শিরোনামঃ
ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা , অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি ‘বাবা নেই’ ভিডিও গানের মোড়ক উন্মোচন আগামী পাঁচ বছরে শীর্ষে থাকবে ইমপিরিয়াল লক্ষ্য প্রতিষ্ঠাতার মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দেশ জনতা পার্টির আলোচনা সভা রহিম আল-হুসাইনি আগা খান পঞ্চম-এর অভিষেক অনুষ্ঠিত আগা খান ৪র্থ আসওয়ান ,মিশরে শায়িত হলেন শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ৪৯তম ইমাম আগা খানের জানাজা অনুষ্ঠিত মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি বাজারের ক্রয়কৃত দোকান দখল, থানায় অভিযোগ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো সক্রিয় সড়কের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

লক্ষ্যাধিক টাকায় রোহিঙ্গাদের ‘এনআইডি’: জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে দুদক

#
news image

লক্ষ্যাধিক টাকা খরচ করলেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) মিলছে রোহিঙ্গাদের। আর তাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশেরই দালালচক্র। এতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। 
রোহিঙ্গাদের এনআইডি আবেদনে জমা দেয়া নথিপত্র সংগ্রহে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এনআইডি সফটওয়্যারের সঙ্গে ইন্টারভিউ মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করার কাজ করছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। প্রশ্ন উঠছে এই পাসপোর্ট করতে রোহিঙ্গারা এনআইডির খরচের এত অর্থ পাচ্ছে কোথায়। জেলার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের তিনটি পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা প্রায় দেড়’শ এনআইডিসহ পাসপোর্ট আবেদনপত্রের নথি সংগ্রহ করে এ কাজ শুরু করছে সংস্থাটি।
গতকাল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরি করে দেয়ার কথা বলে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে চট্রগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। নগরের মনসুরাবাদ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর-পশ্চিম) বিভাগের কনফোরেন্সে রুমে এক সংবাদ সম্মেলন বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির (বন্দর ও পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন।
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা হলো- মো. কামাল হোসেন ওরফে মোহাম্মদ (৪৫) পারভীন আক্তার(২৫), মো.নুরুল আবছার (২৮), শামসুর রহামন ওরফে শামসু মাস্টার ওরফে সোনা মিয়া(৬০), মো. ইয়াছিন আরাফাত (২২), মো.নুর নবী ওরফে অনিক ওরফে রাহাত(২৫), মো. মিজানুর রহমান (২৩), ফরহাদুল ইসলাম (২৮),ইমন দাশ (২০) ও মো.কামাল(৪২)। এর মধ্যে পারভীন আক্তার ও মো. কামাল হোসেনে ওরফে মোহাম্মদ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং গ্রেপ্তার শামসুর রহমান কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত এনআইডি কার্ড তৈরির ফরম-২ এবং জন্মনিবন্ধন ফরম উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ৪ নম্বর আসামি শামসু মাস্টার কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে ৩ নম্বর আসামি নুরুল আবছারের কাছে পাঠাতো। পরে নুরুল আবছার ওই রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিতো। এই কাজে তাকে সহায়তা করতো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপরাটের। এই চক্রটি দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রকার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডিসহ বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্ট তৈরি করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। গ্রেপ্তার ৪ নম্বর আসামি কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরির কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন।
রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরিতে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেছিল।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ চক্রের আরও অনেক সদস্য আছে যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এই চক্রকে আটকের জন্য ডিবি পুলিশ দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছিল। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আমরা এই চক্রের সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হই।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ, পাঁচলাইশ ও কক্সবাজার পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা সন্দেহে বেশ কয়েকজন আটক হন। পাশাপাশি অনেকের আবেদন আটকে দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয়তার সনদের মতো শর্তগুলো নিয়েই পাসপোর্ট করাতে আসেন রোহিঙ্গারা। ভুয়া নাম-ঠিকানা নিয়ে সিটি করপোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে এই সনদ নিয়ে আসছেন তারা। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ভিড়ে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ সংগ্রহের উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে দুদকের তদন্ত দল। এসব সনদ রোহিঙ্গারা কিভাবে সংগ্রহ করেছেন এবং সনদগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি কিংবা তাদের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখার অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয় থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা, দুদক ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে শুরুর কাজটা করে রোহিঙ্গা দালালরাই। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এনআইডি তৈরিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার শহরে নিয়ে যায়। পরে আরেকটি দালাল চক্র তাদের নিয়ে আসে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে পৌঁছাতেই আরেক দালালের হাতে বদল হয় রোহিঙ্গারা। সেই দালাল তাদের নিয়ে আসতো নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল ও অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুকদের কাছে। পরে তাদের বাসাতেই নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্ক্যানার, মডেম, ক্যামেরা ও সিগনেচার প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হতো জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি); রোহিঙ্গারা হয়ে যেত বাংলাদেশি ভোটার!
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ায় জড়িত চক্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তত দুই উপজেলা নির্বাচন অফিসার সরাসরি জড়িত আছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এনআইডি উইংয়ের তিনজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট।
ইসি তদন্ত কমিটির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন বলেন, জয়নাল বা মোস্তাফা ফারুক যারাই রোহিঙ্গাদের ডাটা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ইনপুট দিয়েছে, তারা সবাই এ জন্য রাতকে বেছে নিয়েছিল। কর্মকর্তাদের চোখ এড়াতে প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব তথ্য আপডেট করতো।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসির নিজস্ব মডেম রয়েছে ২০টি। এর মধ্যে একটি পাওয়া গেছে নির্বাচান কমিশনের অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুকের কাছে। রোহিঙ্গা ডাটা ইনপুটের ক্ষেত্রে এই মডেমটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

এসএম শামসুজ্জোহা

২৬ অক্টোবর, ২০২২,  11:58 PM

news image

লক্ষ্যাধিক টাকা খরচ করলেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) মিলছে রোহিঙ্গাদের। আর তাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশেরই দালালচক্র। এতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। 
রোহিঙ্গাদের এনআইডি আবেদনে জমা দেয়া নথিপত্র সংগ্রহে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এনআইডি সফটওয়্যারের সঙ্গে ইন্টারভিউ মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করার কাজ করছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। প্রশ্ন উঠছে এই পাসপোর্ট করতে রোহিঙ্গারা এনআইডির খরচের এত অর্থ পাচ্ছে কোথায়। জেলার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের তিনটি পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা প্রায় দেড়’শ এনআইডিসহ পাসপোর্ট আবেদনপত্রের নথি সংগ্রহ করে এ কাজ শুরু করছে সংস্থাটি।
গতকাল জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরি করে দেয়ার কথা বলে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে চট্রগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ। নগরের মনসুরাবাদ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর-পশ্চিম) বিভাগের কনফোরেন্সে রুমে এক সংবাদ সম্মেলন বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির (বন্দর ও পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন।
গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা হলো- মো. কামাল হোসেন ওরফে মোহাম্মদ (৪৫) পারভীন আক্তার(২৫), মো.নুরুল আবছার (২৮), শামসুর রহামন ওরফে শামসু মাস্টার ওরফে সোনা মিয়া(৬০), মো. ইয়াছিন আরাফাত (২২), মো.নুর নবী ওরফে অনিক ওরফে রাহাত(২৫), মো. মিজানুর রহমান (২৩), ফরহাদুল ইসলাম (২৮),ইমন দাশ (২০) ও মো.কামাল(৪২)। এর মধ্যে পারভীন আক্তার ও মো. কামাল হোসেনে ওরফে মোহাম্মদ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং গ্রেপ্তার শামসুর রহমান কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত এনআইডি কার্ড তৈরির ফরম-২ এবং জন্মনিবন্ধন ফরম উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ৪ নম্বর আসামি শামসু মাস্টার কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে ৩ নম্বর আসামি নুরুল আবছারের কাছে পাঠাতো। পরে নুরুল আবছার ওই রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করে দিতো। এই কাজে তাকে সহায়তা করতো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৫ জন ডাটা এন্ট্রি অপরাটের। এই চক্রটি দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রকার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডিসহ বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্ট তৈরি করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। গ্রেপ্তার ৪ নম্বর আসামি কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরির কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন।
রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরিতে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেছিল।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ চক্রের আরও অনেক সদস্য আছে যাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এই চক্রকে আটকের জন্য ডিবি পুলিশ দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছিল। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আমরা এই চক্রের সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হই।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ, পাঁচলাইশ ও কক্সবাজার পাসপোর্ট কার্যালয়ে পাসপোর্টের আবেদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা সন্দেহে বেশ কয়েকজন আটক হন। পাশাপাশি অনেকের আবেদন আটকে দিয়েছে পাসপোর্ট অধিদপ্তর।
পাসপোর্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয়তার সনদের মতো শর্তগুলো নিয়েই পাসপোর্ট করাতে আসেন রোহিঙ্গারা। ভুয়া নাম-ঠিকানা নিয়ে সিটি করপোরেশন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে এই সনদ নিয়ে আসছেন তারা। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ভিড়ে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ সংগ্রহের উৎস খোঁজার চেষ্টা করছে দুদকের তদন্ত দল। এসব সনদ রোহিঙ্গারা কিভাবে সংগ্রহ করেছেন এবং সনদগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি কিংবা তাদের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখার অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয় থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকারী সংস্থা, দুদক ও নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে শুরুর কাজটা করে রোহিঙ্গা দালালরাই। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘুরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এনআইডি তৈরিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার শহরে নিয়ে যায়। পরে আরেকটি দালাল চক্র তাদের নিয়ে আসে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে পৌঁছাতেই আরেক দালালের হাতে বদল হয় রোহিঙ্গারা। সেই দালাল তাদের নিয়ে আসতো নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল ও অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুকদের কাছে। পরে তাদের বাসাতেই নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্ক্যানার, মডেম, ক্যামেরা ও সিগনেচার প্যাড ব্যবহার করে তৈরি হতো জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি); রোহিঙ্গারা হয়ে যেত বাংলাদেশি ভোটার!
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ায় জড়িত চক্রে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তত দুই উপজেলা নির্বাচন অফিসার সরাসরি জড়িত আছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে এনআইডি উইংয়ের তিনজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট।
ইসি তদন্ত কমিটির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন বলেন, জয়নাল বা মোস্তাফা ফারুক যারাই রোহিঙ্গাদের ডাটা নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ইনপুট দিয়েছে, তারা সবাই এ জন্য রাতকে বেছে নিয়েছিল। কর্মকর্তাদের চোখ এড়াতে প্রতিদিন রাত ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব তথ্য আপডেট করতো।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসির নিজস্ব মডেম রয়েছে ২০টি। এর মধ্যে একটি পাওয়া গেছে নির্বাচান কমিশনের অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুকের কাছে। রোহিঙ্গা ডাটা ইনপুটের ক্ষেত্রে এই মডেমটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।