শিরোনামঃ
‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

#
news image

ইন্দো-প্যাসিফিক মূলত একটি ভৌগোলিক ধারণা যা ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ২০০৮ সালের দিকে ভারতীয় সামুদ্রিক কৌশলবিদ এবং নিউ দিল্লি ন্যাশনাল মেরিন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক গুরপ্রীত সিং খুরানা প্রথমবার‘ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কের ধারণা প্রথম যে রাষ্ট্রপ্রধানের কথায় প্রকাশ পায় তিনি হলেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ২০০৭ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাদপ্রদীপে নিয়ে আসেন। যদিও শিনজো আবে তাঁর বক্তৃতায় ইন্দো-প্যাসিফিক শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করেননি; বরং তিনি মুঘল প্রিন্স দারা শিকোহের একটি বই উল্লেখ করেছেন যেখানে সমুদ্রের গতিশীল সংযোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে বোঝানো হয়েছিল যে, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রাকৃতিক সঙ্গম রয়েছে। এভাবে আবের বক্তৃতায় উঠে আসে মুঘল সমরবিদ কর্তৃক চিহ্নিত অনাদিকাল থেকে চলে আসা দুটি সমুদ্রের মিলনের প্রভাব এর কথা। তারপর ২০১০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইন্দো-প্যাসিফিক অববাহিকার গুরুত্বকে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেন। ২০১২ সালে অধ্যাপক রাজা মোহন তাঁর সমুদ্র মন্থন গ্রন্থে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের সমুদ্রগুলোকে অবশ্যই একক ও সমন্বিত ভূ-কৌশলগত রঙ্গশালা হিসেবে দেখা উচিত। 
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি বিভিন্ন কূটনৈতিকদের মুখে মুখে থাকলেও সেটা হালে পানি পায় ২০১২ সালে শিনজো আবের দ্বিতীয় মেয়াদে জাপানের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। এদিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পিভট টু এশিয়া নীতি গ্রহণ করলেও সেটার মূল কার্যক্রম শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প এর শাসনামলে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে। ২০১৭ সালে মার্কিন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্র (ঘঝঝ) -এ ইন্দো-প্যাসিফিককে একক, ভূ-কৌশলগত অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা তৈরিতে মুল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল চীনের একসময়ের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি। ৯০ এর দশক থেকে চীন ব্যাপকভাবে ‘সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ’ নীতি গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে তারা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে থাকে। এজন্য বেছে নেয় এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল কিংবা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে। ব্যাপক পরিসরে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার নাম করে অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করে। প্রাচীন সিল্ক রুটের আদলে আরো বিপুল পরিসরে গ্রহণ করে তিন মহাদেশব্যাপী বিস্তৃত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ঙইঙজ) যা পরবর্তীতে  বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ইজও) হিসেবে রূপ নেয়। 
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর এই স্বপ্ন প্রকল্পের একটি বড় উদ্যোগ হচ্ছে একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রুট। এই মেরিটাইম সিল্ক রুট প্রশান্ত মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। চীন তেল-গ্যাস-খনিজের বিপুল সম্ভাবনার আধার দক্ষিণ চীন সাগরে ইলেভেন ড্যাস লাইন দিয়ে অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। প্রতিবেশী উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক নির্মাণ করে চলেছে কৃত্রিম দ্বীপসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক স্থাপনা। যেগুলো নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান প্রণালীর দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান এর সাথে। এই অঞ্চলকে নিরাপদ ও নিরপেক্ষ রাখতে আগে থেকেই সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। দক্ষিণ চীন সাগর আর তাইওয়ান প্রণালীকে ঘিরে যে মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব সেটা স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকলেও সেটা খুব দ্রুত বিরোধে রূপ নেয় যখন চীন ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করার চতুর্মাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ইতোমধ্যে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের হুনান প্রদেশের ইউনান (যেখানে ইউএস এন্টারপ্রাইজ-র আদলে সামরিক নৌবহর তৈরি করা হয়েছে) থেকে মায়ানমারের সিত্তে (পূর্ব নাম আকাবা), পাকিস্তানের গওদর, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা, মালদ্বীপের অতলমারাস ও হর্ণ অব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে বিশাল সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দর উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (অওওই) এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে যা বিশ্বব্যাংক অথবা আইএমএফ থেকে পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। এভাবে ঋণ দিয়ে কোথায়ও তারা গভীর সমুদ্র বন্দর বানিয়ে দিয়েছে যেখানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি’র সৈন্য মোতায়েন করেছে। আরেকদিকে কোথায়ও কোথায়ও আবার সরাসরি সামরিক ঘাটি নির্মাণ করে জল-স্থল-অন্তরীক্ষে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। 
ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী আরেক দেশ পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ ইরানের সাথে রয়েছে চীনের ঐতিহাসিক এক হৃদ্যতার সম্পর্ক। বিশ্ব তেল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ পরিবহন করা হয় পারস্য উপসাগরের সংকীর্ন হরমুজ প্রণালী দিয়ে। ভূ-কৌশলগত এই প্রণালী রয়েছে ইরানের নিয়ন্ত্রণে। চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প বাস্তবায়নে ইরান এ অঞ্চলে চীনের অন্যতম অংশীদার। পশ্চিমাদের সাথে ইরানের মুখোমুখি অবস্থান থাকায় স্বভাবতই চীনের এই অঞ্চল নিয়ে উদ্বেগের কিছু নাই। এভাবে চীন ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোকে ঘিরে ধরেছে। ভূ-রাজনীতিবিদেরা চীনের এই অর্থনৈতিক ও সামরিক বলয়ের নাম দিয়েছেন মুক্তার মালা (ঝঃৎরহম ড়ভ চবধৎষং)। 
স্ট্রিং অব পার্লস খ্যাত চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক এই আগ্রাসনকে রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের পররাষ্ট্রনীতির ভারকেন্দ্র পরিবর্তন করতে থাকে। পুর্বে একসময় যে আমেরিকাকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে সমাজতান্ত্রিক কিউবা, সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা উত্তর কোরিয়া সেই আমেরিকাকে এখন নতুন সমীকরণ কষতে হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াকে ঘিরে। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল কে কেন্দ্র করে। এজন্য তাঁদের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে। বারাক ওবামার প্রশাসন ‘এশিয়া-প্যাসিফিক রিব্যালেন্সিং’ কৌশল গ্রহণ করলেও সেটা খুব একটা আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ফলে এই অঞ্চলের মিত্ররা বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কিছুটা সন্দিহান হয়ে পড়ে। কিন্তু এরই মাঝে মার্কিন নীতি নির্ধারকেরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে, অর্থনৈতিক উত্থানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারকে উপজীব্য করে ভারত‘ পূবে তাকাও নীতি’ (খড়ড়শ ঊধংঃ চড়ষরপু) প্রণয়ন করলেও মোদি সরকার দ্রুত তা সংশোধন করে আরো বিস্তৃত পটভূমিতে ‘ইস্টওয়ার্ড অ্যাকশন’ নীতি গ্রহণ করে যা এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সাথে অনেকাংশে মিলে যায়। 
ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতি থেকে আমেরিকাকে কিছু কিছু ক্ষেত্র যেমন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো প্রভৃতি থেকে সরিয়ে আনলেও এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি-র প্রতি তাঁর গভীর মনোনিবেশ ছিল সত্যিই অভাবনীয় এবং এর মূল ছিল অনেক গভীরে প্রোথিত। ২০১৭ সালের দিকে চীন খুব দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকিয়ে শীর্ষ অর্থনীতির দেশে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছিল যেটা ছিল সত্যিই বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন মোড়লগিরির প্রতি চরম আঘাত। একদিকে চীনের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উত্থান আরেকদিকে বিভিন্ন দরিদ্র-পীড়িত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে বিশ্বরাজনীতির বিকেন্দ্রীকরণ। পরাশক্তিদেশ হিসেবে পরিস্থিতি যতটা উত্তপ্ত ছিল ঠিক তার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসন ততটাই দক্ষতার সাথে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো থেকে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়েকে সরিয়ে দেওয়া, বাণিজ্যযুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সবই করেছেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন এশীয় অঞ্চলের শিল্পোন্নত আরেক দেশ দুরপ্রাচ্যের জাপানের সাথে সম্পর্কের উষ্ণায়ন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে। জাপান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসাবে প্রথম থেকেই ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা প্রণয়ন এবং প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের এত স্পষ্টভাবে একত্রিত হওয়ার কারণ হল চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে জাপানের সতর্কতা এবং গভীর উদ্বেগ। এই অঞ্চলের আরেক হুমকি উত্তর কোরিয়ার স্বেচ্ছাচারী নেতা কিম জং ঊনের সাথেও জাপানকে কেন্দ্র করে মার্কিন উদ্যোগ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার মূলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান প্রথম থেকে যুক্ত হলেও এর সাথে দ্রুতই যোগ দেয় প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া যতটা না যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় তাঁর চেয়ে বেশি আগ্রহ দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পারষ্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন। পাশাপাশি দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জোরালো উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। পশ্চিমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়াতেও চীন বিরোধী মনোভাব চাঙা হয় যার জন্য দেশটি মিত্রদেশগুলোর সহায়তায় সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে স্বাগত জানায় এবং সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়।
এভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বৃহৎ চার শক্তি মিলে তৈরি করে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিস বা আইপিএস। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখতে বিভিন্ন ধরনের সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের চার কোণায় অবস্থিত চারটি দেশ মিলে একটি চতুর্ভুজের মতো কাঠামো তৈরি হওয়ায় বিশ্লেষকেরা এর নাম দেয় ছটঅউ। নীতি নির্ধারকেরা এরই মাঝে জাপানে আয়োজন শুরু করে ছঁধফৎরষধঃবৎধষ ঝবপঁৎরঃু উরধষড়মঁব এর। এভাবে প্রতিবছর জাপানে রেওয়াজ করে ছটঅউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ছটঅউ এর অঘোষিত সদরদফতর হিসেবে সাচিবিক কাজ করে যাচ্ছে জাপান। 
দ্রুত বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে ছটঅউ জোট ন্যাটোর আদলে গড়ে উঠা একটি সামরিক জোট হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। যদিও ন্যাটোর মতো এর তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নাই। এখনো পর্যন্ত এটা শুধুমাত্র ধারণাগত কাঠামোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। তারপরও এর সামরিক তৎপরতা দিন দিন পশ্চিমা বিরোধীদের ভাবিয়ে তুলে। ছটঅউ এর সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের বিপরীতে চীন রীতিমতো উঠে পড়ে লাগে এবং সতর্ক দৃষ্টি রাখে এই অঞ্চলের দেশগুলোর উপর। 
ইতোমধ্যে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে রাইজিং স্টার এর তকমা পাওয়া বাংলাদেশ আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মক হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের শুরুতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে বাংলাদেশ সফর করেন। এরপর মার্চ মাসের ২১ তারিখে জাপানে ছটঅউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনকে ঘিরে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া দাবী করে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ছটঅউ এ যুক্ত হতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একই বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি বাংলাদেশ সফর করেন যেটি ছিল নানাদিক থেকে আলোচিত। সেইবার প্রথম চীনের কোন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মো. আব্দুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে বাংলাদেশ যাতে ছটঅউ এ যোগদান না করে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেন। বিভিন্ন কূটনৈতিক ফোরামে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং হারহামেশাই বলতে থাকেন ছটঅউ এর মতো জোটে বাংলাদেশের যোগদান বাংলাদেশ চীনা সম্পর্কে অবনতি বয়ে আনবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করবে। 
