মৌলভীবাজার - ১ (বড়লেখা–জুড়ী) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দলীয় বিভাজন সৃষ্টি‌ করছেন‌ জুড়ী উপজেলা  যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নিপার রেজা। মিঠুর সাথে কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত তিনি মিঠুর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতও করেননি তিনি । তদুপরি, দলীয় প্রার্থী মিঠু থেকে আলাদা করে রেখেছেন নিজ বলয়ের যুবদল নেতা কর্মীদের।‌ 

নিপার রেজা এখনও শরিফুল ইসলাম সাজু গ্রুপের প্রতি অনুগত অবস্থান ধরে রেখে নিজ গ্রুপের নেতাকর্মীদের নাসির উদ্দিন মিঠুর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া থেকে বিরত রাখছেন। এতে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র বিভক্তি তৈরি হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়ন প্রত্যাশীদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।” কিন্তু এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাজু গ্রুপের অনুসারীরা মনোনয়ন ঘোষণার পর বড়লেখা উপজেলায় একটি বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন আয়োজন করে। জানা যায়, সেই শোডাউনে ও‌ বড়লেখার একাধিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ এসেছিল জুড়ী উপজেলা থেকে, যেখানে নিপার রেজা ৪/৫ টি বাস ভাড়া করে নিজেই লোকজন পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

জানা যায়, নিপার রেজা জুড়ী উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি হাজী মাসুম রেজার ছোট ভাই। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, হাজী মাসুম রেজা গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি এবং তার লন্ডনপ্রবাসী ছেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে দুই ভাই মাসুম রেজা ও নিপার রেজা মিলে জুড়ীতে একটি অঘোষিত প্রভাবশালী চক্র গড়ে তুলেছেন, 
যারা স্থানীয় ব্যবসা, ঠিকাদারি ও রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিএনপির ত্যাগী কর্মীরা সেখানে উপেক্ষিত ও অবহেলিত।
এই চক্রটি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে ঠিকাদারিসহ উপজেলার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। 

অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নিরলস ত্যাগ, নিষ্ঠা ও সংগঠনের প্রতি অবিচল আনুগত্যের স্বীকৃতি হিসেবে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা–জুড়ী) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা হিসেবে দলের দুর্দিনে সংগঠনকে সুসংহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শুধুমাত্র নিপার রেজার নেতৃত্বে  যুবদলের একাংশ ছাড়া‌ সবাই নাসির উদ্দিন মিঠুর পক্ষে রয়েছে। ‌তবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরও নিপার রেজা ও তার অনুসারীরা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠুর সাথে‌ এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না‌ নেয়া ও সৌজন্য সাক্ষাত না করায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ‌

সম্প্রতি তৈয়বুন্নেসা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতৃবৃন্দ নিপার রেজার নির্দেশ অমান্য করে আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন মিঠুর সঙ্গে দেখা করে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই ঘটনায় নিপার রেজা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।
এ নিয়ে জুড়ী উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের একাংশে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, শরিফুল ইসলাম সাজু তার ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করছেন যে, “প্রাথমিকভাবে মিঠু মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়নে তিনি টিকবেন না।” এই ধারণা থেকেই নিপার রেজা এখনো মিঠুর পক্ষে অবস্থান না নিয়ে সাজুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। এতে স্থানীয় বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, নিপার রেজা সচেতনভাবে দলে বিভাজন সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছে।

জুড়ী উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, “দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার পক্ষে কাজ করা প্রত্যেক কর্মীর নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থে নিপার রেজা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, সংগঠনের জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে আনছেন। তাদের মতে, আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে এই আসনে বিএনপির জয় হবে। কিন্তু নিপার রেজার বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড জুড়ী উপজেলা তথা এই আসনে নির্বাচনের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।  

স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, নিপার রেজা বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ না করে সাজুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সংগঠনের ভিতরে বিভাজন তৈরি করছেন। তাঁর এমন কর্মকাণ্ড দলের জন্য বিব্রতকর। 

স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, নিপার রেজার এমন পদক্ষেপে দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নষ্ট হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে সাজুর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, যা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এতে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রয়োজনে বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জানিয়  সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হবে।
এবিষয়ে যুবদল নেতা নিপার রেজার মুঠোফোনে ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়ায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি