ঠাকুরগাঁওয়ে গম সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ টন প্রতি লোকসান ৩ হাজার টাকা

জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
৩১ মে, ২০২২, 11:19 PM

ঠাকুরগাঁওয়ে গম সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ টন প্রতি লোকসান ৩ হাজার টাকা
দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশের মোট উৎপাদিত গমের বেশির ভাগই উৎপাদন হয় এখানে। তবে গমের ফলন ভালো হলেও সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ।
এ বছর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা আর ঠাকুরগাঁওয়ে হাটবাজারে প্রতি কেজি গম বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা দরে। তাই কৃষকরা গম বিক্রি করছেন খোলাবাজারে। তাই চলতি মৌসুমে জেলায় গম সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ। শুধুমাত্র উদ্বোধনী দিনে জেলার চার উপজেলায় এক টন করে গম সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। এরপর থেকে থমকে গেছে জেলায় খাদ্য বিভাগের গম সংগ্রহ অভিযান ।
কৃষকরা বলছেন, খোলাবাজারে গমের দাম ৩২ টাকা ৫০ পয়সা আর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম ২৮ টাকা। তাই খাদ্য বিভাগের কাছে গম বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এজন্য কৃষকরা খাদ্য বিভাগে গম বিক্রি না করে খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চৌধুরীহাট, খোঁচাবাড়ি, ভুল্লী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী, রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ও হরিপুরের যাদুরানী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের দাম হচ্ছে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শুরু চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলায় গম সংগ্রহ হয়েছে পাঁচ মেট্রিক টনেরও কম ।
সদরের উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকার কৃষক আফজালুর রহমান বলেন, গত বছর বাজারে গমের দাম কম ছিল তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করেছি। কিছু টাকা লাভও হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে গম কিনছে, সে হিসাবে প্রতি টনে তিন হাজার টাকার ওপরে লোকসান হবে। আমরা যেহেতু বাজারেই গমের দাম বেশি পাচ্ছি তাহলে কেন সরকারের কাছে গম বিক্রি করতে যাবো?
জেলার বড় খোঁচাবাড়ি এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মতো অন্য কৃষকরাও তাদের গম খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন। এখন সরকার গমের দাম বাড়ালেও কৃষকদের কাছ থেকে হয়তো কম কিনতে পারবে না। কারণ আমাদের কাছে তো গম নেই। ফলে চড়া মূল্যে মজুদদারের কাছ থেকে কিনতে হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য গত ১৮ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় লটারির মাধ্যমে এক হাজার ৯৭৫ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আগ্রহী কৃষক না পাওয়ায় সেখানে চলতি বছরের গম সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা যায়নি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার খাদ্যগুদামে গম বিক্রির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষক খসিয়ার রহমান বলেন, এ বছর ছয় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘায় ৩০ মণ করে ১৮০ মণ গম পেয়েছি। কিন্তু সরকারি দরের চেয়ে বাজারে দাম বেশি, তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করার কোনো আগ্রহ নেই।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল রায় বলেন, সরকারিভাবে ২৮ টাকা কেজিতে গম কিনতে বলা হয়েছে। আর স্থানীয় বাজারে এখন সরকারি দামের চেয়েও বেশি দামে গম কেনাবেচা হচ্ছে। এ কারণে নির্বাচিত কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করছেন না।
গত ১৩ এপ্রিল হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী এলাকার কৃষক মোজাফ্ফর হোসেনের কাছ থেকে এক মেট্রিকটন গম নিয়ে উপজেলায় গম সংগ্রহকার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এরপর ওই উপজেলায় আর কোনো কৃষক সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে আসেননি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের আওতায় সারা দেশে ২৮ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিকটন গম কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৮২ মেট্রিক টন।
ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ২৪ হাজার ২৮২ কৃষককে সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮ টাকা। আর বর্তমানে জেলার খোলা হাটবাজারে এখন প্রতি কেজি গম ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা যেখানে তাদের ফসলের দাম বেশি পাবেন সেখানেই তো তারা বিক্রি করবেন এটা স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবং চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন।
জেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
৩১ মে, ২০২২, 11:19 PM

দেশের উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশের মোট উৎপাদিত গমের বেশির ভাগই উৎপাদন হয় এখানে। তবে গমের ফলন ভালো হলেও সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ।
এ বছর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা আর ঠাকুরগাঁওয়ে হাটবাজারে প্রতি কেজি গম বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা দরে। তাই কৃষকরা গম বিক্রি করছেন খোলাবাজারে। তাই চলতি মৌসুমে জেলায় গম সংগ্রহ করতে পারছে না খাদ্য বিভাগ। শুধুমাত্র উদ্বোধনী দিনে জেলার চার উপজেলায় এক টন করে গম সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। এরপর থেকে থমকে গেছে জেলায় খাদ্য বিভাগের গম সংগ্রহ অভিযান ।
কৃষকরা বলছেন, খোলাবাজারে গমের দাম ৩২ টাকা ৫০ পয়সা আর সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম ২৮ টাকা। তাই খাদ্য বিভাগের কাছে গম বিক্রি করতে গেলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এজন্য কৃষকরা খাদ্য বিভাগে গম বিক্রি না করে খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চৌধুরীহাট, খোঁচাবাড়ি, ভুল্লী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী, রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ও হরিপুরের যাদুরানী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি গমের দাম হচ্ছে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান শুরু চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলায় গম সংগ্রহ হয়েছে পাঁচ মেট্রিক টনেরও কম ।
সদরের উপজেলার চৌধুরীহাট এলাকার কৃষক আফজালুর রহমান বলেন, গত বছর বাজারে গমের দাম কম ছিল তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করেছি। কিছু টাকা লাভও হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর সরকার ২৮ টাকা কেজি দরে গম কিনছে, সে হিসাবে প্রতি টনে তিন হাজার টাকার ওপরে লোকসান হবে। আমরা যেহেতু বাজারেই গমের দাম বেশি পাচ্ছি তাহলে কেন সরকারের কাছে গম বিক্রি করতে যাবো?
জেলার বড় খোঁচাবাড়ি এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার মতো অন্য কৃষকরাও তাদের গম খোলাবাজারেই বিক্রি করছেন। এখন সরকার গমের দাম বাড়ালেও কৃষকদের কাছ থেকে হয়তো কম কিনতে পারবে না। কারণ আমাদের কাছে তো গম নেই। ফলে চড়া মূল্যে মজুদদারের কাছ থেকে কিনতে হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য গত ১৮ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় লটারির মাধ্যমে এক হাজার ৯৭৫ জন কৃষককে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু আগ্রহী কৃষক না পাওয়ায় সেখানে চলতি বছরের গম সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা যায়নি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার খাদ্যগুদামে গম বিক্রির জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষক খসিয়ার রহমান বলেন, এ বছর ছয় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। এতে প্রতি বিঘায় ৩০ মণ করে ১৮০ মণ গম পেয়েছি। কিন্তু সরকারি দরের চেয়ে বাজারে দাম বেশি, তাই সরকারি গুদামে গম বিক্রি করার কোনো আগ্রহ নেই।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল রায় বলেন, সরকারিভাবে ২৮ টাকা কেজিতে গম কিনতে বলা হয়েছে। আর স্থানীয় বাজারে এখন সরকারি দামের চেয়েও বেশি দামে গম কেনাবেচা হচ্ছে। এ কারণে নির্বাচিত কৃষকরা খাদ্যগুদামে গম বিক্রি করছেন না।
গত ১৩ এপ্রিল হরিপুর উপজেলার চৌরঙ্গী এলাকার কৃষক মোজাফ্ফর হোসেনের কাছ থেকে এক মেট্রিকটন গম নিয়ে উপজেলায় গম সংগ্রহকার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এরপর ওই উপজেলায় আর কোনো কৃষক সরকারি গুদামে গম বিক্রি করতে আসেননি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহের আওতায় সারা দেশে ২৮ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ মেট্রিকটন গম কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলায় গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৮২ মেট্রিক টন।
ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ২৪ হাজার ২৮২ কৃষককে সরকারি গুদামে গম বিক্রির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয় ২৮ টাকা। আর বর্তমানে জেলার খোলা হাটবাজারে এখন প্রতি কেজি গম ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা যেখানে তাদের ফসলের দাম বেশি পাবেন সেখানেই তো তারা বিক্রি করবেন এটা স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরকারিভাবে গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁও জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবং চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৯৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন।