শিরোনামঃ
‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ নারীর অগ্রগতি ও উন্নয়নে তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে: উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

#
news image

বর্তমানে সারা বিশ্বে বাড়ছে তাপমাত্রা। বিশেষ করে ইউরোপে। তাপ প্রবাহে নাকাল পুরো ইউরোপও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। অসহনীয় এই গরমে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। এর মধ্যে স্পেন ও পর্তুগালে ছড়িয়ে পড়েছে দাবালন। দেশ দুটিতে ইতোমধ্যে তাপজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ঘন ঘন, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। মূলত শিল্প যুগ শুরুর পর থেকে পৃথিবী ইতোমধ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উষ্ণ হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো না গেলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৬০০ গুণ বেড়েছে। আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা পৃথিবীর জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। এমন শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। যা মানুষের জন্য ক্রমেই হয়ে উঠছে অসহনীয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্মৃতি এবং এর বিরূপ প্রভাব প্রশমনে আমাদের আরও সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পুরো বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মৃত্যুর আগে আশঙ্কা করেছিলেন, এই ধরিত্রীতে মানুষের বসবাসের খুব বেশি হলে আর কয়েকশ' বছর। হকিং যে কারণে এমন আশঙ্কা করেছেন তার মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণ। আর এমন বিরূপ প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে সারা বিশ্বে। বর্তমানে আমরা দেখছি তুষারে তুষারে ঢেকে যাচ্ছে ইউরোপ। হিমঝড় ও তীব্র তুষারপাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আবার বিপরীতে অনেক দেশে উচ্চ তাপমাত্রার কবলে পড়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক দাবানল। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা থেকে শুরু করে জীব বৈচিত্র্যের। আর এ কারণে চিরচেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে।
ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় এমন ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তবে এমন পরিবর্তনের বাইরে নয় বাংলাদেশ।
তিন বছর পূর্বে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের প্রশংসা করলেও, এখনও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বেশির ভাগই দরিদ্র। আর এই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জার্মানি ওয়াচের 'ক্লাইমেট রিক্স ইনডেক্স-২০১৮'র প্রতিবেদনে। এ ছাড়া এসেসমেন্ট অব সি লেভেল রাইজ অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর বড় উদাহরণ আমরা প্রায় একযুগ আগে কিছুটা প্রত্যক্ষ করেছি। বিশেষ করে ২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে বাংলাদেশের কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। শঙ্কার খবর হলো- ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব পরিসংখ্যানের বাস্তবতাকে আমলে রেখেই নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এটাও সত্য পূর্বের তুলনায় দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে যথেষ্ট এগিয়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে বিশেষ নীতি প্রণয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেয়া হয়েছে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের সামগ্রিক সাফল্য যেমন আছে তেমনি এ ক্ষেত্রে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জও। এর মধ্যে অবশ্যই উলেস্নখযোগ্য সক্ষমতাবৃদ্ধি আর অর্থায়ন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে কারণগুলো আমাদের সামনে উপস্থিত তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। বিশ্বব্যাপী শিল্পায়নের জন্য কার্বন নিঃসরণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এজন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ হচ্ছে সবুজের বৃদ্ধি। অথাৎ সারাদেশে ব্যাপক বনায়ন। কেবল কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই নয়, প্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবিলায়ও এই বনায়নের কার্যকর ভূমিকা অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে কেবল সরকার নয়, এগিয়ে আসতে হবে শিল্পপতিদেরও। কেননা, শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। প্রতিটি শিল্পকারখানায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাসের পাশাপাশি কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার মালিকদের এসব বন্ধ করার জন্য বাধ্য করতে হবে। সবুজ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি, ডেলাইট ডেভিং, উপকরণের পুনর্ব্যবহার এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপুরি সবুজের বিকল্প নেই। কেননা, ব্যাপক বনায়ন পারে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে আমাদের অনেকটা রক্ষা করতে। তাই ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বনায়ন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। পাশাপাশি সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যাতে কূল ছাপিয়ে মিঠা পানিতে মিশতে না পারে সেজন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পানি দূষণ যাতে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপুরি ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিজীবীরা কীভাবে খাপ খাওয়াতে পারেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। তাই তাদের বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে। কারণ কৃষকরাই দেশের প্রাণ। তারা সঠিক ভাবে তাদের কাজ করতে পারলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে দেশ। এখন ঝড়ের মৌসুম। মাঝে মাঝে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ যে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর থেকে পুরোপুরি রক্ষার উপায় না থাকলেও প্রতিরোধ করে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এজন্য এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নীতি নির্ধারকদের টেকসই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি সবার সম্মিলিত আন্তরিক প্রয়াস বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এই দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, সবার দায়িত্ব রয়েছে পরিবেশ রক্ষায়। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবার। বিশেষ করে সবাইকে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ আন্দোলন বিষয়ে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার হচ্ছে। এটা আমাদের আশাবাদী করছে। আশাবাদী হওয়ার পাশাপাশি এটা আমাদের জন্য একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এটির মোকাবিলা আমরা এককভাবে করতে পারব না। করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবেই। এখন আর পেছনে না তাকিয়ে দ্রম্নত আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের। তবে আমরা নিরাপদ থাকব। নিরাপদ থাকবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভালো থাকবে বিশ্ব, ভালো থাকবে বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষ।

 

সাহাদাৎ রানা

২৩ জুলাই, ২০২২,  9:16 PM

news image

বর্তমানে সারা বিশ্বে বাড়ছে তাপমাত্রা। বিশেষ করে ইউরোপে। তাপ প্রবাহে নাকাল পুরো ইউরোপও। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। অসহনীয় এই গরমে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। এর মধ্যে স্পেন ও পর্তুগালে ছড়িয়ে পড়েছে দাবালন। দেশ দুটিতে ইতোমধ্যে তাপজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ঘন ঘন, তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। মূলত শিল্প যুগ শুরুর পর থেকে পৃথিবী ইতোমধ্যেই প্রায় ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উষ্ণ হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো না গেলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৬০০ গুণ বেড়েছে। আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা পৃথিবীর জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়। এমন শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। যা মানুষের জন্য ক্রমেই হয়ে উঠছে অসহনীয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্মৃতি এবং এর বিরূপ প্রভাব প্রশমনে আমাদের আরও সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু পুরো বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন। বিশেষ করে, এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মৃত্যুর আগে আশঙ্কা করেছিলেন, এই ধরিত্রীতে মানুষের বসবাসের খুব বেশি হলে আর কয়েকশ' বছর। হকিং যে কারণে এমন আশঙ্কা করেছেন তার মূলে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণ। আর এমন বিরূপ প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে সারা বিশ্বে। বর্তমানে আমরা দেখছি তুষারে তুষারে ঢেকে যাচ্ছে ইউরোপ। হিমঝড় ও তীব্র তুষারপাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আবার বিপরীতে অনেক দেশে উচ্চ তাপমাত্রার কবলে পড়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক দাবানল। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা থেকে শুরু করে জীব বৈচিত্র্যের। আর এ কারণে চিরচেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে।
ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় এমন ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তবে এমন পরিবর্তনের বাইরে নয় বাংলাদেশ।
তিন বছর পূর্বে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের প্রশংসা করলেও, এখনও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বেশির ভাগই দরিদ্র। আর এই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে জার্মানভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জার্মানি ওয়াচের 'ক্লাইমেট রিক্স ইনডেক্স-২০১৮'র প্রতিবেদনে। এ ছাড়া এসেসমেন্ট অব সি লেভেল রাইজ অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড অ্যানালাইসিস অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর বড় উদাহরণ আমরা প্রায় একযুগ আগে কিছুটা প্রত্যক্ষ করেছি। বিশেষ করে ২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে বাংলাদেশের কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। শঙ্কার খবর হলো- ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব পরিসংখ্যানের বাস্তবতাকে আমলে রেখেই নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এটাও সত্য পূর্বের তুলনায় দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এরইমধ্যে যথেষ্ট এগিয়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে বিশেষ নীতি প্রণয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেয়া হয়েছে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের সামগ্রিক সাফল্য যেমন আছে তেমনি এ ক্ষেত্রে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জও। এর মধ্যে অবশ্যই উলেস্নখযোগ্য সক্ষমতাবৃদ্ধি আর অর্থায়ন।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে কারণগুলো আমাদের সামনে উপস্থিত তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। বিশ্বব্যাপী শিল্পায়নের জন্য কার্বন নিঃসরণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এজন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ হচ্ছে সবুজের বৃদ্ধি। অথাৎ সারাদেশে ব্যাপক বনায়ন। কেবল কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই নয়, প্রাকৃতিক দুযোগ মোকাবিলায়ও এই বনায়নের কার্যকর ভূমিকা অপরিসীম। এ ক্ষেত্রে কেবল সরকার নয়, এগিয়ে আসতে হবে শিল্পপতিদেরও। কেননা, শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। প্রতিটি শিল্পকারখানায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাসের পাশাপাশি কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পকারখানার মালিকদের এসব বন্ধ করার জন্য বাধ্য করতে হবে। সবুজ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি, ডেলাইট ডেভিং, উপকরণের পুনর্ব্যবহার এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপুরি সবুজের বিকল্প নেই। কেননা, ব্যাপক বনায়ন পারে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে আমাদের অনেকটা রক্ষা করতে। তাই ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বনায়ন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। পাশাপাশি সমুদ্রের লবণাক্ত পানি যাতে কূল ছাপিয়ে মিঠা পানিতে মিশতে না পারে সেজন্য প্রয়োজন অনুযায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পানি দূষণ যাতে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপুরি ব্যবস্থাপনার জন্য সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রয়োজন। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিজীবীরা কীভাবে খাপ খাওয়াতে পারেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। তাই তাদের বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে। কারণ কৃষকরাই দেশের প্রাণ। তারা সঠিক ভাবে তাদের কাজ করতে পারলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে দেশ। এখন ঝড়ের মৌসুম। মাঝে মাঝে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড়। এসব ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ যে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর থেকে পুরোপুরি রক্ষার উপায় না থাকলেও প্রতিরোধ করে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এজন্য এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় নীতি নির্ধারকদের টেকসই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি সবার সম্মিলিত আন্তরিক প্রয়াস বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য এই দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, সবার দায়িত্ব রয়েছে পরিবেশ রক্ষায়। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবার। বিশেষ করে সবাইকে বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিবেশ আন্দোলন বিষয়ে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার হচ্ছে। এটা আমাদের আশাবাদী করছে। আশাবাদী হওয়ার পাশাপাশি এটা আমাদের জন্য একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এটির মোকাবিলা আমরা এককভাবে করতে পারব না। করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবেই। এখন আর পেছনে না তাকিয়ে দ্রম্নত আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের। তবে আমরা নিরাপদ থাকব। নিরাপদ থাকবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ভালো থাকবে বিশ্ব, ভালো থাকবে বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষ।