অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা বাড়ছে: অসাধু চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা
এসএম শামসুজ্জোহা
২৯ নভেম্বর, ২০২২, 10:40 PM
অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা বাড়ছে: অসাধু চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা
অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলো হলো সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না পাওয়া, ডেলিভারি পাওয়া পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকা এবং কার্ড পেমেন্টে টাকা ফেরত পেতে বেশি সময় লাগা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে অনলাইন বা ফেসবুককেন্দ্রিক প্রচুর ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রেতারা নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে আবার অনেক সময় প্রকৃত পণ্য না দিয়ে আলু, পটল, পেঁয়াজ বা সাবানের মতো পণ্য পাঠিয়ে প্রতারণা করে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফেসবুকে কেনাকাটা নিয়ে অভিযোগ দিলেও গুরুত্ব দেয় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকরা থাকছেন নজরদারি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে অভিনব প্রতারণার ঘটনা। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসার নামে প্রতারণার জাল বুনেছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তব জীবনে ঘটমান অপরাধগুলো এখন ডিজিটাল মাধ্যমে স্থানান্তরিত হচ্ছে। অনলাইনের বাড়তি চাহিদা দেখে অনেক ভুঁইফোড় অনলাইন, ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। অনলাইনে যে পণ্যের ছবি আছে, বাস্তবে সেটি সরবরাহ করা হচ্ছে না। আবার পণ্যের ই-পেমেন্ট নিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে না।
যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। অতি সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঢাকার বনানী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক।
তিনি লিখেছেন- ফেসবুকের ‘শপিং ক্রাউড’ নামে একটি পেজে জামা বিক্রির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রিম টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ৪টি জামা অর্ডার করি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামা না পাওয়ায় যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখি মোবাইল নম্বর ব্লক এবং ফেসবুক থেকেও ব্লক করা হয়েছে।
কমেন্টে আরেক ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান মাসুক লিখেছেন-ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে ই-কর্মাস সাইট থেকে শার্ট অর্ডার করেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে পণ্য হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও বারবার যোগাযোগের পর ছয় দিনের মাথায় পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল খুবই নিম্নমানের পণ্য দেওয়া হয়েছে তাকে।
দেশে অনলাইন কেনাকাটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়লেও অনেকের অভিজ্ঞতা ইউসুফ কিংবা মাসুকের মতো। অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে সাধারণ গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে।
এছাড়া আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেওয়া, আবার কখনো আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া-এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং। অসাধু চক্রের হাতে ই-কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ) বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে ১১ শতাংশের বেশি মানুষ। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৭.৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সারা দেশে যত ধরনের সাইবার অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যে ১১.৪৯ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা। প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। আর ০.৯২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। এরমধ্যে পুরুষরাই অনলাইন কেনাকাটায় বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছে। প্রতারিতদের মধ্যে পুরুষ ৭.৩৮ আর নারী ৩.৬৯ শতাংশ।
অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদ প্রভাতী খবরকে বলেন, সম্প্রতি দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে জেঁকে বসেছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও এই মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে অপরাধীরা। একই সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণা এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তবে ফেসবুককেন্দ্রিক কেনাকাটায় প্রতারণা কিংবা পণ্য সময়মতো না পাওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ভুক্তভোগীদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যাওয়ার পরামর্শ দেই।’
এসএম শামসুজ্জোহা
২৯ নভেম্বর, ২০২২, 10:40 PM
অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলো হলো সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না পাওয়া, ডেলিভারি পাওয়া পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকা এবং কার্ড পেমেন্টে টাকা ফেরত পেতে বেশি সময় লাগা। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে অনলাইন বা ফেসবুককেন্দ্রিক প্রচুর ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রেতারা নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে আবার অনেক সময় প্রকৃত পণ্য না দিয়ে আলু, পটল, পেঁয়াজ বা সাবানের মতো পণ্য পাঠিয়ে প্রতারণা করে গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ফেসবুকে কেনাকাটা নিয়ে অভিযোগ দিলেও গুরুত্ব দেয় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতারকরা থাকছেন নজরদারি ও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে অভিনব প্রতারণার ঘটনা। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসার নামে প্রতারণার জাল বুনেছে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তব জীবনে ঘটমান অপরাধগুলো এখন ডিজিটাল মাধ্যমে স্থানান্তরিত হচ্ছে। অনলাইনের বাড়তি চাহিদা দেখে অনেক ভুঁইফোড় অনলাইন, ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে। অনলাইনে যে পণ্যের ছবি আছে, বাস্তবে সেটি সরবরাহ করা হচ্ছে না। আবার পণ্যের ই-পেমেন্ট নিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে না।
যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। অতি সম্প্রতি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঢাকার বনানী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক।
তিনি লিখেছেন- ফেসবুকের ‘শপিং ক্রাউড’ নামে একটি পেজে জামা বিক্রির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অগ্রিম টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ৪টি জামা অর্ডার করি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জামা না পাওয়ায় যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখি মোবাইল নম্বর ব্লক এবং ফেসবুক থেকেও ব্লক করা হয়েছে।
কমেন্টে আরেক ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান মাসুক লিখেছেন-ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন দেখে ই-কর্মাস সাইট থেকে শার্ট অর্ডার করেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে পণ্য হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও বারবার যোগাযোগের পর ছয় দিনের মাথায় পণ্য হাতে পাওয়ার পর দেখা গেল খুবই নিম্নমানের পণ্য দেওয়া হয়েছে তাকে।
দেশে অনলাইন কেনাকাটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাড়লেও অনেকের অভিজ্ঞতা ইউসুফ কিংবা মাসুকের মতো। অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনে সাধারণ গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে।
এছাড়া আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেওয়া, আবার কখনো আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া-এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই-কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং। অসাধু চক্রের হাতে ই-কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ) বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে ১১ শতাংশের বেশি মানুষ। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৭.৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সারা দেশে যত ধরনের সাইবার অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যে ১১.৪৯ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা। প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯.৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। আর ০.৯২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। এরমধ্যে পুরুষরাই অনলাইন কেনাকাটায় বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছে। প্রতারিতদের মধ্যে পুরুষ ৭.৩৮ আর নারী ৩.৬৯ শতাংশ।
অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদ প্রভাতী খবরকে বলেন, সম্প্রতি দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে জেঁকে বসেছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনা। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পরও এই মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে অপরাধীরা। একই সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণা এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘তবে ফেসবুককেন্দ্রিক কেনাকাটায় প্রতারণা কিংবা পণ্য সময়মতো না পাওয়া সম্পর্কিত অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা ভুক্তভোগীদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যাওয়ার পরামর্শ দেই।’