শিরোনামঃ
জাতিসংঘে নারী সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী জবাবদিহিতাপূর্ণ ফোরাম গঠনের আহ্বান বাংলাদেশের বিজিবি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ বিএসিএল বেস্ট এসোসিয়েট ক্লাব লিমিটেড এর সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতা কক্সবাজারে এসিআই ক্রপ কেয়ারের পরিবেশক সম্মেলন: কৃষি উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতি জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল নিটোরে অর্থ বছরে সাড়ে ৩কোটি টাকার অষুধ ক্রয় করে যা বিগত ৩০ বছরেও হয়নি ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত

বিজিবি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ

#
news image

“আমি সরকারি চাকরি করি, তোরা কিছুই করতে পারবি না ।” তিনি আরও বলেন, “আদালতও আমার কিছু করতে পারবে না ।..শরীয়তপুর: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী। শরীয়তপুরের বাসিন্দা সুনিয়া আক্তার (১৮) তার স্বামী বিজিবি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারী, পদবি: সিপাহী, কর্মস্থল: বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ন, সুলতানপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন । এই ঘটনায় তিনি বিজিবি সদর দপ্তরেও একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছেন ।

সুনিয়া আক্তারের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মুসলিম শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয় । বিয়ের সময় সুনিয়ার পরিবার তাকে চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপহার দেয় । কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন । প্রথমে তারা ৮ লাখ টাকা এবং পরে একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে । মোটরসাইকেল কেনার টাকা দেওয়া হলেও তা আর ফেরত দেওয়া হয়নি । যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে জসিম উদ্দিন সুনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন ।

২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি তারিখে সুনিয়াকে তার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান জসিম উদ্দিন এবং জানান, যৌতুক না দিলে তাকে আর ফিরিয়ে নেওয়া হবে না । এই ঘটনার পর সুনিয়া আক্তার সখিপুর থানায় যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় একটি মামলা (সি.আর. মামলা নম্বর ৫২/২০২৫) দায়ের করেন ।

মামলা দায়েরের পর গত ২২ মে, ২০২৫ তারিখে আদালত থেকে ফেরার পথে জসিম উদ্দিন বেপারী ও তার সহযোগীরা সুনিয়া ও তার বাবার ওপর হামলা করেন । সুনিয়া জানান, জসিম উদ্দিন তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারেন এবং তার বাবাকেও মারাত্মকভাবে জখম করেন । এই হামলার পর সুনিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী ২০০৩) আইনের ১১(গ)/৩০ ধারা অনুযায়ী ভেদরগঞ্জ আদালতে আরও একটি মামলা (সি.আর. মামলা নম্বর ৬২/২০২৫) দায়ের করেন । শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর সুনিয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন । তার মেডিকেল কাগজপত্রে শারীরিক নির্যাতনের (Physical Assault) বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ।

সুনিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, জসিম উদ্দিন প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “আমি সরকারি চাকরি করি, তোরা কিছুই করতে পারবি না ।” তিনি আরও বলেন, “আদালতও আমার কিছু করতে পারবে না ।” এ ধরনের মন্তব্যকে সুনিয়া আক্তার রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে করেন, যা বিজিবির মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ।

আইনজীবী গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় দ্রুত তদন্ত শুরু হওয়া উচিত, বিশেষ করে যখন অভিযুক্ত একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য ।” তিনি আরও বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ফৌজদারি দণ্ডের পাশাপাশি চাকরিচ্যুতির মতো প্রশাসনিক শাস্তিরও মুখোমুখি হতে পারেন । একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন যে, “বাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বাড়ির এক নারী জানান, “প্রতিনিয়ত মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালাত জসিম। মনে হয় নেশাগ্রস্ত থাকে, তা না হলে এভাবে কেউ নির্যাতন করতে পারে না।” একজন দোকানদারও একই ধরনের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন । সুনিয়ার বড় ভাই জানান, “টাকার জন্য আমার বোনকে নিয়মিত নির্যাতন করত জসিম। শুনেছি, সে অনলাইন জুয়ায় জড়িত ছিল ।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা করার পরও তার বোন ও পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে । এ বিষয়ে এলাকার চেয়ারম্যান বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এর আগেও সমাধানের চেষ্টা করেছি। তবে জসিম উদ্দিন দ্বিতীয়বার একই কাজ করবে এটা আমার জানা ছিল না।”

