সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা নয়, সাংবাদিক নিবন্ধন আইন করতে হবে

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার
০৭ জুন, ২০২২, 10:16 PM

সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা নয়, সাংবাদিক নিবন্ধন আইন করতে হবে
সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা, যে পেশায় আসতে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়েনা। এই পেশায় আসতে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো তাহলে কাজী নজরুল, আল মাহমুদরা কি সাংবাদিকতা করতে পারতেন?
পেশাটা খুবই দামী ও মহৎ হওয়ায় এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নেই। রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। যারা দেশ চালান সেই মন্ত্রী/এমপি হওয়ার জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না; তাই বলে কি গণ্ডমূর্খরা এমপি/মন্ত্রী ও সাংবাদিক হবে? না, তা হতে পারে না। মন্ত্রী/এমপি যারা হন, ব্যতিক্রম বাদ দিলে দেখবেন, বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত। ঠিক তেমনই পেশাদার সাংবাদিকদের বড় অংশটিই উচ্চশিক্ষিত।
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকতায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না থাকায় এখন এই বিষয়টির সুযোগ নিচ্ছে টাউট, বাটপার ও অর্ধশিক্ষিত অনেকেই। দেখা যায় ঠিকমতো দু’লাইন লিখতে পারে না, এমন লোকও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। এমনকি তার নামের আগে সাংবাদিক ব্যবহার না করলে সে মাইন্ড করে। অনেক জায়গায় দেখা যায়, সাংবাদিক মানেই অনেকের কাছে অর্ধশিক্ষিত, ২০০/৩০০ টাকার দালাল ইত্যাদি জাতীয় লোককে বুঝায়।
এই ট্রেন্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নিবন্ধনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিবন্ধিতরাই কেবল সাংবাদিকতা করতে পারবে, অন্য কেউ না। সরকার আইন করে এটা বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে অনেক দিন থেকে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে এর অগ্রগতি হচ্ছে না। ভুয়া সাংবাদিক, অপসাংবাদিকতা, সাংবাদিকতার নামে টাউট-বাটপারী ইত্যাদি দূর করার জন্য সাংবাদিক হওয়ার জন্য নিবন্ধনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবী। মনে রাখবেন, আন্ডার মেট্রিক থেকে এখন আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা আল মাহমুদ তৈরী হবে না।
আমাকে একজন প্রশ্ন করলেন যে, সনদের ব্যবস্থা স্বাধীন সাংবাদিকতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কি? সেই উত্তরে আমি বললাম - সনদের অর্থ এই নয় যে সাংবাদিকতায় বাধা সৃষ্টি করা। মূলত সাংবাদিকদের সমন্বিত করা, সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এই ব্যবস্থা দরকার। সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলমত দেখা হবে না, পরীক্ষায় যাঁরা পাস করবেন তাঁরাই সাংবাদিকতা করবেন। আর পরীক্ষার সিলেবাস কী হবে, পরীক্ষার ধরন কী হবে, তা সাংবাদিক প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতেই করতে হবে। প্রকৃত সাংবাদিকরা যখন কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হবেন ও সনদ পাবেন, তখন ভুয়া বা অপসাংবাদিকরা সুবিধা করতে পারবে না। যেমন ধরুন, একজন ছাত্র মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেই চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে পারে না, আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেই কেউ আইন পেশায় যেতে পারে না। ডাক্তার সনদ নেন বিএমডিসি থেকে এবং আইনজীবী বার কাউন্সিল থেকে সনদ ছাড়া আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারেন না। তেমনই সাংবাদিকতা করতে হলে প্রেস কাউন্সিলের সনদ নেওয়াও বাধ্যতামূলক করতে হবে।
যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাস করে আসবেন তাঁদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নয়, শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়ার বিধান কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাতীয় দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিকদের তালিকা প্রেস কাউন্সিলে মাধ্যমে সনদ ইস্যু করতে হবে। তবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের পরীক্ষা নেওয়া দরকার। এসব এখন প্রাথমিকভাবে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। প্রেস কাউন্সিলের সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতেই একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। যাতে সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়।
এখন আমরা কী দেখছি, পঞ্চম শ্রেণি আর অষ্টম শ্রেণি পাস করে সাংবাদিকতায় আসছে। পানের দোকানদার, চায়ের দোকানিও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। ফেসবুক চালায় সেও মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস লাগিয়ে ঘুরছে। রাস্তায় বের হলেই সাংবাদিক লেখা গাড়ির ছড়াছড়ি। আসলে তাদের বেশির ভাগই সাংবাদিক নয়, ভুয়া সাংবাদিক। এই ভুয়া সাংবাদিকদের কারণে সাধারণ মানুষ যেমন জিম্মি, ঠিক তেমনি প্রকৃত সাংবাদিক ও তাঁদের মহান পেশাটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সম্পাদকদের কতটুকু যোগ্যতা থাকতে হবে, তা নির্ধারিত না থাকায় যে কেউ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতায় যাঁদের কোনো ধরনের যোগ্যতা নেই তারাই যখন সম্পাদক হচ্ছেন, তখন প্রকৃত সাংবাদিকদের সুনাম রক্ষার উপায় কী?
এই সাংবাদিকতা পেশার সুনাম যেন আর ক্ষুণ্ন না হয় সে জন্যই আমাদের সংশ্লিষ্ট সকলকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবাদিকরা যখন প্রেস কাউন্সিলের সনদধারী হবেন, সেই সাংবাদিকদের নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানসহ বিস্তারিত তথ্য কাউন্সিলের ওয়েবসাইটের তালিকায় দেওয়া থাকবে। এখন যদি কোনো অসাধু ব্যক্তি কোনো প্রকৃত সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীরা মোবাইল ফোনে কিংবা কম্পিউটারে অনলাইনে প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করে নিতে পারবে সে আসল সাংবাদিক, নাকি নকল সাংবাদিক। সনদধারী হলে ইচ্ছে করলেই কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবে না। পরিচয় দিতে হলে সনদ লাগবে, যা প্রেস কাউন্সিলে পরীক্ষার মাধ্যমেই নিতে হবে।
প্রেস কাউন্সিলে একজন সাংবাদিকের পরিচয় শুধু সাংবাদিক। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বলে কিছুই নেই। যে দলের সমর্থক হোন না কেন, পরীক্ষায় পাস করলে তিনি সনদ পাবেন। একজন প্রকৃত সাংবাদিক কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হলে সম্মানিত বোধ করবেন। এখানে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। অধিকার চ্যুত করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই, কোনো দিন করাও হবে না। তবে অযোগ্য কিংবা ভুয়া কোনো সাংবাদিকের প্রেস কাউন্সিলের সনদ পাওয়ার কোনো সুযোগ তখন আর থাকবে না। এসব বিষয়ে কাউন্সিলের সদস্যদের মতামত বাধ্যতামূলক করতে হবে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সনদের ব্যবস্থা করতে হবে। মফস্বল পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত করতে হবে। এসব পরীক্ষায় সাংবাদিকদের প্রতিনিধিও থাকবেন। পরীক্ষার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতায় একটি সিলেবাস তৈরি করতে হবে। সেই সিলেবাসের ওপর তাঁদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করতে পারবেন না। আর সিলেবাস গণমাধ্যমে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পরামর্শের ভিত্তিতেই তৈরি করতে হবে।
তবে কিছুকিছু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, সেসব সাংবাদিককে নিয়েও চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে এটা ত্রুটিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে প্রেস কাউন্সিল কাজ করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কী করলে নূন্যতম একটা যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়।
বর্তমানে সারা দেশে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আছে। এখানে সাংবাদিকতার যেমন উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে, তেমনি অবনতিও হচ্ছে। সাংবাদিকতার মূল উৎসই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবিকতা রক্ষা করা।
[লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আপন আলো; সাবেক কাউন্সিলর, বিএফইউজে-বাংলাদেশ; সদস্য, ডিইউজে]
মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার
০৭ জুন, ২০২২, 10:16 PM

সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা, যে পেশায় আসতে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়েনা। এই পেশায় আসতে যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হতো তাহলে কাজী নজরুল, আল মাহমুদরা কি সাংবাদিকতা করতে পারতেন?
পেশাটা খুবই দামী ও মহৎ হওয়ায় এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি নেই। রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। যারা দেশ চালান সেই মন্ত্রী/এমপি হওয়ার জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না; তাই বলে কি গণ্ডমূর্খরা এমপি/মন্ত্রী ও সাংবাদিক হবে? না, তা হতে পারে না। মন্ত্রী/এমপি যারা হন, ব্যতিক্রম বাদ দিলে দেখবেন, বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত। ঠিক তেমনই পেশাদার সাংবাদিকদের বড় অংশটিই উচ্চশিক্ষিত।
দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকতায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না থাকায় এখন এই বিষয়টির সুযোগ নিচ্ছে টাউট, বাটপার ও অর্ধশিক্ষিত অনেকেই। দেখা যায় ঠিকমতো দু’লাইন লিখতে পারে না, এমন লোকও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। এমনকি তার নামের আগে সাংবাদিক ব্যবহার না করলে সে মাইন্ড করে। অনেক জায়গায় দেখা যায়, সাংবাদিক মানেই অনেকের কাছে অর্ধশিক্ষিত, ২০০/৩০০ টাকার দালাল ইত্যাদি জাতীয় লোককে বুঝায়।
এই ট্রেন্ড থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নিবন্ধনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিবন্ধিতরাই কেবল সাংবাদিকতা করতে পারবে, অন্য কেউ না। সরকার আইন করে এটা বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে অনেক দিন থেকে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে এর অগ্রগতি হচ্ছে না। ভুয়া সাংবাদিক, অপসাংবাদিকতা, সাংবাদিকতার নামে টাউট-বাটপারী ইত্যাদি দূর করার জন্য সাংবাদিক হওয়ার জন্য নিবন্ধনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবী। মনে রাখবেন, আন্ডার মেট্রিক থেকে এখন আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা আল মাহমুদ তৈরী হবে না।
আমাকে একজন প্রশ্ন করলেন যে, সনদের ব্যবস্থা স্বাধীন সাংবাদিকতায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কি? সেই উত্তরে আমি বললাম - সনদের অর্থ এই নয় যে সাংবাদিকতায় বাধা সৃষ্টি করা। মূলত সাংবাদিকদের সমন্বিত করা, সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন ও পেশার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতেই এই ব্যবস্থা দরকার। সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলমত দেখা হবে না, পরীক্ষায় যাঁরা পাস করবেন তাঁরাই সাংবাদিকতা করবেন। আর পরীক্ষার সিলেবাস কী হবে, পরীক্ষার ধরন কী হবে, তা সাংবাদিক প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতেই করতে হবে। প্রকৃত সাংবাদিকরা যখন কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হবেন ও সনদ পাবেন, তখন ভুয়া বা অপসাংবাদিকরা সুবিধা করতে পারবে না। যেমন ধরুন, একজন ছাত্র মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেই চিকিৎসা পেশায় প্রবেশ করতে পারে না, আইন বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেই কেউ আইন পেশায় যেতে পারে না। ডাক্তার সনদ নেন বিএমডিসি থেকে এবং আইনজীবী বার কাউন্সিল থেকে সনদ ছাড়া আইন পেশায় প্রবেশ করতে পারেন না। তেমনই সাংবাদিকতা করতে হলে প্রেস কাউন্সিলের সনদ নেওয়াও বাধ্যতামূলক করতে হবে।
যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় পাস করে আসবেন তাঁদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নয়, শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সনদ দেওয়ার বিধান কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাতীয় দৈনিকে কর্মরত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিকদের তালিকা প্রেস কাউন্সিলে মাধ্যমে সনদ ইস্যু করতে হবে। তবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের পরীক্ষা নেওয়া দরকার। এসব এখন প্রাথমিকভাবে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। প্রেস কাউন্সিলের সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা ও গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতেই একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে। যাতে সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়।
এখন আমরা কী দেখছি, পঞ্চম শ্রেণি আর অষ্টম শ্রেণি পাস করে সাংবাদিকতায় আসছে। পানের দোকানদার, চায়ের দোকানিও এখন সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে। ফেসবুক চালায় সেও মোটরসাইকেলের সামনে প্রেস লাগিয়ে ঘুরছে। রাস্তায় বের হলেই সাংবাদিক লেখা গাড়ির ছড়াছড়ি। আসলে তাদের বেশির ভাগই সাংবাদিক নয়, ভুয়া সাংবাদিক। এই ভুয়া সাংবাদিকদের কারণে সাধারণ মানুষ যেমন জিম্মি, ঠিক তেমনি প্রকৃত সাংবাদিক ও তাঁদের মহান পেশাটির সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সম্পাদকদের কতটুকু যোগ্যতা থাকতে হবে, তা নির্ধারিত না থাকায় যে কেউ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংবাদিকতায় যাঁদের কোনো ধরনের যোগ্যতা নেই তারাই যখন সম্পাদক হচ্ছেন, তখন প্রকৃত সাংবাদিকদের সুনাম রক্ষার উপায় কী?
এই সাংবাদিকতা পেশার সুনাম যেন আর ক্ষুণ্ন না হয় সে জন্যই আমাদের সংশ্লিষ্ট সকলকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবাদিকরা যখন প্রেস কাউন্সিলের সনদধারী হবেন, সেই সাংবাদিকদের নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানসহ বিস্তারিত তথ্য কাউন্সিলের ওয়েবসাইটের তালিকায় দেওয়া থাকবে। এখন যদি কোনো অসাধু ব্যক্তি কোনো প্রকৃত সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ভুক্তভোগীরা মোবাইল ফোনে কিংবা কম্পিউটারে অনলাইনে প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যাচাই করে নিতে পারবে সে আসল সাংবাদিক, নাকি নকল সাংবাদিক। সনদধারী হলে ইচ্ছে করলেই কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিতে পারবে না। পরিচয় দিতে হলে সনদ লাগবে, যা প্রেস কাউন্সিলে পরীক্ষার মাধ্যমেই নিতে হবে।
প্রেস কাউন্সিলে একজন সাংবাদিকের পরিচয় শুধু সাংবাদিক। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বলে কিছুই নেই। যে দলের সমর্থক হোন না কেন, পরীক্ষায় পাস করলে তিনি সনদ পাবেন। একজন প্রকৃত সাংবাদিক কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হলে সম্মানিত বোধ করবেন। এখানে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। অধিকার চ্যুত করার কোনো চিন্তাভাবনা নেই, কোনো দিন করাও হবে না। তবে অযোগ্য কিংবা ভুয়া কোনো সাংবাদিকের প্রেস কাউন্সিলের সনদ পাওয়ার কোনো সুযোগ তখন আর থাকবে না। এসব বিষয়ে কাউন্সিলের সদস্যদের মতামত বাধ্যতামূলক করতে হবে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সনদের ব্যবস্থা করতে হবে। মফস্বল পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত করতে হবে। এসব পরীক্ষায় সাংবাদিকদের প্রতিনিধিও থাকবেন। পরীক্ষার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতায় একটি সিলেবাস তৈরি করতে হবে। সেই সিলেবাসের ওপর তাঁদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করতে পারবেন না। আর সিলেবাস গণমাধ্যমে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পরামর্শের ভিত্তিতেই তৈরি করতে হবে।
তবে কিছুকিছু সাংবাদিক আছেন, যাঁরা স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন, সেসব সাংবাদিককে নিয়েও চিন্তা ভাবনা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে এটা ত্রুটিমুক্তভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে প্রেস কাউন্সিল কাজ করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কী করলে নূন্যতম একটা যোগ্যতা নির্ধারণ করা যায়।
বর্তমানে সারা দেশে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আছে। এখানে সাংবাদিকতার যেমন উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে, তেমনি অবনতিও হচ্ছে। সাংবাদিকতার মূল উৎসই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবিকতা রক্ষা করা।
[লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আপন আলো; সাবেক কাউন্সিলর, বিএফইউজে-বাংলাদেশ; সদস্য, ডিইউজে]