প্রতিকূলতার মধ্যেও সফল ভেনামী চিংড়ি চাষ পাইলট প্রকল্প

জেলা প্রতিনিধি, খুলনা
১৯ মে, ২০২২, 9:47 PM

প্রতিকূলতার মধ্যেও সফল ভেনামী চিংড়ি চাষ পাইলট প্রকল্প
আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখাগেছে বিশ্ব বাজারে বর্তমানে ৭২% ভেনামী চিংড়ির দখলে। বাকী ২৮% নিয়ে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়।
সেজন্য বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ভেনামী চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে সরকার রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির পোনা এনে খুলনা অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয় মৎস্য অধিদপ্তর।
অনুমতি পাওয়া ৮টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এমইউসি ফুডস, ফাহিম সি ফুডস, গ্রোটেক অ্যাকোয়াকালচার লিমিটেড, রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার, আইয়ান শ্রিম্প কালচার, ইএফজি অ্যাকোয়া ফার্মিং, জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও প্রান্তি অ্যাকোয়া কালচার লিমিটেড।
এদিকে, অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটার আলহেরা মৎস্য প্রকল্প, খুলনার রূপসার ফ্রেস ফুডস লিমিটেড ও জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড এবং সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা আহসানিয়া ফিস লিমিটেড।
অবকাঠামো সংস্কার হলে দ্রুত এই চারটি কোম্পানিকেও ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া কক্সবাজারে আরো চারটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যারা অচিরেই ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করবে বলে বিএফএফইএ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'সুশীলন' এর সাথে মৎস্য প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি হয়। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার পর সুশিলন আবার যশোর বিসিক শিল্প নগরের 'এমইউসি' ফুডস এর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এমইউসি ফুডস তখন মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে খুলনা পাইকগাছার লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রে ভেনামি পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। গত বছর ৩১ মার্চ এমইউসি ফুডস থাইল্যান্ড থেকে ১০ লাখ ভেনামি জাতের পোনা আমদানি করে। চারটি পুকুরে ভেনামী চিংড়ি চাষ শুরু করেন।
থাইল্যান্ড থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ট্রান্সজিট গ্যাপ/পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে ৭ লাখ ৬২ হাজার পোনা জীবিত থাকে। ফলে ২৪% লস হয়। পুকুরের আয়তন ১.৬১হেক্টর। ৯২ দিন থেকে মাছ ধরা শুরু এবং শেষ হয় ১০৯ দিনে।
ধারনা করা হচ্ছে ৩ মাস পর থেকে আহরণ করা যায়। মোট উপাদন হয় ১৩ হাজার ৮শ ৯৬ কেজি। প্রতি হেক্টরে ৮.৬২ মেক্ট্রিক টন। ৫শ টাকা কেজি দরে দুবাইতে রপ্তানী করা হয়। পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসাবে এটি পর্যবেক্ষণ কালে কিছু নির্দেশনা বা আরো নিবিড় ভাবে মনিটরিং করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
মাঝে লবণাক্ততা কম থাকায় বিলম্ব হয়েছে। পরবর্তীতে ২০-২০২১ অর্থ বছরে ১০মে রাতে একই পদ্ধতিতে এমইউসি ফুডস ১২লাখ পোনা আনে। ৯ লাখ ৬৮ হাজার ২শ ৭৪টি পোনা জীবিত বাকিটা মৃত হয়। ম্যানেজার সুরেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, অনুমতি পাওয়ার পর ২০১৯ সালে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও লবণাক্ততা কম এবং বৈশ্বয়িক করোনা মহামারীর কারণে বিলম্ব হয়।
বছরে ৩ বার উৎপাদন সম্ভাবনা থাকলে বিভিন্ন কারণে '২১সালে একবার পোনা ছেড়ে সফলতালাভ করি। খাদ্য হিসাবে সিপিবি ইন্ডিয়া খাবার ভারত থেকে আনা হয়। সরকার পাইলট প্রকল্পের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ভাবে বাগদার পাশাপাশি যদি ছোট ছোট পুকুর, খন্ড করে ভেনামী চিংড়ি ভালভাবে চাষ করতে পারি তাহলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
মার্কেটে ভাল চাহিদা আছে বিধায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেশী হবে। তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তীদেশ ভারত সহ অন্যান্য দেশে সমস্যা যদি না হয় আমাদের হওয়ার কথা না। পাইকগাছা উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস বলেন, সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছে। আমরা এই কাজে তাদের সহায়তা করছি। পরিবেশে যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য পাইকগাছা লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
প্রথমে একটি পুকুরে এবং পরে চারটি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে পোনা আমদানি না করে হ্যাচারী মালিকগণ দেশী প্রযুক্তিতে যদি মাদার নিয়ে পোনা ও খাবার তৈরি করা যায় তাহলে পরিবহণ সহ অন্যান্য খরচ সাশ্রায়ী হবে। চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
বাগদার তুলনায় ভেনামীর দাম কম বা সহজলভ্যতার জন্য যে কেউ যেকোন পরিবার কিনে খেতে পারবে। গবেষণায় মাটির গুণাগুণ ভেনামী চিংড়ির সাথে এক না, সমঞ্জস্য না। চাষ উপযোগী করতে আধুনিক প্রযুক্ত গ্রহণে আগ্রহ থাকতে হবে। সরকারী, বেসরকারী উদ্যোক্তা, চাষীদেরকে সামগ্রিক ভাবে আগ্রাহী করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। চিংড়ি চাষি ও রপ্তানিকারকরা জানান, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম খাত চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে 'ভেনামি' চিংড়ি চাষের কোনো বিকল্প নেই।
একমাত্র 'ভেনামি'ই পারে দেশের চিংড়ি শিল্পের সম্প্রসারণ করে বিশ্ব প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে। দ্রুত একটি সহজ নীতির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে 'ভেনামি' চিংড়ি চাষকে উন্মুক্ত করে রপ্তানির পদক্ষেপ নিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চিংড়ি বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল সরকার (অব. উপ-পরিচালক, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) জানান, ৭দিন পরপর চিংড়ির বৃদ্ধি এবং রোগবালাই অনুসন্ধানে নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
চলতি বছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় কিছুটা শঙ্কা থাকলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এই চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ এবং জীবনধারণ ক্ষমতা বাগদার তুলনায় অনেক বেশি। পোনা ছাড়ার পর ৪৯দিন পর্যস্ত রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকলেও এ প্রকল্পে তেমনটা দেখা যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন হেমায়িত চিংড়ির মধ্যে ৩৩ হাজার ৩শ ৬৩ মেট্রিকন রপ্তানীর করা হয়। ৩০৮৮.৮৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি কমে আরও দুই মিলিয়ন।
সেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতে 'ভেনামি' চিংড়ির হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৭ হাজার ১০২ কেজি। অর্থ্যাৎ বাগদার তুলনায় 'ভেনামি'র উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬ হাজার ৭৬১ কেজি বেশি। যার প্রমাণ মিলেছে খুলনার পাইকগাছায় প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্পে চাষকৃত 'ভেনামি'র উৎপাদনে।
তবে, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদন কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হলেও দেশে এর সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বলেই মনে করছে চিংড়ি রপ্তানিকারকদের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, আমি মনিটরিং দায়িত্বে আছি। ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য সরকারের নির্দেশে লোনা পানি কেন্দ্রের ৬টি পুকুর উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়।
২০২০ সালে এ কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও করোনার কারণে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথম চিংড়ি ছাড়া হয়।
গতবার যা ফলাফল হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দ্বিতীয় বার আবার পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৯ মে মজুদ করছে, সর্বোপরি একসপ্তাহ হয়েছে। আগামী তিন মাস পর যখন আহরণ করবে তখন উৎপাদন, লাভক্ষতি হিসাব করে পূর্ণাঙ্গ রির্পোট দিতে পারবেন বলে জানান।
মুলত এরিপোর্টের উপর নির্ভর করছে ভেনামি চিংড়ির ভবিষ্যৎ। দেশের প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষের উদ্যোক্তা যশোরের এমইউসি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ৩৩ বিলিয়ন ডলারের চিংড়ির বিশ্ববাজার।
যার ৮০ ভাগই দখল করে নিয়েছে ভেনামি চিংড়ি। আমাদেরকে প্রতিযোগিতায় লড়তে হয় মাত্র ২০ শতাংশ বাজারের জন্য। সেখানেও নানা প্রতিকূলতায় বাজারের দর পতনের কারণে চিংড়ির উৎপাদন এবং রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা।
এছাড়া, এশিয়ার প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা এখনো পাইলট প্রকল্পে আটকে আছি। দেশে দ্রুত ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু না হলে আমরা বিশ্ব বাণিজ্যে আরও পিছিয়ে পড়ব।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারের এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে ভেনামি চিংড়ি চাষের কোনো বিকল্প নেই। পাইকগাছায় সর্বপ্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পাইলট প্রকল্পের উপর নির্ভর করছে দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষের ভবিষ্যৎ। তবে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রথমধাপে সফলতা সন্তোষজনক।
জেলা প্রতিনিধি, খুলনা
১৯ মে, ২০২২, 9:47 PM

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখাগেছে বিশ্ব বাজারে বর্তমানে ৭২% ভেনামী চিংড়ির দখলে। বাকী ২৮% নিয়ে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়।
সেজন্য বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ভেনামী চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই। সে লক্ষ্যে সরকার রপ্তানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির পোনা এনে খুলনা অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয় মৎস্য অধিদপ্তর।
অনুমতি পাওয়া ৮টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এমইউসি ফুডস, ফাহিম সি ফুডস, গ্রোটেক অ্যাকোয়াকালচার লিমিটেড, রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার, আইয়ান শ্রিম্প কালচার, ইএফজি অ্যাকোয়া ফার্মিং, জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও প্রান্তি অ্যাকোয়া কালচার লিমিটেড।
এদিকে, অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটার আলহেরা মৎস্য প্রকল্প, খুলনার রূপসার ফ্রেস ফুডস লিমিটেড ও জেমিনি সি ফুডস লিমিটেড এবং সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা আহসানিয়া ফিস লিমিটেড।
অবকাঠামো সংস্কার হলে দ্রুত এই চারটি কোম্পানিকেও ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া কক্সবাজারে আরো চারটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যারা অচিরেই ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করবে বলে বিএফএফইএ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'সুশীলন' এর সাথে মৎস্য প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি হয়। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার পর সুশিলন আবার যশোর বিসিক শিল্প নগরের 'এমইউসি' ফুডস এর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এমইউসি ফুডস তখন মৎস্য অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে খুলনা পাইকগাছার লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রে ভেনামি পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। গত বছর ৩১ মার্চ এমইউসি ফুডস থাইল্যান্ড থেকে ১০ লাখ ভেনামি জাতের পোনা আমদানি করে। চারটি পুকুরে ভেনামী চিংড়ি চাষ শুরু করেন।
থাইল্যান্ড থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ট্রান্সজিট গ্যাপ/পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে ৭ লাখ ৬২ হাজার পোনা জীবিত থাকে। ফলে ২৪% লস হয়। পুকুরের আয়তন ১.৬১হেক্টর। ৯২ দিন থেকে মাছ ধরা শুরু এবং শেষ হয় ১০৯ দিনে।
ধারনা করা হচ্ছে ৩ মাস পর থেকে আহরণ করা যায়। মোট উপাদন হয় ১৩ হাজার ৮শ ৯৬ কেজি। প্রতি হেক্টরে ৮.৬২ মেক্ট্রিক টন। ৫শ টাকা কেজি দরে দুবাইতে রপ্তানী করা হয়। পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসাবে এটি পর্যবেক্ষণ কালে কিছু নির্দেশনা বা আরো নিবিড় ভাবে মনিটরিং করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
মাঝে লবণাক্ততা কম থাকায় বিলম্ব হয়েছে। পরবর্তীতে ২০-২০২১ অর্থ বছরে ১০মে রাতে একই পদ্ধতিতে এমইউসি ফুডস ১২লাখ পোনা আনে। ৯ লাখ ৬৮ হাজার ২শ ৭৪টি পোনা জীবিত বাকিটা মৃত হয়। ম্যানেজার সুরেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, অনুমতি পাওয়ার পর ২০১৯ সালে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও লবণাক্ততা কম এবং বৈশ্বয়িক করোনা মহামারীর কারণে বিলম্ব হয়।
বছরে ৩ বার উৎপাদন সম্ভাবনা থাকলে বিভিন্ন কারণে '২১সালে একবার পোনা ছেড়ে সফলতালাভ করি। খাদ্য হিসাবে সিপিবি ইন্ডিয়া খাবার ভারত থেকে আনা হয়। সরকার পাইলট প্রকল্পের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ভাবে বাগদার পাশাপাশি যদি ছোট ছোট পুকুর, খন্ড করে ভেনামী চিংড়ি ভালভাবে চাষ করতে পারি তাহলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
মার্কেটে ভাল চাহিদা আছে বিধায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেশী হবে। তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তীদেশ ভারত সহ অন্যান্য দেশে সমস্যা যদি না হয় আমাদের হওয়ার কথা না। পাইকগাছা উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস বলেন, সরকার পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছে। আমরা এই কাজে তাদের সহায়তা করছি। পরিবেশে যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য পাইকগাছা লোনা পানি গবেষণা কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
প্রথমে একটি পুকুরে এবং পরে চারটি পুকুরে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ির চাষ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে পোনা আমদানি না করে হ্যাচারী মালিকগণ দেশী প্রযুক্তিতে যদি মাদার নিয়ে পোনা ও খাবার তৈরি করা যায় তাহলে পরিবহণ সহ অন্যান্য খরচ সাশ্রায়ী হবে। চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
বাগদার তুলনায় ভেনামীর দাম কম বা সহজলভ্যতার জন্য যে কেউ যেকোন পরিবার কিনে খেতে পারবে। গবেষণায় মাটির গুণাগুণ ভেনামী চিংড়ির সাথে এক না, সমঞ্জস্য না। চাষ উপযোগী করতে আধুনিক প্রযুক্ত গ্রহণে আগ্রহ থাকতে হবে। সরকারী, বেসরকারী উদ্যোক্তা, চাষীদেরকে সামগ্রিক ভাবে আগ্রাহী করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে। চিংড়ি চাষি ও রপ্তানিকারকরা জানান, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম খাত চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে 'ভেনামি' চিংড়ি চাষের কোনো বিকল্প নেই।
একমাত্র 'ভেনামি'ই পারে দেশের চিংড়ি শিল্পের সম্প্রসারণ করে বিশ্ব প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে। দ্রুত একটি সহজ নীতির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে 'ভেনামি' চিংড়ি চাষকে উন্মুক্ত করে রপ্তানির পদক্ষেপ নিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। চিংড়ি বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল সরকার (অব. উপ-পরিচালক, মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) জানান, ৭দিন পরপর চিংড়ির বৃদ্ধি এবং রোগবালাই অনুসন্ধানে নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
চলতি বছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় কিছুটা শঙ্কা থাকলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এই চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ এবং জীবনধারণ ক্ষমতা বাগদার তুলনায় অনেক বেশি। পোনা ছাড়ার পর ৪৯দিন পর্যস্ত রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকলেও এ প্রকল্পে তেমনটা দেখা যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন হেমায়িত চিংড়ির মধ্যে ৩৩ হাজার ৩শ ৬৩ মেট্রিকন রপ্তানীর করা হয়। ৩০৮৮.৮৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি কমে আরও দুই মিলিয়ন।
সেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতে 'ভেনামি' চিংড়ির হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৭ হাজার ১০২ কেজি। অর্থ্যাৎ বাগদার তুলনায় 'ভেনামি'র উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৬ হাজার ৭৬১ কেজি বেশি। যার প্রমাণ মিলেছে খুলনার পাইকগাছায় প্রথমবারের মতো পাইলট প্রকল্পে চাষকৃত 'ভেনামি'র উৎপাদনে।
তবে, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদন কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হলেও দেশে এর সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে বলেই মনে করছে চিংড়ি রপ্তানিকারকদের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, আমি মনিটরিং দায়িত্বে আছি। ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য সরকারের নির্দেশে লোনা পানি কেন্দ্রের ৬টি পুকুর উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়।
২০২০ সালে এ কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও করোনার কারণে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ প্রথম চিংড়ি ছাড়া হয়।
গতবার যা ফলাফল হয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দ্বিতীয় বার আবার পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৯ মে মজুদ করছে, সর্বোপরি একসপ্তাহ হয়েছে। আগামী তিন মাস পর যখন আহরণ করবে তখন উৎপাদন, লাভক্ষতি হিসাব করে পূর্ণাঙ্গ রির্পোট দিতে পারবেন বলে জানান।
মুলত এরিপোর্টের উপর নির্ভর করছে ভেনামি চিংড়ির ভবিষ্যৎ। দেশের প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষের উদ্যোক্তা যশোরের এমইউসি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, ৩৩ বিলিয়ন ডলারের চিংড়ির বিশ্ববাজার।
যার ৮০ ভাগই দখল করে নিয়েছে ভেনামি চিংড়ি। আমাদেরকে প্রতিযোগিতায় লড়তে হয় মাত্র ২০ শতাংশ বাজারের জন্য। সেখানেও নানা প্রতিকূলতায় বাজারের দর পতনের কারণে চিংড়ির উৎপাদন এবং রপ্তানিতে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা।
এছাড়া, এশিয়ার প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আমরা এখনো পাইলট প্রকল্পে আটকে আছি। দেশে দ্রুত ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ শুরু না হলে আমরা বিশ্ব বাণিজ্যে আরও পিছিয়ে পড়ব।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারের এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে ভেনামি চিংড়ি চাষের কোনো বিকল্প নেই। পাইকগাছায় সর্বপ্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পাইলট প্রকল্পের উপর নির্ভর করছে দেশে ভেনামি চিংড়ি চাষের ভবিষ্যৎ। তবে, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রথমধাপে সফলতা সন্তোষজনক।