সুনিয়া আক্তার তার আবেদনে অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিভাগীয় তদন্ত ও সাময়িক বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন । তিনি আরও বলেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সক্রিয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে এখন প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রের এই গর্বিত বাহিনী কি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে, নাকি ঘটনাটি আবারো ধামাচাপা পড়ে যাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫,  8:59 PM

news image

“আমি সরকারি চাকরি করি, তোরা কিছুই করতে পারবি না ।” তিনি আরও বলেন, “আদালতও আমার কিছু করতে পারবে না ।..শরীয়তপুর: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক ও শারীরিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী। শরীয়তপুরের বাসিন্দা সুনিয়া আক্তার (১৮) তার স্বামী বিজিবি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারী, পদবি: সিপাহী, কর্মস্থল: বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ন, সুলতানপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন । এই ঘটনায় তিনি বিজিবি সদর দপ্তরেও একটি আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছেন ।

সুনিয়া আক্তারের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মুসলিম শরীয়াহ মোতাবেক তাদের বিয়ে হয় । বিয়ের সময় সুনিয়ার পরিবার তাকে চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপহার দেয় । কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন । প্রথমে তারা ৮ লাখ টাকা এবং পরে একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে । মোটরসাইকেল কেনার টাকা দেওয়া হলেও তা আর ফেরত দেওয়া হয়নি । যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে জসিম উদ্দিন সুনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন ।

২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি তারিখে সুনিয়াকে তার বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে চলে যান জসিম উদ্দিন এবং জানান, যৌতুক না দিলে তাকে আর ফিরিয়ে নেওয়া হবে না । এই ঘটনার পর সুনিয়া আক্তার সখিপুর থানায় যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় একটি মামলা (সি.আর. মামলা নম্বর ৫২/২০২৫) দায়ের করেন ।

মামলা দায়েরের পর গত ২২ মে, ২০২৫ তারিখে আদালত থেকে ফেরার পথে জসিম উদ্দিন বেপারী ও তার সহযোগীরা সুনিয়া ও তার বাবার ওপর হামলা করেন । সুনিয়া জানান, জসিম উদ্দিন তাকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারেন এবং তার বাবাকেও মারাত্মকভাবে জখম করেন । এই হামলার পর সুনিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী ২০০৩) আইনের ১১(গ)/৩০ ধারা অনুযায়ী ভেদরগঞ্জ আদালতে আরও একটি মামলা (সি.আর. মামলা নম্বর ৬২/২০২৫) দায়ের করেন । শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর সুনিয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন । তার মেডিকেল কাগজপত্রে শারীরিক নির্যাতনের (Physical Assault) বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে ।

সুনিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, জসিম উদ্দিন প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “আমি সরকারি চাকরি করি, তোরা কিছুই করতে পারবি না ।” তিনি আরও বলেন, “আদালতও আমার কিছু করতে পারবে না ।” এ ধরনের মন্তব্যকে সুনিয়া আক্তার রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা বলে মনে করেন, যা বিজিবির মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ।

আইনজীবী গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “এই অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় দ্রুত তদন্ত শুরু হওয়া উচিত, বিশেষ করে যখন অভিযুক্ত একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য ।” তিনি আরও বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ফৌজদারি দণ্ডের পাশাপাশি চাকরিচ্যুতির মতো প্রশাসনিক শাস্তিরও মুখোমুখি হতে পারেন । একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন যে, “বাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের বাড়ির এক নারী জানান, “প্রতিনিয়ত মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালাত জসিম। মনে হয় নেশাগ্রস্ত থাকে, তা না হলে এভাবে কেউ নির্যাতন করতে পারে না।” একজন দোকানদারও একই ধরনের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন । সুনিয়ার বড় ভাই জানান, “টাকার জন্য আমার বোনকে নিয়মিত নির্যাতন করত জসিম। শুনেছি, সে অনলাইন জুয়ায় জড়িত ছিল ।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা করার পরও তার বোন ও পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে । এ বিষয়ে এলাকার চেয়ারম্যান বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এর আগেও সমাধানের চেষ্টা করেছি। তবে জসিম উদ্দিন দ্বিতীয়বার একই কাজ করবে এটা আমার জানা ছিল না।”

সুনিয়া আক্তার তার আবেদনে অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন বেপারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিভাগীয় তদন্ত ও সাময়িক বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন । তিনি আরও বলেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সক্রিয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোঃ জসিম উদ্দিন বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে এখন প্রশ্ন উঠছে, রাষ্ট্রের এই গর্বিত বাহিনী কি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে, নাকি ঘটনাটি আবারো ধামাচাপা পড়ে যাবে?