গণমাধ্যম ও আধুনিক বিশ্ব

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
২০ নভেম্বর, ২০২২, 1:01 AM

গণমাধ্যম ও আধুনিক বিশ্ব
গণমাধ্যম প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম শিক্ষা বিকশিত হয়েছে। গণমাধ্যম ও গণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের বার্তা গ্রহণে অবধারণগত এবং সমালোচনামূলক সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষা এ প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করবে। গণমাধ্যম সহায়তা শিক্ষা গণমাধ্যমের বার্তায় প্রবেশ যোগ্যতার পাশাপাশি বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের সক্ষমতা তৈরি করে। গণমাধ্যম প্রদত্ত বার্তাকে ব্যবহার, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমালোচনা ও মূল্যায়ন করার জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরি করার প্রক্রিয়াই গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা। তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা মানুষকে তথ্য ও গণমাধ্যমের ব্যবহারকারী হিসেবে তথ্যের ব্যাখ্যা ও তথ্যবহুল মতামত প্রকাশে সক্ষম করে তোলে। একই সঙ্গে তাদের নিজেদের অধিকারবলে তথ্য ও গণমাধ্যম বার্তার দক্ষ প্রস্তুতকারীতে পরিণত করে। আইএমএল হলো তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতার সমন্বয়।
তথ্য এবং গণমাধ্যম সাক্ষর হওয়ার উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সমাজে যোগদান করা; বুঝতে পারা, অনুসন্ধান, সৃষ্টি, যোগাযোগ ও সমালোচনা মূলক চিন্তা করায় ব্যক্তির দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন উপায়ে কার্যকরীভাবে কোনো বার্তার অধিগমন, সাজানো, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এটির রূপান্তরযোগ্য প্রকৃতির মধ্যে সৃজনশীল কাজ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত। দায়িত্বপূর্ণভাবে কোনো কিছু প্রকাশ ও সহযোগিতা করার জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোধশক্তি প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর মিডিয়া লিটারেসি গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। যেমন : গণমাধ্যমের বুদ্ধিমান ভোক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাবে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা। এ ছাড়া গণমাধ্যম বিশ্বের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের সংযুক্ত হওয়ার ফলে বাস্তব জীবন শিক্ষায় ব্যস্ত থাকবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমালোচনা মূলক চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হবে। গণমাধ্যম শিক্ষার শিক্ষার্থীদের পছন্দনীয় সমকালীন গণমাধ্যম উৎপাদনের নাম বুঝতে সাহায্য করে।
গণমাধ্যম শিক্ষা হলো অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে শিক্ষা প্রদান করার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা প্রদান করবে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। এই শিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে শুধু শিক্ষার্থীদেরই উপকার করে না বরং সমাজে উপকৃত হয়। আমরা গণমাধ্যম থেকে যেসব বার্তা গ্রহণ এবং তৈরি করি সেসব বার্তার জন্য গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার প্রয়োজন সক্রিয় অনুসন্ধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তা। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত বার্তাকে সমালোচনা ও সক্রিয় অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে দেখতে হলে শিক্ষার মধ্যে অবশ্যই বেশকিছু বিষয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শক্ত সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার অর্থ শুধু গণমাধ্যম বার্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করা নয়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের সমালোচনা করতে সহায়তা করে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম বার্তা সম্পর্কে অবগত করে এবং বার্তায় অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা আরও বেশি বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যাবে। গণমাধ্যমে বার্তার রিপ্রেজেন্টেশন শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করতে শিখবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা নিশ্চিত করে যে, মানুষ তার ব্যক্তিগত দক্ষতা, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা দিয়ে গণমাধ্যম বার্তা থেকে নিজস্ব অর্থ তৈরি করে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার ভালো বা খারাপ অর্থ উন্মোচন করার বিশ্লেষণাত্মকবোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হবে। নিজস্ব পছন্দের প্রেক্ষিতে বার্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও আলাদা হতে পারে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা গণমাধ্যমকে সামাজিকীকরণের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় যা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ। ১৯৯০ এর আগে, তথ্য সাক্ষরতার প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু মূলত গবেষণা দক্ষতা ছিল। ১৯৭০-এর দশকে উদীত একটি অধ্যয়ন হলো গণমাধ্যম সাক্ষরতা, প্রচলিতভাবে যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের সাহায্যে তথ্যের বিশ্লেষণ ও সরবরাহ করা। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তথ্য সাক্ষরতার পরিধি বিস্তৃত করে এর সঙ্গে গণমাধ্যম সাক্ষরতা সংযুক্ত করা হয়েছে।
তথ্য সাক্ষরতার বর্তমান অধ্যয়ন ও সম্মিলিত অধ্যয়নের মধ্যে পার্থক্য করতে 'তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা' শব্দটি ইউনেস্কো কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবেও পরিচিত। গ্রেগরি উমার-এর মতো শিক্ষকরাও এই ক্ষেত্রটিকে ইলেক্ট্রিসি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আইএমএল হলো তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতার সমন্বয়। তথ্য এবং গণমাধ্যম সাক্ষর হওয়ার উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সমাজে যোগদান করা; বুঝতে পারা, অনুসন্ধান, সৃষ্টি, যোগাযোগ ও সমালোচনা মূলক চিন্তা করায় ব্যক্তির দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন উপায়ে কার্যকরীভাবে কোনো বার্তার অধিগমন, সাজানো, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এটির রূপান্তরযোগ্য প্রকৃতির মধ্যে সৃজনশীল কাজ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত; দায়িত্বপূর্ণভাবে কোনো কিছু প্রকাশ ও সহযোগিতা করার জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোধশক্তি প্রয়োজন।
মূলধারার মিডিয়া তথা সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা বেতার, একই সঙ্গে হালের অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি বা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করছি। নিউ মিডিয়া বা বিকল্প মাধ্যম হিসেবেও এগুলো পরিচিত। নিউ মিডিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ইন্টারনেট নির্ভর ও ডিজিটাল মিডিয়া। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুক ও ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা টুইটার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত নিউ মিডিয়ার উদাহরণ। এর সঙ্গে রয়েছে ইন্সটাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব আর লাখ লাখ বস্নগ। আসলে মিডিয়া তো সমাজেরই আয়না। আজকের সমাজ যে পথে ধাবিত, মিডিয়া তার উল্টো পথে চলবে, সে তো সম্ভব নয়। যুগের পরিবর্তন একেবারে বদলে দিয়েছে মিডিয়ার চালচিত্র। আমাদের চোখের সামনেই দেখলাম প্রিন্ট থেকে টেলিভিশন, সেখান থেকে ওয়েব মাধ্যম।
প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ ইন্টারনেট আসায় দুনিয়াও এসে গেল হাতের মুঠোয়। মুক্ত অর্থনীতি, পণ্য সংস্কৃতি এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মিডিয়াকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে, সেটাও তো স্বাভাবিক। সেই প্রভাবের তালে তালেই সখ্যতা গড়ে উঠল অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গেও। মোট কথা, একদা যে আদশের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যম জন্ম নিয়েছিল মানবসমাজে, তার সংস্করণ, নতুন রূপ বা বিকল্প চাল এখন কিছু এমন মানুষের হাতে, যাদের সঙ্গে আর যাই হোক, প্রতিষ্ঠিত নীতি ও আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন। এর মাধ্যমে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সমগ্র পৃথিবী। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সমাজ জীবনের নানা ত্রম্নটিবিচ্যুতি পর্যালোচনা করে পথনির্দেশ করা। এজন্য সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বা চতুর্থ রাষ্ট্র বলা হয়। আসলে সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ। এ চোখ দিয়েই সরকার সমাজের অনেক ভেতর পর্যন্ত দেখতে পায়। সংবাদপত্রের সাহায্যে চলমান পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আমরা সহজে পরিচিত হতে পারি। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সাহিত্য ও যুদ্ধ বিগ্রহ সবকিছুই সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি। বিদ্রোহ-বিপস্নব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দেশের অজস্র চিত্র পাওয়া যায় সংবাদপত্রে। দেশে কোন মন্ত্রিসভা শপথ নিল, কে রাষ্ট্রপ্রধান হলো, কোন বিশিষ্ট লোক মারা গেল অথবা বিজ্ঞানের কী নতুন আবিষ্কার হলো, কে রাতারাতি বিখ্যাত হলেন, কে দুর্গমপথে পা বাড়াল, কোন পুরনো বন্ধুর সন্ধান পাওয়া গেল- এসব সংবাদপত্র আমাদের যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এ ছাড়া খেলাধুলা, আইন, আদালত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, খুন-জখম, দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, আমোদ-প্রমোদ, ধর্মকর্ম ইত্যাদি হাজারো সংবাদ থাকে সংবাদপত্রে।
আজকাল শিক্ষকরা পেপার পত্রিকা খুব একটা পড়েন না। সংবাদপত্র ছাড়া জ্ঞান আসবে কোত্থেকে? সংবাদপত্রকে বলা হয় চলমান ইতিহাস। চলন্ত ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে সুন্দর আগামীর জন্য। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সংবাদপত্র পড়ার যোগ্যতা অর্জন করাকে একটি প্রান্তিক যোগ্যতা হিসেবে সংযোজন করা উচিত। বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী বিপস্নব এনেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের কোনো সীমা নেই। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেট হলো নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের রাজা। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় ইন্টারনেট চোখের পলকে কোনো তথ্য পাঠিয়ে দেয় বা এনে দেয়। ইন্টারনেটকেন্দ্রিক অনলাইন গণমাধ্যম এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইন গণমাধ্যম অনেক সময় গুজব ছড়ায়। গুজবে কান দেবেন না। ফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেট, প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে থাকার কোনো উপায় নেই। যোগাযোগের জন্য এর ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে এর সঠিক ও ফলপ্রসূ ব্যবহার করা যাবে এই শিক্ষা থাকা উচিত।
সৃজনশীলতা থেকে উদ্ভাবনী চিন্তা আসে। আর তাই কম্পিউটারের সামনে বসে যন্ত্র হয়ে যাওয়ার কিছু নেই, সেটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতা থাকলে পাঠক, দর্শকরা পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রের কাছ থেকে গ্রহণ প্রক্রিয়াটি আত্মস্ত করতে পারতেন। এখন যে বিষয়টি চলছে যারা গণমাধ্যম পরিচালনা করছেন, অনুষ্ঠান তৈরি করছেন তারা এবং যাদের জন্য গণমাধ্যম উভয় পক্ষই সাক্ষরতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে যে বিষয় বা ঘটনাটি যেভাবে পরিবেশন করার কথা তা হচ্ছে না- ফলে স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ উঠছে ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ বা ইভটিজিং'র খবর এ ধরনের আরও ঘটনা সৃষ্টিকে প্রণোদিত করছে। অন্যদিকে পাঠক, শ্রোতা, দর্শকরা গণমাধ্যমের শিক্ষণীয় ও ইতিবাচক তথ্য নেওয়ার বিষয়গুলো দূরে ঠেলে দিয়ে শিখে নিচ্ছে-পরকীয়া, অপহরণ, খুন ও ধর্ষণের কৌশল।
গণমাধ্যম সাক্ষর দান অক্ষর জ্ঞান দানের মতোই চটজলদি সম্ভব নয়। প্রয়োজন গণমাধ্যম সাক্ষরতার আন্দোলন। প্রাথমিক স্তর থেকেই একে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ কাজে যত বিলম্ব ঘটবে, গণমাধ্যম বিস্ফোরণের কালো দিকগুলো ততই সমাজ ও রাষ্ট্রে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পরিশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি, গণমাধ্যম সাক্ষরতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। রাষ্ট্রের আধুনিকতা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে তার উন্নয়নে রাষ্ট্রকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার সবল ও দুর্বল দিকগুলোকে আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমস্যা সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা রাষ্ট্র জাতিকে কি উপহার দিয়ে থাকে? গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা কি নিছক শিক্ষা? এই বিষয়ে শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কার্যকরী করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়, আধুনিকতা ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা একে অন্যের পরিপূরক।
লেখক :সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
২০ নভেম্বর, ২০২২, 1:01 AM

গণমাধ্যম প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম শিক্ষা বিকশিত হয়েছে। গণমাধ্যম ও গণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের বার্তা গ্রহণে অবধারণগত এবং সমালোচনামূলক সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষা এ প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করবে। গণমাধ্যম সহায়তা শিক্ষা গণমাধ্যমের বার্তায় প্রবেশ যোগ্যতার পাশাপাশি বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের সক্ষমতা তৈরি করে। গণমাধ্যম প্রদত্ত বার্তাকে ব্যবহার, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সমালোচনা ও মূল্যায়ন করার জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরি করার প্রক্রিয়াই গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা। তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা মানুষকে তথ্য ও গণমাধ্যমের ব্যবহারকারী হিসেবে তথ্যের ব্যাখ্যা ও তথ্যবহুল মতামত প্রকাশে সক্ষম করে তোলে। একই সঙ্গে তাদের নিজেদের অধিকারবলে তথ্য ও গণমাধ্যম বার্তার দক্ষ প্রস্তুতকারীতে পরিণত করে। আইএমএল হলো তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতার সমন্বয়।
তথ্য এবং গণমাধ্যম সাক্ষর হওয়ার উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সমাজে যোগদান করা; বুঝতে পারা, অনুসন্ধান, সৃষ্টি, যোগাযোগ ও সমালোচনা মূলক চিন্তা করায় ব্যক্তির দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন উপায়ে কার্যকরীভাবে কোনো বার্তার অধিগমন, সাজানো, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এটির রূপান্তরযোগ্য প্রকৃতির মধ্যে সৃজনশীল কাজ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত। দায়িত্বপূর্ণভাবে কোনো কিছু প্রকাশ ও সহযোগিতা করার জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোধশক্তি প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর মিডিয়া লিটারেসি গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। যেমন : গণমাধ্যমের বুদ্ধিমান ভোক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাবে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা। এ ছাড়া গণমাধ্যম বিশ্বের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষের সংযুক্ত হওয়ার ফলে বাস্তব জীবন শিক্ষায় ব্যস্ত থাকবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমালোচনা মূলক চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হবে। গণমাধ্যম শিক্ষার শিক্ষার্থীদের পছন্দনীয় সমকালীন গণমাধ্যম উৎপাদনের নাম বুঝতে সাহায্য করে।
গণমাধ্যম শিক্ষা হলো অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে থেকে শিক্ষা প্রদান করার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষা প্রদান করবে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। এই শিক্ষা ব্যক্তিগতভাবে শুধু শিক্ষার্থীদেরই উপকার করে না বরং সমাজে উপকৃত হয়। আমরা গণমাধ্যম থেকে যেসব বার্তা গ্রহণ এবং তৈরি করি সেসব বার্তার জন্য গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষার প্রয়োজন সক্রিয় অনুসন্ধান এবং সমালোচনামূলক চিন্তা। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত বার্তাকে সমালোচনা ও সক্রিয় অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে দেখতে হলে শিক্ষার মধ্যে অবশ্যই বেশকিছু বিষয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শক্ত সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার অর্থ শুধু গণমাধ্যম বার্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করা নয়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমের সমালোচনা করতে সহায়তা করে।
গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যম বার্তা সম্পর্কে অবগত করে এবং বার্তায় অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির জন্য অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা আরও বেশি বোঝাপড়ার দিকে নিয়ে যাবে। গণমাধ্যমে বার্তার রিপ্রেজেন্টেশন শিক্ষার্থীরা খুঁজে বের করতে শিখবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা নিশ্চিত করে যে, মানুষ তার ব্যক্তিগত দক্ষতা, বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা দিয়ে গণমাধ্যম বার্তা থেকে নিজস্ব অর্থ তৈরি করে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার ভালো বা খারাপ অর্থ উন্মোচন করার বিশ্লেষণাত্মকবোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হবে। নিজস্ব পছন্দের প্রেক্ষিতে বার্তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ও আলাদা হতে পারে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা গণমাধ্যমকে সামাজিকীকরণের এজেন্ট হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় যা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ। ১৯৯০ এর আগে, তথ্য সাক্ষরতার প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু মূলত গবেষণা দক্ষতা ছিল। ১৯৭০-এর দশকে উদীত একটি অধ্যয়ন হলো গণমাধ্যম সাক্ষরতা, প্রচলিতভাবে যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের সাহায্যে তথ্যের বিশ্লেষণ ও সরবরাহ করা। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তথ্য সাক্ষরতার পরিধি বিস্তৃত করে এর সঙ্গে গণমাধ্যম সাক্ষরতা সংযুক্ত করা হয়েছে।
তথ্য সাক্ষরতার বর্তমান অধ্যয়ন ও সম্মিলিত অধ্যয়নের মধ্যে পার্থক্য করতে 'তথ্য ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা' শব্দটি ইউনেস্কো কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হিসেবেও পরিচিত। গ্রেগরি উমার-এর মতো শিক্ষকরাও এই ক্ষেত্রটিকে ইলেক্ট্রিসি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আইএমএল হলো তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতার সমন্বয়। তথ্য এবং গণমাধ্যম সাক্ষর হওয়ার উদ্দেশ্য হলো ডিজিটাল সমাজে যোগদান করা; বুঝতে পারা, অনুসন্ধান, সৃষ্টি, যোগাযোগ ও সমালোচনা মূলক চিন্তা করায় ব্যক্তির দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন উপায়ে কার্যকরীভাবে কোনো বার্তার অধিগমন, সাজানো, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এটির রূপান্তরযোগ্য প্রকৃতির মধ্যে সৃজনশীল কাজ ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত; দায়িত্বপূর্ণভাবে কোনো কিছু প্রকাশ ও সহযোগিতা করার জন্য নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বোধশক্তি প্রয়োজন।
মূলধারার মিডিয়া তথা সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা বেতার, একই সঙ্গে হালের অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি বা তথ্য আদান-প্রদানে ব্যবহার করছি। নিউ মিডিয়া বা বিকল্প মাধ্যম হিসেবেও এগুলো পরিচিত। নিউ মিডিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ইন্টারনেট নির্ভর ও ডিজিটাল মিডিয়া। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা ফেসবুক ও ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করা টুইটার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত নিউ মিডিয়ার উদাহরণ। এর সঙ্গে রয়েছে ইন্সটাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব আর লাখ লাখ বস্নগ। আসলে মিডিয়া তো সমাজেরই আয়না। আজকের সমাজ যে পথে ধাবিত, মিডিয়া তার উল্টো পথে চলবে, সে তো সম্ভব নয়। যুগের পরিবর্তন একেবারে বদলে দিয়েছে মিডিয়ার চালচিত্র। আমাদের চোখের সামনেই দেখলাম প্রিন্ট থেকে টেলিভিশন, সেখান থেকে ওয়েব মাধ্যম।
প্রযুক্তির কল্যাণে অর্থাৎ ইন্টারনেট আসায় দুনিয়াও এসে গেল হাতের মুঠোয়। মুক্ত অর্থনীতি, পণ্য সংস্কৃতি এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি মিডিয়াকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে, সেটাও তো স্বাভাবিক। সেই প্রভাবের তালে তালেই সখ্যতা গড়ে উঠল অন্ধকার দুনিয়ার সঙ্গেও। মোট কথা, একদা যে আদশের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যম জন্ম নিয়েছিল মানবসমাজে, তার সংস্করণ, নতুন রূপ বা বিকল্প চাল এখন কিছু এমন মানুষের হাতে, যাদের সঙ্গে আর যাই হোক, প্রতিষ্ঠিত নীতি ও আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের তৃতীয় নয়ন। এর মাধ্যমে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে সমগ্র পৃথিবী। সংবাদপত্রের প্রধান কাজ সমাজ জীবনের নানা ত্রম্নটিবিচ্যুতি পর্যালোচনা করে পথনির্দেশ করা। এজন্য সংবাদপত্রকে ফোর্থ স্টেট বা চতুর্থ রাষ্ট্র বলা হয়। আসলে সংবাদপত্র হচ্ছে গণতন্ত্রের চোখ। এ চোখ দিয়েই সরকার সমাজের অনেক ভেতর পর্যন্ত দেখতে পায়। সংবাদপত্রের সাহায্যে চলমান পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আমরা সহজে পরিচিত হতে পারি। রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সাহিত্য ও যুদ্ধ বিগ্রহ সবকিছুই সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি। বিদ্রোহ-বিপস্নব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দেশের অজস্র চিত্র পাওয়া যায় সংবাদপত্রে। দেশে কোন মন্ত্রিসভা শপথ নিল, কে রাষ্ট্রপ্রধান হলো, কোন বিশিষ্ট লোক মারা গেল অথবা বিজ্ঞানের কী নতুন আবিষ্কার হলো, কে রাতারাতি বিখ্যাত হলেন, কে দুর্গমপথে পা বাড়াল, কোন পুরনো বন্ধুর সন্ধান পাওয়া গেল- এসব সংবাদপত্র আমাদের যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এ ছাড়া খেলাধুলা, আইন, আদালত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, খুন-জখম, দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, আমোদ-প্রমোদ, ধর্মকর্ম ইত্যাদি হাজারো সংবাদ থাকে সংবাদপত্রে।
আজকাল শিক্ষকরা পেপার পত্রিকা খুব একটা পড়েন না। সংবাদপত্র ছাড়া জ্ঞান আসবে কোত্থেকে? সংবাদপত্রকে বলা হয় চলমান ইতিহাস। চলন্ত ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে সুন্দর আগামীর জন্য। প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সংবাদপত্র পড়ার যোগ্যতা অর্জন করাকে একটি প্রান্তিক যোগ্যতা হিসেবে সংযোজন করা উচিত। বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী বিপস্নব এনেছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের কোনো সীমা নেই। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলে। ইন্টারনেট হলো নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কের রাজা। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় ইন্টারনেট চোখের পলকে কোনো তথ্য পাঠিয়ে দেয় বা এনে দেয়। ইন্টারনেটকেন্দ্রিক অনলাইন গণমাধ্যম এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইন গণমাধ্যম অনেক সময় গুজব ছড়ায়। গুজবে কান দেবেন না। ফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেট, প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে থাকার কোনো উপায় নেই। যোগাযোগের জন্য এর ব্যবহার করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে এর সঠিক ও ফলপ্রসূ ব্যবহার করা যাবে এই শিক্ষা থাকা উচিত।
সৃজনশীলতা থেকে উদ্ভাবনী চিন্তা আসে। আর তাই কম্পিউটারের সামনে বসে যন্ত্র হয়ে যাওয়ার কিছু নেই, সেটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার প্রয়োজন। গণমাধ্যম সাক্ষরতা থাকলে পাঠক, দর্শকরা পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রের কাছ থেকে গ্রহণ প্রক্রিয়াটি আত্মস্ত করতে পারতেন। এখন যে বিষয়টি চলছে যারা গণমাধ্যম পরিচালনা করছেন, অনুষ্ঠান তৈরি করছেন তারা এবং যাদের জন্য গণমাধ্যম উভয় পক্ষই সাক্ষরতার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে যে বিষয় বা ঘটনাটি যেভাবে পরিবেশন করার কথা তা হচ্ছে না- ফলে স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ উঠছে ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ বা ইভটিজিং'র খবর এ ধরনের আরও ঘটনা সৃষ্টিকে প্রণোদিত করছে। অন্যদিকে পাঠক, শ্রোতা, দর্শকরা গণমাধ্যমের শিক্ষণীয় ও ইতিবাচক তথ্য নেওয়ার বিষয়গুলো দূরে ঠেলে দিয়ে শিখে নিচ্ছে-পরকীয়া, অপহরণ, খুন ও ধর্ষণের কৌশল।
গণমাধ্যম সাক্ষর দান অক্ষর জ্ঞান দানের মতোই চটজলদি সম্ভব নয়। প্রয়োজন গণমাধ্যম সাক্ষরতার আন্দোলন। প্রাথমিক স্তর থেকেই একে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ কাজে যত বিলম্ব ঘটবে, গণমাধ্যম বিস্ফোরণের কালো দিকগুলো ততই সমাজ ও রাষ্ট্রে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পরিশেষে আমরা এ কথা বলতে পারি, গণমাধ্যম সাক্ষরতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। রাষ্ট্রের আধুনিকতা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে তার উন্নয়নে রাষ্ট্রকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতার সবল ও দুর্বল দিকগুলোকে আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমস্যা সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা রাষ্ট্র জাতিকে কি উপহার দিয়ে থাকে? গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা কি নিছক শিক্ষা? এই বিষয়ে শিক্ষণ প্রশিক্ষণ কার্যকরী করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তবে এ কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা যায়, আধুনিকতা ও গণমাধ্যম সাক্ষরতা শিক্ষা একে অন্যের পরিপূরক।
লেখক :সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি