।
ভোটের আগে ফ্রান্সের পেনশন ব্যবস্থাকে লঘু করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন ম্যাক্রো। কারণ, তিনি বামপন্থিদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ম্যাক্রোর প্রথম পাঁচ বছরের শাসনে প্রচুর উত্থান-পতন হয়েছে। ইয়েলো-ভেস্ট মুভমেন্ট হয়েছে। তার ব্যবসায়ী-পন্থি নীতি ও বড়লোকদের কর কম করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।
তবে প্রথম পর্বের ভোটে পেনের তুলনায় পাঁচ পার্সেন্টেজ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ম্যাক্রো। এরপর ম্যাক্রো বেশ কয়েকটি প্রধান সংবাদপত্রের সমর্থন পান। বেশ কিছু রিপোর্টে লেখা হয়, পেন ক্ষমতায় এলে তা জাতীয় সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে এবং তখন ফ্রান্সের উপর থেকে বিদেশের ভরসা কমে যাবে।
জয়ের পর ম্যাক্রো বলেছেন, পেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই ছিল খুবই তিক্ত। এখন সেই তিক্ততা কাটিয়ে ওঠার কথা বলেছেন তিনি। তিনি তার সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ সমাজের জন্য তিনি কাজ করবেন।
ল্য পেন ব্যর্থ হলেন কেন ?
ল্য পেন জিতলে ইউরোপর রাজনীতিতে এক বিশাল বদল ঘটতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ল্য পেনের দলের বিরুদ্ধে বারবার বর্ণবাদীতার অভিযোগ উঠেছিল। তবে গত কয়েক মাস প্রচারের সময় তিনি তার দলের কয়েকটি মতামত থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন। বিশেষ করে অভিবাসন নিয়ে সুর কিছুটা হলেও নরম করেছিলেন।
ল্য পেন চিরাচরিত ফরাসি আইডেন্টিটি বজায় রাখার কথা বলেছেন এবং জীবনধারণের খরচ কম করার কথা বলেছেন। তিনি ইইউ নিয়ে তার সুর নরম করেছিলেন এবং ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা বলেননি। কিন্তু রশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা করে, তখন তিনি ন্যাটোর সমালোচনা করেছিলেন। এর ফলে তিনি কিছু ভোট হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছি। তবে এই অভিযোগ ল্য পেন অস্বীকার করেছেন।
ফলাফল প্রকাশের পর প্যারিসে ল্য পেন তার সমর্থকদের বলেছেন, তিনি ফ্রান্সের জন্য, ফরাসি নাগরিকদের জন্য কাজ করে যাবেন।
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি বারবারা ওয়েসেল প্যারিসে ল্য পেনের নির্বাচনী সদর দপ্তর থেকে জানান, পেনের কোনো স্বাভাবিক উত্তরসূরি নেই। পুরো প্রচারটাই ছিল পেনকে ঘিরে। ফলে ল্য পেনের পর কে দলের হাল ধরবেন, তা ঠিক করতে দলের কিছুটা সময় লাগবে।
ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসসহ ইউরোপের বেশ কিছু নেতা ভোটের ফল প্রকাশের পরই ম্যাক্রোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শলৎস তার বার্তায় বলেছেন, “ম্যাক্রোর সমর্থকরা শক্তিশালী ইউরোপের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন। ম্যাক্রো আমাদের সহযোগিতা পাবেন।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ফরাসিতে টুইট করে বলেছেন, “একসঙ্গে আমরা ফ্রান্স ও ইউরোপকে এগিয়ে নিয়ে যাব।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ম্যাক্রোকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “ফ্রান্স হলো ব্রিটেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। দুই দেশ ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একযোগে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।”
প্র.খ/বিপ্লব