একথা পরিষ্কার যে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ উন্নয়ন অর্থনীতিতে যে অপ্রতিরোধ্যগতিতে এগিয়ে চলছে সেই রথযাত্রার অন্যতম ভাগীদার তো চীন। বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামো বিনির্মাণে চীন ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে প্রতিনিয়ত। সড়ক, রেলযোগাযোগ সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিআরআই প্রকল্পের সংগে বাংলাদেশ যুক্ত হয় ২০১৬ সালে। এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনের বিআরআই এর ফাঁদে পড়ে যায়। এভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে চীন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। 
অপরদিকে আইপিএস এর শরীক জাপান কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট সংক্ষেপে ইওওএ-ই নামক প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। ২০১৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয় এবং ২০১৫ সালে এর অবকাঠামোগত কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের অধীন সেখানে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ এগুতে থাকে। কিন্তু কয়েকবছর পার হতে না হতেই ২০১৯ সালে এসে জাপান ঘোষণা দেয় মেগা এই প্রকল্পের অর্থায়ন মূলত আইপিএস এর অধীন। এতে বাংলাদেশ কিছুটা অস্বস্থিতে পড়ে যায় পাশাপাশি আইপিএস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে চলতে থাকে বাংলাদেশকে আইপিএস এ অন্তর্ভুক্তিকরণের নানা চেষ্টা। নানান আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আইপিএস নেতৃবৃন্দকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষতার নীতি থেকে কোন সামরিক জোটে যোগদান করতে পারেনা। 
চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে এক ধরনের পারষ্পারিক আস্থা ও নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি করেছে, ঋণের জালে হোক আর হৃদ্যতার সম্পর্কে হোক অধিকাংশ দেশকে তারা বৃত্তাবদ্ধ করে ফেলেছে। সেই সম্পর্ক ছেদ করে ছোট দেশগুলোর বৃত্তের বাইরে চলে আসা সত্যিই অনেক কঠিন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে চীনের এমন উন্নয়ন অর্থনীতির দর্শনকে অবশেষে আইপিএস নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাঁর মিত্ররা যখন বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের অপরাপর দেশগুলোকে ছটঅউ এর মতো সামরিক জোটে ভেড়ানো সম্ভব নয় ঠিক তখনই তারা ভিন্ন কৌশলে পথ হাটা শুরু করে। তারা সামরিক কাঠামোর খোলনলচে অর্থনৈতিক কাঠামোর ধারণা জুড়ে দিয়ে অনেকটা পুরোনো বোতলে নতুন মদ বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 
চলতি বছরের ২৩ মে অনুষ্ঠিত ছটঅউ সম্মেলনে তারা নতুন অর্থনৈতিক জোট ইন্দো প্যাসিফিক ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক সংক্ষেপে আইপিইএফ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে নতুন এই জোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ যুক্ত হয়েছে। জোটটি আত্মপ্রকাশের কয়েকমাস আগেই এবছরের ফেব্রুয়ারীতে জোটে অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাবনা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে। সেই সাথে অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা। বরাবরের মতো প্রতিক্রিয়ায় চীনা কর্তৃপক্ষ বলে আসছেন এমন জোটে বাংলাদেশের যোগদানের কোন দরকার নাই। আইপিইএফ অর্থনৈতিক জোট হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নেওয়াটা যোক্তিক মনে করেছে বাংলাদেশ। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কোন জোটে যোগদান করবে কি করবে না এটা তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বিশ্ব পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্বে পড়ে বাংলাদেশ শেষমেশ কোন পথ বেছে নেয় সেটাই দেখার বিষয়।  

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ, সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি

দেলোয়ার এইচ রাইন

১৪ জুলাই, ২০২২,  11:23 PM

news image

