শিরোনামঃ
ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

পৃথিবীকে একটি দুঃসময়ের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ 

#
news image

একটি যুদ্ধ পৃথিবীকে কিভাবে ভোগাতে পারে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। একদিকে গত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় অর্থনীতির নাকানি-চুবানি অন্যদিকে তার রেশ কাটতে না কাটতেই একটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি পৃথিবী এবং যার শেষ কি হবে তার কোনো ধারণা নেই যা পৃথিবীকে একটি দুঃসময়ের মুখোমুখি করতে যাচ্ছে। ইউক্রেন পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণেই পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। রাশিয়া-ইউকেন পরিস্থিতিতে বিশ^ রাজনীতিতেও অস্থিরতা তৈরি করেছে। মিত্র দেশগুলোকে আরও বেশি কাছে টানার চেষ্টা এবং নিজেদের ও মিত্র দেশগুলোকে কিভাবে আরও বেশি সুরক্ষিত রাখা যায় সে বিষয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনাও সাজাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এই পরিকল্পনার অগ্রভাবে রয়েছে নিজেদের সামরিক ক্ষমতার বৃদ্ধি করা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো। অস্ত্র কেনা এবং নিজেদের অস্ত্রভান্ডারে যোগ করার মধ্যে দিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে চাইছে। বিশেষভাবে ইউরোপে এত বড় একটি ঘটনা শুরুর পর অনেক পরিবর্তনই ঘটতে পারে। বিশ^ এই মুহূর্তে দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে এই রাশিয়ার শক্তিশালী সামরিক শক্তির সাথে ইউক্রেন বেশিদিন টিকতে পারবে না। কারণ রাশিয়া এবং ইউক্রেন সামরিক শক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান অনেক। তবে সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত লড়াই করছে। প্রায় ষাট দিন হতে চললো। ইউক্রেনের বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। তবুও ইউক্রেন লড়ছে। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা,আর্থিক সহায়তা এবং রাশিয়ার ওপর ব্যপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশ যুদ্ধের প্রভাবে ভুগছে। অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। বিশে^ খাদ্যাভাব প্রকট হচ্ছে। কিছু কিছু দেশ এর মধ্যেই চরমভাবে সংকটে পরেছে। প্রথমে করোনাভাইরাসের তান্ডব এবং এরপর যুদ্ধ পরিস্থিতি এই দুইয়ে মিলে সব পরিকল্পনাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। 
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ^ খাদ্য সংকটের কারণে ’মানবিক বিপর্যয়ের’ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বিশ^ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আর এই দুই দেশ ও ইউরোপের অর্থনীতির সংকোচনের আভাস দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফ এর হিসাবে এ বছর ইউক্রেনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হবে, রাশিয়ার সংকোচন হবে সাড়ে ৮ শতাংশ। এবং এই দুইদেশ সহ ইউরোপের অর্থনীতির সার্বিক সংকোচন হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রশ্ন হলো এই যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ হবে? এর সঠিক উত্তর নেই। ইউক্রেন অভিযান সহসাই রাশিয়া বন্ধ করবে সে সম্ভাবনা নেই। আর ইউক্রেন যেভাবে আক্রমণ প্রতিহত করতে পারছে ও অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে তাতে সহসাই তাদেরও দুর্বল করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। ফলশ্রুতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। মাঝখানে ছিল আলোচনায় বসে সমাধান। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি। বহুবার আলোচনায় বসলেও মূলত দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে একমত হতে পারেনি বলেই কোনো সমাধান হয়নি। আলোচনার বিষয়গুলো সবই পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং এসব বিষয় ছাড় দিয়ে কোনো সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। আর তা না হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে কেন? সরাসরি অন্যকোনো দেশের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে হয়ে যুদ্ধের ময়দানে না নামলেও বিপুল সামরিক সহায়তা যুদ্ধের গতি পাল্টে দিচ্ছে। কারণ ইউক্রেনের সেনারা লড়াই করছে। রাশিয়ারও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলেছেন ’আমাদের অস্ত্র, অস্ত্র এবং অস্ত্রের প্রয়োজন’। অর্থাৎ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাদের প্রয়োজন অস্ত্র। সেই অস্ত্র সহায়তা তারা পাচ্ছে। এর অর্থ হলো যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। আরও মানুষ নিহত হবে, বাস্তুচ্যুত হবে এবং অবকাঠামো ধ্বংস হবে। জার্মান সরকারও সম্প্রতি বলছে যে তারা ইউক্রেনের জন্য ১০০ কোটি ইউরোর বেশি মূল্যের অস্ত্রসহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আবার পশ্চিমাদের কাছ থেকে যুদ্ধ বিমানও পেয়েছে ইউক্রেন। এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কামান ও ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রও পাচ্ছে। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে সেই সাথে বিশ^ আরও বেশি সংকটের মুখোমুখি হবে। 
খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ভুগতে পারে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিও। এর কারণ মূলত করোনার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া। যদিও রাশিয়ার ভূখন্ডে আঘাত হানার মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ইউক্রেনে না পাঠানোর জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি দাবি জানিয়েছে মস্কো, অন্যথায় অকল্পনীয় পরিণতির ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। যদিও দিমাশ নামে পরিচিত ওই কূটনৈতিক নোটটি নিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমেই পাঠানো হয়েছে কিন্তু তাতে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বা রাশিয়ার অন্যকোনো উর্ধতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই। এরপরপরই অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ৮০ কোটি ডলার অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেন। যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ^। বারবার উঠে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের একটি অন্যতম কারণ ছিল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির ইচ্ছা। যদিও ইউক্রেন ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত নিয়ে হয়তো এখন কিছুটা নমনীয়। 
রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পেছনে এটা একটি অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হয়। ভøাদিমির পুতিন দাবি করেন যে, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের কাছে একটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে ন্যাটো জোটকে পূর্ব দিকে আর সম্প্রসারণ করা হবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। সে সময় থেকে এ পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা তার প্রভাব বলয়ের অংশ ছিল এমন অনেক পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়েছে। ন্যাটো জোটের এই সম্প্রসারণ যা রাশিয়া মেনে নিতে পারছে না। আলোচনা পুরেপুরি ফলপ্রসু না হওয়ায় যুদ্ধ চলছে পুরোদমে। রাশিয়া এগিয়ে চলেছে রাজধানী কিয়েভের দিকে। এরই মধ্যে অন্য আরেকটি খবর পৃথিবীর জন্য দুশ্চিন্তা হয়ে দাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডও ন্যাটোতে যোগ দিতে যাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। এটি একটি নতুন খবর এবং এই খবর এই যুদ্ধের মধ্যেই প্রতিক্রিয়ার তৈরি করবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন জানিয়েছে, এমন ঘটনা ঘটলে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনসহ এ অঞ্চলে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে। উভয় দিকেই নিরাপত্তার প্রশ্নেই অগ্রসর হচ্ছে। একদিনে ন্যাটোভুক্তি হওয়ার ইচ্ছা যেমন নিজেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো আস্থা অর্জন করা অন্যদিকে বাল্টিক অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনও নিরাপত্তার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার দেওয়া অভাবনীয় পরিণতি ঠিক কি হতে পারে বা সেই পরিণতি শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ হবে কি না তা যুদ্ধ পরিণতির ওপর পর্যবেক্ষণ করেই বলা সম্ভব। মোট কথা সবকিছুতেই নিরাপত্তার বিষয়টিই সামনে আসে। সবাই নিরাপত্তা পেতে চায়। আবার আগ্রাসন থেকেও নিজেকে পিছিয়ে নিতে চায় না। এই দুই-ই বিশে^ দ্বন্দ্ব তৈরি করে। সম্প্রসারণবাদ,আগ্রাসন বা কতৃর্ত্ববাদ প্রভৃতি বাদ দিয়ে বিশ^ যদি শান্তির পথে থাকতো তাহলে মৌলিক অনেক সমস্যাই পৃথিবীতে এত প্রকট হতো না। 

অলোক আচার্য
শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক

অলোক আচার্য

২২ মে, ২০২২,  1:20 AM

news image

একটি যুদ্ধ পৃথিবীকে কিভাবে ভোগাতে পারে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। একদিকে গত দুই বছরে করোনার ধাক্কায় অর্থনীতির নাকানি-চুবানি অন্যদিকে তার রেশ কাটতে না কাটতেই একটি ভয়াবহ যুদ্ধের মুখোমুখি পৃথিবী এবং যার শেষ কি হবে তার কোনো ধারণা নেই যা পৃথিবীকে একটি দুঃসময়ের মুখোমুখি করতে যাচ্ছে। ইউক্রেন পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণেই পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। রাশিয়া-ইউকেন পরিস্থিতিতে বিশ^ রাজনীতিতেও অস্থিরতা তৈরি করেছে। মিত্র দেশগুলোকে আরও বেশি কাছে টানার চেষ্টা এবং নিজেদের ও মিত্র দেশগুলোকে কিভাবে আরও বেশি সুরক্ষিত রাখা যায় সে বিষয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনাও সাজাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। এই পরিকল্পনার অগ্রভাবে রয়েছে নিজেদের সামরিক ক্ষমতার বৃদ্ধি করা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটানো। অস্ত্র কেনা এবং নিজেদের অস্ত্রভান্ডারে যোগ করার মধ্যে দিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে চাইছে। বিশেষভাবে ইউরোপে এত বড় একটি ঘটনা শুরুর পর অনেক পরিবর্তনই ঘটতে পারে। বিশ^ এই মুহূর্তে দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে এই রাশিয়ার শক্তিশালী সামরিক শক্তির সাথে ইউক্রেন বেশিদিন টিকতে পারবে না। কারণ রাশিয়া এবং ইউক্রেন সামরিক শক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান অনেক। তবে সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত লড়াই করছে। প্রায় ষাট দিন হতে চললো। ইউক্রেনের বহু বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। তবুও ইউক্রেন লড়ছে। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা,আর্থিক সহায়তা এবং রাশিয়ার ওপর ব্যপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ^ অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে কোনো কোনো উন্নয়নশীল দেশ যুদ্ধের প্রভাবে ভুগছে। অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। বিশে^ খাদ্যাভাব প্রকট হচ্ছে। কিছু কিছু দেশ এর মধ্যেই চরমভাবে সংকটে পরেছে। প্রথমে করোনাভাইরাসের তান্ডব এবং এরপর যুদ্ধ পরিস্থিতি এই দুইয়ে মিলে সব পরিকল্পনাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। 
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ^ খাদ্য সংকটের কারণে ’মানবিক বিপর্যয়ের’ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বিশ^ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। আর এই দুই দেশ ও ইউরোপের অর্থনীতির সংকোচনের আভাস দিয়েছে আইএমএফ। আইএমএফ এর হিসাবে এ বছর ইউক্রেনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হবে, রাশিয়ার সংকোচন হবে সাড়ে ৮ শতাংশ। এবং এই দুইদেশ সহ ইউরোপের অর্থনীতির সার্বিক সংকোচন হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রশ্ন হলো এই যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ হবে? এর সঠিক উত্তর নেই। ইউক্রেন অভিযান সহসাই রাশিয়া বন্ধ করবে সে সম্ভাবনা নেই। আর ইউক্রেন যেভাবে আক্রমণ প্রতিহত করতে পারছে ও অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে তাতে সহসাই তাদেরও দুর্বল করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। ফলশ্রুতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। মাঝখানে ছিল আলোচনায় বসে সমাধান। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি। বহুবার আলোচনায় বসলেও মূলত দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে একমত হতে পারেনি বলেই কোনো সমাধান হয়নি। আলোচনার বিষয়গুলো সবই পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং এসব বিষয় ছাড় দিয়ে কোনো সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। আর তা না হলে যুদ্ধ বন্ধ হবে কেন? সরাসরি অন্যকোনো দেশের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে হয়ে যুদ্ধের ময়দানে না নামলেও বিপুল সামরিক সহায়তা যুদ্ধের গতি পাল্টে দিচ্ছে। কারণ ইউক্রেনের সেনারা লড়াই করছে। রাশিয়ারও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো বলেছেন ’আমাদের অস্ত্র, অস্ত্র এবং অস্ত্রের প্রয়োজন’। অর্থাৎ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তাদের প্রয়োজন অস্ত্র। সেই অস্ত্র সহায়তা তারা পাচ্ছে। এর অর্থ হলো যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। আরও মানুষ নিহত হবে, বাস্তুচ্যুত হবে এবং অবকাঠামো ধ্বংস হবে। জার্মান সরকারও সম্প্রতি বলছে যে তারা ইউক্রেনের জন্য ১০০ কোটি ইউরোর বেশি মূল্যের অস্ত্রসহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আবার পশ্চিমাদের কাছ থেকে যুদ্ধ বিমানও পেয়েছে ইউক্রেন। এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কামান ও ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রও পাচ্ছে। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে সেই সাথে বিশ^ আরও বেশি সংকটের মুখোমুখি হবে। 
খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ভুগতে পারে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিও। এর কারণ মূলত করোনার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া। যদিও রাশিয়ার ভূখন্ডে আঘাত হানার মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ইউক্রেনে না পাঠানোর জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি দাবি জানিয়েছে মস্কো, অন্যথায় অকল্পনীয় পরিণতির ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। যদিও দিমাশ নামে পরিচিত ওই কূটনৈতিক নোটটি নিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমেই পাঠানো হয়েছে কিন্তু তাতে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বা রাশিয়ার অন্যকোনো উর্ধতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই। এরপরপরই অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ৮০ কোটি ডলার অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেন। যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে বিশ^। বারবার উঠে আসছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের একটি অন্যতম কারণ ছিল ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির ইচ্ছা। যদিও ইউক্রেন ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত নিয়ে হয়তো এখন কিছুটা নমনীয়। 
রাশিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পেছনে এটা একটি অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হয়। ভøাদিমির পুতিন দাবি করেন যে, ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের কাছে একটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে ন্যাটো জোটকে পূর্ব দিকে আর সম্প্রসারণ করা হবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। সে সময় থেকে এ পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা তার প্রভাব বলয়ের অংশ ছিল এমন অনেক পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়েছে। ন্যাটো জোটের এই সম্প্রসারণ যা রাশিয়া মেনে নিতে পারছে না। আলোচনা পুরেপুরি ফলপ্রসু না হওয়ায় যুদ্ধ চলছে পুরোদমে। রাশিয়া এগিয়ে চলেছে রাজধানী কিয়েভের দিকে। এরই মধ্যে অন্য আরেকটি খবর পৃথিবীর জন্য দুশ্চিন্তা হয়ে দাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডও ন্যাটোতে যোগ দিতে যাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। এটি একটি নতুন খবর এবং এই খবর এই যুদ্ধের মধ্যেই প্রতিক্রিয়ার তৈরি করবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিন জানিয়েছে, এমন ঘটনা ঘটলে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনসহ এ অঞ্চলে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করবে। উভয় দিকেই নিরাপত্তার প্রশ্নেই অগ্রসর হচ্ছে। একদিনে ন্যাটোভুক্তি হওয়ার ইচ্ছা যেমন নিজেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো আস্থা অর্জন করা অন্যদিকে বাল্টিক অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনও নিরাপত্তার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার দেওয়া অভাবনীয় পরিণতি ঠিক কি হতে পারে বা সেই পরিণতি শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ হবে কি না তা যুদ্ধ পরিণতির ওপর পর্যবেক্ষণ করেই বলা সম্ভব। মোট কথা সবকিছুতেই নিরাপত্তার বিষয়টিই সামনে আসে। সবাই নিরাপত্তা পেতে চায়। আবার আগ্রাসন থেকেও নিজেকে পিছিয়ে নিতে চায় না। এই দুই-ই বিশে^ দ্বন্দ্ব তৈরি করে। সম্প্রসারণবাদ,আগ্রাসন বা কতৃর্ত্ববাদ প্রভৃতি বাদ দিয়ে বিশ^ যদি শান্তির পথে থাকতো তাহলে মৌলিক অনেক সমস্যাই পৃথিবীতে এত প্রকট হতো না। 

অলোক আচার্য
শিক্ষক ও মুক্তগদ্য লেখক