সেন্টমার্টিন উপকূলে মালয়েশিয়াগামী নারী ও শিশুসহ ৩৩ রোহিঙ্গা উদ্ধার

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার
২০ মে, ২০২২, 1:04 AM

সেন্টমার্টিন উপকূলে মালয়েশিয়াগামী নারী ও শিশুসহ ৩৩ রোহিঙ্গা উদ্ধার
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ৩৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী সদস্যরা। সেন্ট মার্টিন উপকূল থেকে বুধবার ভোর রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে এক শিশুসহ ১২ জন নারী রয়েছে। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও বানৌজা আলী হায়দার জাহাজের অধিনায়ক সোহেল আযম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষরা দালালচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির থেকে পালিয়ে টেকনাফের বাহারছড়ার একটি সাগর পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় ওঠেন। সেখান থেকে গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলেন। এ সময় নৌ-বাহিনীর টহল জাহাজ তাদের সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে উদ্ধার করে।
সোহেল আযম আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর সেন্টমাটির্নে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাহারছড়া এলাকায় একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, শামলাপুর পুরান পাড়া এলাকার দালাল শফি উল্লাহ ও তার ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে জড়িত রয়েছে অভিযোগ রয়েছে।
তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে যায় উপকূলীয় এলাকায়। সেখান থেকে উদ্ধার কিংবা আটক হন রোহিঙ্গারা। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে দালালরা। সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং এবং টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া ও শাহপরীর দ্বীপকে তারা মানব পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।
পাচারকারী দল প্রথমে মালয়েশিয়াগামীদের উপকূলীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে রোহিঙ্গাদের জড়ো করে। পরে সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুলে দেয়। অনেক সময় এসব পাচারকারীদল রোহিঙ্গাদের সাথে প্রতারণা করে ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে দু’একদিন কালক্ষেপণ করে আবারও একই জায়গায় অথবা উপকূলের যে কোনস্থানে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে গত ২৪ মার্চ ভোররাতে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের উখিয়া উপকূল থেকে ৫৭ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে র্যাব। এ সময় তাদের পাচারে জড়িত দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান জানান, ২৪ মার্চ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাহারছড়া শামলাপুর সাগর চ্যানেল থেকে ৫৭ রোহিঙ্গা, দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়।
এ সময় তাদের ব্যবহৃত ট্রলারটি জব্দ করা হয়। আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উচ্চ বেতনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করানোর নিমিত্তে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের রাজি করিয়ে ৫০-৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে।
প্রাথমিক অবস্থায় তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে গ্রহণ করে এবং বাকী টাকা মিয়ানমার-টেকনাফ সীমান্তে অবস্থানরত জাহাজে ওঠার সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ভিকটিমরা মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। দালালরা ৪-৫ জন করে টেকনাফে হাফিজপাড়া পাহাড়ী এলাকায় ৫০-৬০ জনকে একসাথে জড়ো করে। অতঃপর তারা মাছ ধরা ট্রলারের মাধ্যমে ভিকটিমদের টেকনাফ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থানরত জাহাজে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচারের মিথ্যা প্রলোভন দেখায়। অতঃপর ভিকটিমদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা গ্রহণ করে মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তে জাহাজে অবস্থানরত দালালদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা দালাল। তাদের দেয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারী চক্রের অনেক সদস্যের নাম বেরিয়ে এসেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- হাফেজ ছলিম, আতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, আবদুর করিম, হাফেজ মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোসেন, মোহাম্মদ রশিদ, হাসিম উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ হামিদ। তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় ওই ক্যাম্পগুলোতে। যারা নিয়মিত রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ সংগ্রহে ব্যস্ত।
জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার
২০ মে, ২০২২, 1:04 AM

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ৩৩ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী সদস্যরা। সেন্ট মার্টিন উপকূল থেকে বুধবার ভোর রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে এক শিশুসহ ১২ জন নারী রয়েছে। নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও বানৌজা আলী হায়দার জাহাজের অধিনায়ক সোহেল আযম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষরা দালালচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির থেকে পালিয়ে টেকনাফের বাহারছড়ার একটি সাগর পয়েন্ট দিয়ে নৌকায় ওঠেন। সেখান থেকে গভীর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলেন। এ সময় নৌ-বাহিনীর টহল জাহাজ তাদের সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে উদ্ধার করে।
সোহেল আযম আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর সেন্টমাটির্নে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাহারছড়া এলাকায় একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, শামলাপুর পুরান পাড়া এলাকার দালাল শফি উল্লাহ ও তার ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারে জড়িত রয়েছে অভিযোগ রয়েছে।
তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে যায় উপকূলীয় এলাকায়। সেখান থেকে উদ্ধার কিংবা আটক হন রোহিঙ্গারা। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে দালালরা। সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন জালিয়াপালং এবং টেকনাফের উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়া ও শাহপরীর দ্বীপকে তারা মানব পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।
পাচারকারী দল প্রথমে মালয়েশিয়াগামীদের উপকূলীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে রোহিঙ্গাদের জড়ো করে। পরে সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে পাচারের উদ্দেশ্যে ট্রলারে তুলে দেয়। অনেক সময় এসব পাচারকারীদল রোহিঙ্গাদের সাথে প্রতারণা করে ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে দু’একদিন কালক্ষেপণ করে আবারও একই জায়গায় অথবা উপকূলের যে কোনস্থানে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে গত ২৪ মার্চ ভোররাতে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের উখিয়া উপকূল থেকে ৫৭ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে র্যাব। এ সময় তাদের পাচারে জড়িত দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক তানভীর হাসান জানান, ২৪ মার্চ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাহারছড়া শামলাপুর সাগর চ্যানেল থেকে ৫৭ রোহিঙ্গা, দুই দালাল ও স্থানীয় একজনকে আটক করা হয়।
এ সময় তাদের ব্যবহৃত ট্রলারটি জব্দ করা হয়। আটক রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উচ্চ বেতনে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করানোর নিমিত্তে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের রাজি করিয়ে ৫০-৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে।
প্রাথমিক অবস্থায় তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে গ্রহণ করে এবং বাকী টাকা মিয়ানমার-টেকনাফ সীমান্তে অবস্থানরত জাহাজে ওঠার সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করবে মর্মে চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী ভিকটিমরা মানব পাচারকারীদের প্ররোচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প হতে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করে। দালালরা ৪-৫ জন করে টেকনাফে হাফিজপাড়া পাহাড়ী এলাকায় ৫০-৬০ জনকে একসাথে জড়ো করে। অতঃপর তারা মাছ ধরা ট্রলারের মাধ্যমে ভিকটিমদের টেকনাফ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থানরত জাহাজে স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচারের মিথ্যা প্রলোভন দেখায়। অতঃপর ভিকটিমদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা গ্রহণ করে মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তে জাহাজে অবস্থানরত দালালদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা দালাল। তাদের দেয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারী চক্রের অনেক সদস্যের নাম বেরিয়ে এসেছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- হাফেজ ছলিম, আতাত উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম, আবদুর করিম, হাফেজ মোহাম্মদ আইয়ুব, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মোহাম্মদ কবির, আমির হোসেন, মোহাম্মদ ফয়েজ, নূর হোসেন, মোহাম্মদ রশিদ, হাসিম উল্লাহ, মোহাম্মদ শাহ ও মোহাম্মদ হামিদ। তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। এ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় ওই ক্যাম্পগুলোতে। যারা নিয়মিত রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ সংগ্রহে ব্যস্ত।