সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন: দুদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ আগস্ট, ২০২২, 11:16 PM
সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন: দুদক
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে সম্রাটকে।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করার জন্য সোমবার সকালে আদালতের অনুমতি পায় দুদক। এরপর দুপুরে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়।
এ মামলায় জজ আদালতের দেওয়া জামিন গত মে মাসে বাতিল করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতে নির্দেশে সম্রাট জজ আত্মসমর্পণ করে ফের জামিনের আবেদন করলে গত ২২ অগাস্ট ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আসিফুজ্জামন ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
কারা তত্ত্বাবধায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জামিন হলেও আরও কয়েক দিন সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ২৫ অগাস্ট তিনি বাসায় ফেরেন। পরদিনই হাজারখানেক নেতকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডির- ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন “রাজনীতি নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই, আমি সব সময় শেখ হাসিনার কর্মী ছিলাম, কর্মী হিসেবেই কাজ করে যাব।"
সম্রাটের বিরুদ্ধে চারটি মামলার মধ্যে তিনটিতে আগেই তার জামিন হয়েছিল। সর্বশেষ ১০ অগাস্ট অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তির পথ খোলে। সেই মামলার জামিন বাতিলের আবেদন করলো দুদক।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।
আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব।
সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল সম্রাটকে জামিন দেয় আদালত।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ মামলায় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য্য রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ আগস্ট, ২০২২, 11:16 PM
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে সম্রাটকে।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করার জন্য সোমবার সকালে আদালতের অনুমতি পায় দুদক। এরপর দুপুরে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়।
এ মামলায় জজ আদালতের দেওয়া জামিন গত মে মাসে বাতিল করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতে নির্দেশে সম্রাট জজ আত্মসমর্পণ করে ফের জামিনের আবেদন করলে গত ২২ অগাস্ট ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আসিফুজ্জামন ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
কারা তত্ত্বাবধায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জামিন হলেও আরও কয়েক দিন সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ২৫ অগাস্ট তিনি বাসায় ফেরেন। পরদিনই হাজারখানেক নেতকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডির- ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন “রাজনীতি নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই, আমি সব সময় শেখ হাসিনার কর্মী ছিলাম, কর্মী হিসেবেই কাজ করে যাব।"
সম্রাটের বিরুদ্ধে চারটি মামলার মধ্যে তিনটিতে আগেই তার জামিন হয়েছিল। সর্বশেষ ১০ অগাস্ট অবৈধ সম্পদের মামলায় জামিন পেলে তার মুক্তির পথ খোলে। সেই মামলার জামিন বাতিলের আবেদন করলো দুদক।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।
এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়।
রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক।
আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব।
সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল সম্রাটকে জামিন দেয় আদালত।
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এ মামলায় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য্য রয়েছে।