ইন্দো-প্যাসিফিক মূলত একটি ভৌগোলিক ধারণা যা ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ২০০৮ সালের দিকে ভারতীয় সামুদ্রিক কৌশলবিদ এবং নিউ দিল্লি ন্যাশনাল মেরিন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক গুরপ্রীত সিং খুরানা প্রথমবার‘ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ শব্দটি ব্যবহার করেন। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কের ধারণা প্রথম যে রাষ্ট্রপ্রধানের কথায় প্রকাশ পায় তিনি হলেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ২০০৭ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাদপ্রদীপে নিয়ে আসেন। যদিও শিনজো আবে তাঁর বক্তৃতায় ইন্দো-প্যাসিফিক শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করেননি; বরং তিনি মুঘল প্রিন্স দারা শিকোহের একটি বই উল্লেখ করেছেন যেখানে সমুদ্রের গতিশীল সংযোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে বোঝানো হয়েছিল যে, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রাকৃতিক সঙ্গম রয়েছে। এভাবে আবের বক্তৃতায় উঠে আসে মুঘল সমরবিদ কর্তৃক চিহ্নিত অনাদিকাল থেকে চলে আসা দুটি সমুদ্রের মিলনের প্রভাব এর কথা। তারপর ২০১০ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ইন্দো-প্যাসিফিক অববাহিকার গুরুত্বকে একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করেন। ২০১২ সালে অধ্যাপক রাজা মোহন তাঁর সমুদ্র মন্থন গ্রন্থে যুক্তি দিয়েছিলেন যে, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের সমুদ্রগুলোকে অবশ্যই একক ও সমন্বিত ভূ-কৌশলগত রঙ্গশালা হিসেবে দেখা উচিত। 
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি বিভিন্ন কূটনৈতিকদের মুখে মুখে থাকলেও সেটা হালে পানি পায় ২০১২ সালে শিনজো আবের দ্বিতীয় মেয়াদে জাপানের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। এদিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পিভট টু এশিয়া নীতি গ্রহণ করলেও সেটার মূল কার্যক্রম শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প এর শাসনামলে। ২০১৭ সালে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাটি নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে। ২০১৭ সালে মার্কিন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলপত্র (ঘঝঝ) -এ ইন্দো-প্যাসিফিককে একক, ভূ-কৌশলগত অঞ্চল হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা তৈরিতে মুল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল চীনের একসময়ের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি। ৯০ এর দশক থেকে চীন ব্যাপকভাবে ‘সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ’ নীতি গ্রহণ করে। ধীরে ধীরে তারা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করতে থাকে। এজন্য বেছে নেয় এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল কিংবা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে। ব্যাপক পরিসরে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার নাম করে অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করে। প্রাচীন সিল্ক রুটের আদলে আরো বিপুল পরিসরে গ্রহণ করে তিন মহাদেশব্যাপী বিস্তৃত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ঙইঙজ) যা পরবর্তীতে  বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (ইজও) হিসেবে রূপ নেয়। 
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর এই স্বপ্ন প্রকল্পের একটি বড় উদ্যোগ হচ্ছে একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রুট। এই মেরিটাইম সিল্ক রুট প্রশান্ত মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু হয়ে পশ্চিম আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। চীন তেল-গ্যাস-খনিজের বিপুল সম্ভাবনার আধার দক্ষিণ চীন সাগরে ইলেভেন ড্যাস লাইন দিয়ে অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। প্রতিবেশী উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক নির্মাণ করে চলেছে কৃত্রিম দ্বীপসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক স্থাপনা। যেগুলো নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান প্রণালীর দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ান এর সাথে। এই অঞ্চলকে নিরাপদ ও নিরপেক্ষ রাখতে আগে থেকেই সরব ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। দক্ষিণ চীন সাগর আর তাইওয়ান প্রণালীকে ঘিরে যে মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব সেটা স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকলেও সেটা খুব দ্রুত বিরোধে রূপ নেয় যখন চীন ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করার চতুর্মাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
ইতোমধ্যে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের হুনান প্রদেশের ইউনান (যেখানে ইউএস এন্টারপ্রাইজ-র আদলে সামরিক নৌবহর তৈরি করা হয়েছে) থেকে মায়ানমারের সিত্তে (পূর্ব নাম আকাবা), পাকিস্তানের গওদর, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা, মালদ্বীপের অতলমারাস ও হর্ণ অব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে বিশাল সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দর উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে থাকে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (অওওই) এর মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে যা বিশ্বব্যাংক অথবা আইএমএফ থেকে পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। এভাবে ঋণ দিয়ে কোথায়ও তারা গভীর সমুদ্র বন্দর বানিয়ে দিয়েছে যেখানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি’র সৈন্য মোতায়েন করেছে। আরেকদিকে কোথায়ও কোথায়ও আবার সরাসরি সামরিক ঘাটি নির্মাণ করে জল-স্থল-অন্তরীক্ষে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। 
ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী আরেক দেশ পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ ইরানের সাথে রয়েছে চীনের ঐতিহাসিক এক হৃদ্যতার সম্পর্ক। বিশ্ব তেল বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ পরিবহন করা হয় পারস্য উপসাগরের সংকীর্ন হরমুজ প্রণালী দিয়ে। ভূ-কৌশলগত এই প্রণালী রয়েছে ইরানের নিয়ন্ত্রণে। চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প বাস্তবায়নে ইরান এ অঞ্চলে চীনের অন্যতম অংশীদার। পশ্চিমাদের সাথে ইরানের মুখোমুখি অবস্থান থাকায় স্বভাবতই চীনের এই অঞ্চল নিয়ে উদ্বেগের কিছু নাই। এভাবে চীন ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোকে ঘিরে ধরেছে। ভূ-রাজনীতিবিদেরা চীনের এই অর্থনৈতিক ও সামরিক বলয়ের নাম দিয়েছেন মুক্তার মালা (ঝঃৎরহম ড়ভ চবধৎষং)। 
স্ট্রিং অব পার্লস খ্যাত চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক এই আগ্রাসনকে রুখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের পররাষ্ট্রনীতির ভারকেন্দ্র পরিবর্তন করতে থাকে। পুর্বে একসময় যে আমেরিকাকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে সমাজতান্ত্রিক কিউবা, সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা উত্তর কোরিয়া সেই আমেরিকাকে এখন নতুন সমীকরণ কষতে হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াকে ঘিরে। আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বললে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল কে কেন্দ্র করে। এজন্য তাঁদের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে। বারাক ওবামার প্রশাসন ‘এশিয়া-প্যাসিফিক রিব্যালেন্সিং’ কৌশল গ্রহণ করলেও সেটা খুব একটা আলোর মুখ দেখতে পায়নি। ফলে এই অঞ্চলের মিত্ররা বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে কিছুটা সন্দিহান হয়ে পড়ে। কিন্তু এরই মাঝে মার্কিন নীতি নির্ধারকেরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে, অর্থনৈতিক উত্থানের মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক সংস্কারকে উপজীব্য করে ভারত‘ পূবে তাকাও নীতি’ (খড়ড়শ ঊধংঃ চড়ষরপু) প্রণয়ন করলেও মোদি সরকার দ্রুত তা সংশোধন করে আরো বিস্তৃত পটভূমিতে ‘ইস্টওয়ার্ড অ্যাকশন’ নীতি গ্রহণ করে যা এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সাথে অনেকাংশে মিলে যায়। 
ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতি থেকে আমেরিকাকে কিছু কিছু ক্ষেত্র যেমন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো প্রভৃতি থেকে সরিয়ে আনলেও এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি-র প্রতি তাঁর গভীর মনোনিবেশ ছিল সত্যিই অভাবনীয় এবং এর মূল ছিল অনেক গভীরে প্রোথিত। ২০১৭ সালের দিকে চীন খুব দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকিয়ে শীর্ষ অর্থনীতির দেশে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছিল যেটা ছিল সত্যিই বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন মোড়লগিরির প্রতি চরম আঘাত। একদিকে চীনের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উত্থান আরেকদিকে বিভিন্ন দরিদ্র-পীড়িত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে বিশ্বরাজনীতির বিকেন্দ্রীকরণ। পরাশক্তিদেশ হিসেবে পরিস্থিতি যতটা উত্তপ্ত ছিল ঠিক তার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসন ততটাই দক্ষতার সাথে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো থেকে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়েকে সরিয়ে দেওয়া, বাণিজ্যযুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সবই করেছেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন এশীয় অঞ্চলের শিল্পোন্নত আরেক দেশ দুরপ্রাচ্যের জাপানের সাথে সম্পর্কের উষ্ণায়ন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে। জাপান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসাবে প্রথম থেকেই ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণা প্রণয়ন এবং প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপানের এত স্পষ্টভাবে একত্রিত হওয়ার কারণ হল চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতার বিরুদ্ধে জাপানের সতর্কতা এবং গভীর উদ্বেগ। এই অঞ্চলের আরেক হুমকি উত্তর কোরিয়ার স্বেচ্ছাচারী নেতা কিম জং ঊনের সাথেও জাপানকে কেন্দ্র করে মার্কিন উদ্যোগ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণার মূলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান প্রথম থেকে যুক্ত হলেও এর সাথে দ্রুতই যোগ দেয় প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া যতটা না যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় তাঁর চেয়ে বেশি আগ্রহ দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পারষ্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন। পাশাপাশি দেশটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জোরালো উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। পশ্চিমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়াতেও চীন বিরোধী মনোভাব চাঙা হয় যার জন্য দেশটি মিত্রদেশগুলোর সহায়তায় সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে স্বাগত জানায় এবং সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়।
এভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বৃহৎ চার শক্তি মিলে তৈরি করে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিস বা আইপিএস। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখতে বিভিন্ন ধরনের সামরিক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের চার কোণায় অবস্থিত চারটি দেশ মিলে একটি চতুর্ভুজের মতো কাঠামো তৈরি হওয়ায় বিশ্লেষকেরা এর নাম দেয় ছটঅউ। নীতি নির্ধারকেরা এরই মাঝে জাপানে আয়োজন শুরু করে ছঁধফৎরষধঃবৎধষ ঝবপঁৎরঃু উরধষড়মঁব এর। এভাবে প্রতিবছর জাপানে রেওয়াজ করে ছটঅউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ছটঅউ এর অঘোষিত সদরদফতর হিসেবে সাচিবিক কাজ করে যাচ্ছে জাপান। 
দ্রুত বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে ছটঅউ জোট ন্যাটোর আদলে গড়ে উঠা একটি সামরিক জোট হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। যদিও ন্যাটোর মতো এর তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নাই। এখনো পর্যন্ত এটা শুধুমাত্র ধারণাগত কাঠামোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। তারপরও এর সামরিক তৎপরতা দিন দিন পশ্চিমা বিরোধীদের ভাবিয়ে তুলে। ছটঅউ এর সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের বিপরীতে চীন রীতিমতো উঠে পড়ে লাগে এবং সতর্ক দৃষ্টি রাখে এই অঞ্চলের দেশগুলোর উপর। 
ইতোমধ্যে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে রাইজিং স্টার এর তকমা পাওয়া বাংলাদেশ আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মক হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের শুরুতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে বাংলাদেশ সফর করেন। এরপর মার্চ মাসের ২১ তারিখে জাপানে ছটঅউ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনকে ঘিরে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া দাবী করে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ছটঅউ এ যুক্ত হতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একই বছরের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি বাংলাদেশ সফর করেন যেটি ছিল নানাদিক থেকে আলোচিত। সেইবার প্রথম চীনের কোন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মো. আব্দুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে বাংলাদেশ যাতে ছটঅউ এ যোগদান না করে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেন। বিভিন্ন কূটনৈতিক ফোরামে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং হারহামেশাই বলতে থাকেন ছটঅউ এর মতো জোটে বাংলাদেশের যোগদান বাংলাদেশ চীনা সম্পর্কে অবনতি বয়ে আনবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করবে। 
একথা পরিষ্কার যে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ উন্নয়ন অর্থনীতিতে যে অপ্রতিরোধ্যগতিতে এগিয়ে চলছে সেই রথযাত্রার অন্যতম ভাগীদার তো চীন। বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামো বিনির্মাণে চীন ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে প্রতিনিয়ত। সড়ক, রেলযোগাযোগ সহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিআরআই প্রকল্পের সংগে বাংলাদেশ যুক্ত হয় ২০১৬ সালে। এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনের বিআরআই এর ফাঁদে পড়ে যায়। এভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতিতে চীন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। 
অপরদিকে আইপিএস এর শরীক জাপান কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট সংক্ষেপে ইওওএ-ই নামক প্রকল্পে ব্যাপক বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। ২০১৪ সালে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয় এবং ২০১৫ সালে এর অবকাঠামোগত কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের অধীন সেখানে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ এগুতে থাকে। কিন্তু কয়েকবছর পার হতে না হতেই ২০১৯ সালে এসে জাপান ঘোষণা দেয় মেগা এই প্রকল্পের অর্থায়ন মূলত আইপিএস এর অধীন। এতে বাংলাদেশ কিছুটা অস্বস্থিতে পড়ে যায় পাশাপাশি আইপিএস নেতৃত্বের পক্ষ থেকে চলতে থাকে বাংলাদেশকে আইপিএস এ অন্তর্ভুক্তিকরণের নানা চেষ্টা। নানান আলাপ-আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আইপিএস নেতৃবৃন্দকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষতার নীতি থেকে কোন সামরিক জোটে যোগদান করতে পারেনা। 
চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে এক ধরনের পারষ্পারিক আস্থা ও নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি করেছে, ঋণের জালে হোক আর হৃদ্যতার সম্পর্কে হোক অধিকাংশ দেশকে তারা বৃত্তাবদ্ধ করে ফেলেছে। সেই সম্পর্ক ছেদ করে ছোট দেশগুলোর বৃত্তের বাইরে চলে আসা সত্যিই অনেক কঠিন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে চীনের এমন উন্নয়ন অর্থনীতির দর্শনকে অবশেষে আইপিএস নেতৃবৃন্দ গ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ তাঁর মিত্ররা যখন বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের অপরাপর দেশগুলোকে ছটঅউ এর মতো সামরিক জোটে ভেড়ানো সম্ভব নয় ঠিক তখনই তারা ভিন্ন কৌশলে পথ হাটা শুরু করে। তারা সামরিক কাঠামোর খোলনলচে অর্থনৈতিক কাঠামোর ধারণা জুড়ে দিয়ে অনেকটা পুরোনো বোতলে নতুন মদ বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। 
চলতি বছরের ২৩ মে অনুষ্ঠিত ছটঅউ সম্মেলনে তারা নতুন অর্থনৈতিক জোট ইন্দো প্যাসিফিক ইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্ক সংক্ষেপে আইপিইএফ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে নতুন এই জোটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ যুক্ত হয়েছে। জোটটি আত্মপ্রকাশের কয়েকমাস আগেই এবছরের ফেব্রুয়ারীতে জোটে অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাবনা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে। সেই সাথে অব্যাহত রেখেছে বিভিন্ন ধরনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা। বরাবরের মতো প্রতিক্রিয়ায় চীনা কর্তৃপক্ষ বলে আসছেন এমন জোটে বাংলাদেশের যোগদানের কোন দরকার নাই। আইপিইএফ অর্থনৈতিক জোট হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় নেওয়াটা যোক্তিক মনে করেছে বাংলাদেশ। সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কোন জোটে যোগদান করবে কি করবে না এটা তার অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বিশ্ব পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্বে পড়ে বাংলাদেশ শেষমেশ কোন পথ বেছে নেয় সেটাই দেখার বিষয়।  

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও রাজনীতিবিদ, সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি