সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ,পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ

সিলেট প্রতিনিধি
১৮ মে, ২০২২, 9:53 PM

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ,পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানি বন্দি এলাকার মানুষদের।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।
বিভাগের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের ৬টি ও সুনামগঞ্জের ৬টি মোট ১২টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
এদিন দেখা গেছে, সিলেট শহরের নিকট সুরমার পানি বিপদসীমার উপরে। পানি উপচে শহরের অভিজাত এলাকা উপশহরে পানি ঢুকছে। এছাড়া তালতলা, কুশিঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হু-হু করে পানি ঢুকছে। শহরের ড্রেন ও নালা, ছড়া দিয়ে পানি সুরমায় প্রবাহিত হচ্ছে না। কাজীর বাজারের কাছের নালাসহ বিভিন্ন নালা দিয়ে এখন সুরমার পানি শহরে ঢুকে সয়লাব। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে রান্নাবান্না বন্ধ। গ্রামীণ সড়ক এমনকি জেলা সদরের সাথে উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের, ছাতক, তাহিরপুরের অবস্থাও সূচনীয়।
স্থানীয়দের দাবি ১৯৮৬ সালের পর এমন বন্যা দেখেননি তারা। এবারের বন্যা আগের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও বাসা বাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।এদিকে বন্যাকবলিতদের জন্য নগরীর কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আজিজুর রহমান জানান, তারা পানি বন্দি মানুষদের ব্যাপারে সতর্ক আছেন। দুর্গত এলাকার জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় আগেই সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গরু মহিষসহ বিভিন্ন গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ওই সব উপজেলার বিভিন্ন স্কুলকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট উপজেলার সদরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এটা সিলেট অঞ্চলের জন্য আতঙ্কের। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান ,ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সদর দোয়ারাবাজার, ছাতক ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারও মানুষ। সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, ওয়েজখালী মল্লিকপুর ও নবীনগরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ছাতকে ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকার সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ছাতক গৌবিন্দগঞ্জ ও আমেরতল সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের সুরমা, চেলা যাদুকাটা, চলতি, খাসিয়ামারা ও বৌলাইসহ সব নদীর পানি দ্রুত বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ছাতকে ১৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ১০২ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৬৯ মিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট প্রতিনিধি
১৮ মে, ২০২২, 9:53 PM

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানি বন্দি এলাকার মানুষদের।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ।
বিভাগের প্রধান নদী সুরমা, কুশিয়ারা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের ৬টি ও সুনামগঞ্জের ৬টি মোট ১২টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
এদিন দেখা গেছে, সিলেট শহরের নিকট সুরমার পানি বিপদসীমার উপরে। পানি উপচে শহরের অভিজাত এলাকা উপশহরে পানি ঢুকছে। এছাড়া তালতলা, কুশিঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হু-হু করে পানি ঢুকছে। শহরের ড্রেন ও নালা, ছড়া দিয়ে পানি সুরমায় প্রবাহিত হচ্ছে না। কাজীর বাজারের কাছের নালাসহ বিভিন্ন নালা দিয়ে এখন সুরমার পানি শহরে ঢুকে সয়লাব। অনেকের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে রান্নাবান্না বন্ধ। গ্রামীণ সড়ক এমনকি জেলা সদরের সাথে উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের, ছাতক, তাহিরপুরের অবস্থাও সূচনীয়।
স্থানীয়দের দাবি ১৯৮৬ সালের পর এমন বন্যা দেখেননি তারা। এবারের বন্যা আগের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট ও কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় দেড় সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কুশিয়ারা নদীর পানিও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও বাসা বাড়িতেও। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।এদিকে বন্যাকবলিতদের জন্য নগরীর কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আজিজুর রহমান জানান, তারা পানি বন্দি মানুষদের ব্যাপারে সতর্ক আছেন। দুর্গত এলাকার জন্য দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় আগেই সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গরু মহিষসহ বিভিন্ন গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ওই সব উপজেলার বিভিন্ন স্কুলকে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছেন। কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট উপজেলার সদরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এটা সিলেট অঞ্চলের জন্য আতঙ্কের। এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান ,ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সদর দোয়ারাবাজার, ছাতক ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারও মানুষ। সুনামগঞ্জ শহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, ওয়েজখালী মল্লিকপুর ও নবীনগরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ছাতকে ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিচু এলাকার সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ছাতক গৌবিন্দগঞ্জ ও আমেরতল সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের সুরমা, চেলা যাদুকাটা, চলতি, খাসিয়ামারা ও বৌলাইসহ সব নদীর পানি দ্রুত বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও ছাতকে ১৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ১০২ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৬৯ মিলিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ১০ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।